শিরোনাম
◈ ট্রাক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে যানজট, ভোগান্তিতে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীরা ◈ খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ‘ধর্ষণের আলামত মেলেনি’: চিকিৎসক ◈ সংকটে থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ: গ্রাহকের টাকা কতটা নিরাপদ? ◈ প্রস্তাবিত নতুন ২ বিভাগে যেসব জেলা থাকছে ◈ ইউনুস স্যার যদি ওইখানে বসে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তাহলে স্যারেরও পতন আসন্ন: নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী (ভিডিও) ◈ প্রধান উপদেষ্টার সাত দফা প্রস্তাব: রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন ◈ বাম দলগুলোর নির্বাচনী জোট গঠন জোরদার হচ্ছে ◈ অবশেষে খোঁজ মিলেছে ডিবি হারুনের! টেক্সাসের উডল্যান্ডে কী করছেন ডিবি হারুন? (ভিডিও) ◈ বিদেশি কর্মীদের ‘নিরাপত্তা ছাড়পত্র’ প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল ◈ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা সবসময় সঠিক পদক্ষেপ নয়: ফরাসউদ্দিন

প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:২১ সকাল
আপডেট : ০১ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মৃত্যুশয্যায় হাতকড়া: নূরুল মজিদকে ঘিরে সমালোচনায় মানবাধিকারকর্মীরা

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুকে দেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি (নূরুল মজিদ) হাতকড়া পরা অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। তাঁর চোখ বন্ধ।

কেউ কেউ বলছেন, মুমূর্ষু অবস্থায়ও নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, মৃত্যুর পরও তাঁর হাতে হাতকড়া পরানো ছিল।

ঘটনাটিকে অমানবিক বলেও উল্লেখ করেছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির এক নেতাকে মায়ের জানাজায়ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল। সে রকম প্রতিহিংসার রাজনীতি এখনো রয়ে গেছে। কেউ কেউ হাতকড়া পরিয়ে রাখার পক্ষেও বলছেন।

ছবিটি কবেকার, জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ছয় দফা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ছবিটি এই দিনগুলোর মধ্যে কোনো একটি সময়ে হতে পারে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দীকে চিকিৎসার সময় হাতকড়া পরিয়ে তা বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। অথবা হাতকড়া কোনো কারারক্ষীকে ধরে রাখতে হয়। হাতকড়া খুলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অবশ্য পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বা তদন্তস্থলে পাঠানোর জন্য পুলিশ বন্দীকে পালানো রোধে যা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি কড়াকড়ি উচিত নয়। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর। এতে আরও বলা হয়েছে, বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা উচিত হবে না।

নূরুল মজিদকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাঁর নামে ঢাকায় চারটি হত্যা মামলা এবং নরসিংদীতে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার সকালে তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক (সিনিয়র জেল সুপার) সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, নূরুল মজিদের হাতে হাতকড়া পরা যে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি মৃত্যুর আগের।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষ কোনো অবহেলা করেনি দাবি করে সুরাইয়া আক্তার বলেন, প্রায় এক মাস আগে নূরুল মজিদ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে তাঁকে আবার কারা হাসপাতলে নিয়ে আসা হয়। তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলেন। যে কারণে তাঁকে নতুন করে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পাঠানো হয়েছিল। তবে আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেয়।

কারা কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ ছিল। সর্বশেষ তিনি ডায়ারিয়া ও সে–সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ডায়রিয়া ও ডায়রিয়া জটিলতার জরুরি চিকিৎসার জন্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। মেডিসিন বিভাগের প্রধান তাঁর চিকিৎসা করেছেন। কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে তাঁকে কেবিন দিয়েছে। পরে তাঁকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) নেওয়া হয়। তিনি বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়।

যা বলছেন নূরুল মজিদের আইনজীবী

নূরুল মজিদ নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নূরুল মজিদকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

নূরুল মজিদের মরদেহ মঙ্গলবার নরসিংদীতে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সোমবার এশার নামাজের পর রাজধানীর গুলশান এলাকার আজাদ মসজিদে এবং মঙ্গলবার মনোহরদী উপজেলার শুকুর মাহমুদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা হয়।

নূরুল মজিদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ যুবলীগের রাজনীতি করেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবি, তিনি বিদেশ চলে গেছেন।

নূরুল মজিদের আইনজীবী দিলরুবা কলি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নূরুল মজিদ হুমায়ূন একজন বয়স্ক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তাঁর শারীরিক তেমন কোনো জটিলতা ছিল না।’

‘মাস পাঁচেক আগেও তাঁকে নরসিংদীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি নিজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি সুস্থ আছি। তোমরা আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না’, বলেন দিলরুবা।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ডেঙ্গু হয়েছিল উল্লেখ করে দিলরুবা বলেন, তাঁর সুচিকিৎসা হয়নি।

আওয়ামী লীগ আমলে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হাতকড়া পরিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমকে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। তিনি নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। সে সময় অনুরোধের পরও তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি তৎকালীন পুলিশ।

তখন আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ (আসক) বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আসামির সঙ্গে নিষ্ঠুর বা অমানবিক আচরণ করা যায় না। সেখানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ হুমায়ূনের সঙ্গে যেটা ঘটেছে, তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটি মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। একজন আসামি, যিনি মৃত্যুশয্যায়, তাঁর হাতেও হাতকড়া পরিয়ে রাখতে হবে?’

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এই আশা মানুষ করেছিল উল্লেখ করে নূর খান বলেন, ‘কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশা চরম হতাশায় পরিণত হয়েছে।’

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়