শিরোনাম
◈ সোহেল তাজকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন তার বোন ◈ তৃতীয় দফায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ◈ গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিলেন ট্রাম্প: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারত নাকা‌নিচুবা‌নি খে‌য়ে সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে জয় পে‌লো ◈ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা  ◈ জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার পুরো ভাষণ ◈ বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না : জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা  ◈ ইইউ’র কঠোর অভিবাসন নীতি: বাংলাদেশিদের ফেরত আসার প্রবণতা বাড়ছে ◈ জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বেশিরভাগ দেশের ‘ওয়াক আউট’ ◈ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির দাবি ‘ভিত্তিহীন’: প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জোট গঠনের চেষ্টায় এনসিপি

মহসিন কবির: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ায় চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন । 

বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ঘিরে কৌতূহল ও আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের গুঞ্জন থাকলেও সেই পথে যে হাঁটছে না, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছে এনসিপি। বরং বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জোট গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি, যেখানে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকতে চায় এনসিপি। তরুণদের নেতৃত্বে এ ধরনের একটি তৃতীয় শক্তি বা জোট গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।

দেশের রাজনীতির মাঠের অন্যতম দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আলাদা রাজনৈতিক বলয় হিসেবে দেখছে এনসিপি। এ দুই দলের সঙ্গে জোটে গেলে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন এনসিপির নেতারা। তাই বিএনপি এবং জামায়াতের বাইরে থাকা দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করেছেন তারা। এরই মধ্যে গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মোর্চার সঙ্গে একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে, যেখানে ইতিবাচক বার্তাও পেয়েছে এনসিপি।

নতুন এই জোটের আলোচনায় থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী পরিষদ এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন। নতুন উদ্যোগ বা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে। এ বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল—গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির নেতারা অংশ নেন।

জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে থাকা সব দলকে নিয়ে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে এনসিপি। যার অংশ হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূতকরণের আলোচনাও চলছে। যদিও সেটি এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। যে মোর্চায় যুক্ত হতে পারে আপ বাংলাদেশসহ তরুণদের কয়েকটি রাজনৈতিক শক্তিও।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা মধ্যপন্থি, গণতান্ত্রিক ও বাংলাদেশপন্থি শক্তিগুলোকে নিয়ে আলাদা বলয় গড়ে তুলতে চাই। আর সেই বলয়ের ভরকেন্দ্র হবে এনসিপি।’ তিনি জানান, এ নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।

এনসিপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের বলয়ের বাইরে বৃহত্তর মোর্চা গড়ে উঠবে কি না, তা নির্বাচনের আগে স্পষ্ট হবে। তবে বিএনপি-জামায়াতের বাইরে এনসিপি নিজেদের একটি স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এটি নিশ্চিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, তরুণদের নেতৃত্বে দেশের রাজনীতিতে নতুন বলয় গড়ে উঠতে পারে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী তরুণদের যে জাগরণ চলছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সম্প্রতি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও তার প্রমাণ মিলেছে। আগামীর রাজনীতি ও নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা যাদের প্রথম সারির রাজনৈতিক দল মনে করি তারা হলো বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু আগামীর রাজনীতিতে তাদের বাইরে গিয়ে তরুণদের নেতৃত্বে একটি শক্তি সামনে আসতে পারে। সারা বিশ্বেই তরুণদের জয়জয়কার চলছে। বাংলাদেশেও তাদের নেতৃত্বে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমনকি তারা যদি প্রথম সারিতেও চলে আসে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমি তাদের ভালো সম্ভাবনা দেখছি।’

এনসিপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একীভূতকরণ বা রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন-সংগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা। শুধু নির্বাচন নয়, কয়েকটি মৌলিক বিষয় সামনে রেখে এগোতে চায় দলটি। নতুন সংবিধান, গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদসহ মৌলিক সংস্কারের দাবিতে জোটবদ্ধ হয়ে রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করছেন এনসিপি নেতারা। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতেও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজপথে থেকে এসব দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, ‘বিএনপি এবং জামায়াতের বাইরে বাংলাদেশপন্থি অন্য দলগুলোকে নিয়ে স্বতন্ত্র জোট হতে পারে। আমরা বিএনপি এবং জামায়াতের বলয়ে থাকছি না, এটি চূড়ান্ত। এই মুহূর্তে আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণপরিষদ নির্বাচন, গণহত্যার বিচার, সংস্কার—এসব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আছি। সমমনা যেসব দল আমাদের সঙ্গে এসব দাবিতে মাঠে থাকতে চায়, আমরা তাদের ওয়েলকাম (স্বাগত) জানিয়েছি।’

সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের পথচলায় যাদের সঙ্গে আদর্শিক মিল রয়েছে তাদের সঙ্গে মোর্চায় কোনো বাধা দেখছেন না দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, বরং সংস্কার ও বিচারের জন্য পথচলা থেকে যাদের সঙ্গে মিলবে, এনসিপি তাদের নিয়েই পথ চলবে। সেক্ষেত্রে এনসিপির নেতৃত্বে একটা জোট হতে পারে।’

জোট গঠনে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং আপ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে এসব আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বার্থে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হতেও পারে এবং এটি পরিস্থিতির আলোকে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে হতে পারে।’

দেশে মধ্যপন্থার রাজনীতির সংকট ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘একদিকে বিএনপি, অন্যদিকে জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলোর উত্থানের কথা অনেকে বলছেন। বাংলাদেশের অনেকের চিন্তা হলো আওয়ামী লীগের এই শূন্যতা যাতে নতুন একটা শক্তির দ্বারা পূরণ হয়। রাজনৈতিক শূন্যতা আসলে কোনোভাবেই ভালো ফল বয়ে আনবে না। সে জায়গা থেকে আমরা নতুন শক্তি হওয়ার চেষ্টা করছি। এনসিপি-গণঅধিকারের একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। পরে অন্য শক্তিগুলোও যুক্ত হতে পারে।’

এনসিপির সঙ্গে একীভূত প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করা, মোদিবিরোধী আন্দোলনসহ আদর্শিক মিল থাকায় সবাই চায় আমরা একসঙ্গে পথ চলি। আমরাও এ বিষয়ে আন্তরিক। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। একসঙ্গে হওয়ার আন্তরিকতা, উদারতার ওপর নির্ভর করছে এটির চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছানো। দলের নাম কিংবা নেতৃত্বের বিষয়ে এখনো আলোচনা চলমান।’

নির্বাচনের আগে এনসিপির নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ব্লক (মোর্চা) গঠনের কথা জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি আরও জানান, সেই ব্লকেরও নাম থাকবে এনসিপি। তার দল আদর্শের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র ব্লক গঠন করবে। যাতে গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা বিএনপি-জামায়াতের জোটে যাচ্ছি না। অনেকে এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আগামী সংসদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি থাকবে না। গণঅধিকার পরিষদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। কী প্রক্রিয়ায় হবে, সেটি ঠিক হয়নি। আমরা বলেছিলাম ৩০০ আসনে জয়ের জন্য আমরা চেষ্টা চালাব। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা বলেছিলাম যে আমাদের ১৫০টি আসনে জয়ী হওয়ার সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) আছে। কিন্তু আমরা ৩০০ আসনে জয়ের জন্যই লড়ব।’

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো দলকেই এই মুহূর্তে দেশের নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দলের সমন্বয় সভা শেষে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্য সব দল থেকে আমরা আলাদা। কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারছি না বলেই আমরা একটা নতুন রাজনৈতিক দল।

আমরা বিএনপি পছন্দ করি না, জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করি না, অন্য দলগুলোকেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মনে করছি না। এ কারণেই আমরা সবাই মিলে নতুন একটা দল করেছি। ফলে আমরা আমাদের নিজেদের দল করব, নিজেদের পায়ে দাঁড়াব—এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা কারও সঙ্গে যাব কি না, সেটা আমাদের সেকেন্ডারি (দ্বিতীয় বিকল্প) বিষয়। আমরা আমাদের পথচলায় এগিয়ে যাব। কেউ যদি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তাদের স্বাগত জানানো হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়