শিরোনাম
◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস ◈ শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক! ◈ যুক্তরাষ্ট্র ফেরত টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগ নেতা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ◈ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সম্মেলন ঘিরে বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ফলাফল স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

প্রকাশিত : ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৫০ রাত
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক!

মহসিন কবির: ‘শাপলা’ প্রতীকের দাবিতে করে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে এনসিপি ও নাগরিক ঐক্য। এদিকে নতুন প্রস্তাবিত প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত শাপলা কি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে? আর যদি না পারে, তবে জাতীয় প্রতীকের অন্যতম অনুষঙ্গ এবং অলংকরণ ধানের শীষ কীভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতীক থাকে?

এনসিপি ঘোষণা করেছে, শাপলা প্রতীক না পেলে তারা রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামবে। অন্যদিকে নাগরিক ঐক্য দাবি করেছে, ‘শাপলা’ তাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো এনসিপির রাজনৈতিক লড়াইয়ে ইসির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে কিনা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে গত ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে এনসিপি। আবেদনে প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম কিংবা মোবাইল চেয়েছে দলটি। তবে ‘শাপলা’ প্রতীককেই বেশি জোর দেয় এনসিপি। 

নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দাবি শাপলা প্রতীক। তবে আমরা কলম ও মোবাইলও প্রতীক হিসেবে আবেদনে উল্লেখ করেছি। আমরা প্রত্যাশা করব আমাদের যাতে শাপলাই দেওয়া হয়। আমরা পাঁচ লাখ মানুষের ডাটা এনেছি। অধিকাংশ মানুষ এনসিপিকে চায় শাপলা প্রতীকে।

এদিকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে নাগরিক ঐক্যের জন্য সংরক্ষণের দাবি নিয়ে গত ২ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ১৭ জুন আমাদের নাগরিক ঐক্যের দলীয় প্রতীক কেটলি পরিবর্তন করে পছন্দের ক্রমানুসারে শাপলা ও দোয়েল দিয়েছিলাম। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কে নিবন্ধন পাবে, কে নিবন্ধন পাবে না-সেটা নির্ধারিত হয়নি। যদি নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয়, সেখানে আমরা যেহেতু আগে আবেদন করেছি, আমাদের সে ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা অবশ্যই বঞ্চিত হব না, সেটা আমরা যেমন প্রত্যাশা করি, তেমনি কমিশনও নিশ্চিত করেছে। আমাদের কনসার্নের জায়গা হচ্ছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনভাবে তথ্য দেখেছি, যে কমিশন তাদের শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। কনসার্নটা আমরা সিইসিকে জানাতে এসেছি। নিবন্ধনের কাজ শেষ না করে এ ধরনের বিষয় আসাটা যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, সিইসি ও সচিবকে আমরা জানিয়েছি, নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয় কিংবা দোয়েল যুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে ১৭ জুন যেহেতু আমরা আবেদন করেছি এবং পরবর্তী সময়ে একই মার্কা নিয়ে আরেকটা আবেদন হলেও শাপলা নাগরিক ঐক্যেরই প্রাপ্য। সেটার যেন ব্যত্যয় না ঘটে।

অন্যদিকে রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতীক হিসেবে ফের ‘শাপলা’ই চেয়েছে এনসিপি। বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে আমাদের শাপলা ছাড়া বিকল্প অপশন নেই। লিগ্যাল ওয়েতে আমরা দেখেছি, আইনগতভাবে শাপলা পেতে আমাদের কোনো বাধা নেই। যদি বাধা দেওয়া হয়, সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব। 

সিইসির সঙ্গে বৈঠকের সারাংশ তুলে ধরে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে তারা প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে নতুন একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। জাতীয় প্রতীক শাপলা হলে এনসিপি একই প্রতীক দাবি করতে পারে কি না-এমন প্রশ্নে জহিরুল ইসলাম বলেন, শুধু শাপলা জাতীয় প্রতীক নয় বরং এটি জাতীয় প্রতীকের একটি অংশ। জাতীয় প্রতীকে শাপলা ছাড়াও পাট পাতা, ধানের শীষ ও তারকা চিহ্ন আছে। এই প্রতীকগুলো অন্য রাজনৈতিক দল ব্যবহার করছে। আর জাতীয় প্রতীকে নির্দিষ্ট রং ও মাপের বিষয় আছে। 

সে ক্ষেত্রে তারা কমিশনের নজরে এনেছেন, প্রতীক হিসেবে শাপলা পেতে তাদের আইনি কোনো বাধা নেই। অন্য একটি দলও শাপলা প্রতীক চেয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ওই রাজনৈতিক দল যখন নিবন্ধন পায় তখন ইসি থেকে তাদের কেটলি মার্কা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তারা যদি নতুন করে আবার প্রতীকটি চেঞ্জ করতে চায় সে ক্ষেত্রে তাদের কিছু ফর্মালিটিজ আছে। তাদের অনেক বার্ডেন আছে, যেটি নতুন দল হিসেবে আমাদের নেই। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নীতিগতভাবে শাপলাকে বাদ দেওয়ার পর আমরাই প্রথম আবেদন করেছি। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রতীকটি বরাদ্দ পাওয়ার অধিকার আছে।

নির্বাচন কমিশনের বর্তমান তফসিলে ৬৯টি প্রতীক রয়েছে। নতুন আরও ৪৬টি প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ইসির নির্বাচনি প্রতীকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১৫টি। তবে এ তালিকায় ‘শাপলা’ রাখা হয়নি। নতুন তালিকাটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিলে প্রতীক যুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক চূড়ান্ত করে। কিন্তু কমিশন কাটছাঁট করে ১১৫টি প্রতীক তফসিলে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত দেয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১৫টি প্রতীক আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এখান থেকে প্রতীক বাতিল বা নতুন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ জানাতে পারে। 

এ ছাড়া নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন পেতে ইতিমধ্যে ১৪৭টি নতুন দল আবেদন করেছে। তাই ভবিষ্যতে দলের সংখ্যা বাড়লে যাতে প্রতীক কম না পড়ে তাই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করতে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, এতে ‘শাপলা’ প্রতীক রাখা হয়নি। 

ইসি কর্মকর্তারা জানায়, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে মোট ৫১টি। ১১৫টি প্রতীকের মধ্যে ৫১টি থাকবে নিবন্ধিত দলগুলোর জন্য। আর অন্য প্রতীকগুলো থাকবে ভবিষ্যতে নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য।

শাপলা প্রতীক নিয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ সাংবাদিকদের বলেন, নতুন প্রস্তাবিত প্রতীক তালিকায় শাপলা রাখা হচ্ছে না। আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংবিধানে জাতীয় প্রতীক ও জাতীয় পতাকার কথা বলা হয়েছে। এ দুটোর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আইন করা হয়েছে, একটা বিধিমালা করা হয়েছে। কোনো ব্যাপারে জাতীয় ফুল, জাতীয় পাখির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নেই। প্রস্তাবিত নতুন প্রতীক তালিকার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি শাপলা প্রতীক তফসিলে থাকবে না। জাতীয় প্রতীকের কারণেই মূলত এ সিদ্ধান্ত।

এনসিপির শাপলা প্রতীক চাওয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, বিষয়টা আমরা খুব সিরিয়াসলি বিবেচনা করেছি আমাদের কমিশনে। শাপলা নিয়ে আমরা অনেক ইনভেস্টিগেট করেছি, বিষয়টা এক্সামিন করেছি। কিছু আইনি বিষয় আছে এখানে। ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে একটি আইনই আছে। আরেকটি বিষয় আছে এখানে। এনসিপি চেয়েছে, এর আগে নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। নাগরিক ঐক্য চেয়েছিল আট-দশ দিন আগে। নাগরিক ঐক্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের মেইন ফোকাস হলো শাপলা। 

তারা বলেছে আমরা শাপলা চেয়েছি, আপনারা দেন নাই। আমরা ওদের আবেদন পেন্ডিং রেখেছি। তারা বলল যে দেখেন আমরা কিন্তু অনেক আগেই অ্যাপ্লাই করেছি, এনসিপি করেছে পরে। আমরা একটা রেজিস্টার্ড দল। এনসিপি রেজিস্ট্রেশনই পায়নি। আমাদের আইন অনুযায়ী যারা আগে ক্লেম করবে তাদের দিতে হয়। সুতরাং সুযোগটা সীমিত। যদি দিতে হয় তাহলে নাগরিক ঐক্যকে দিতে হবে। এ জন্য কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শাপলাকে আমরা প্রতীক হিসেবে রাখব না। শাপলা প্রতীক কেউ পাচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেন, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র জীবনধারা ফুটে উঠে এই তিন দলের প্রতীকে- মাছ ধরতে ‘নৌকা’ লাগে, ধানের মূল আকর্ষণ ‘ধানের শীষ’, আর চাষাবাদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘লাঙ্গল’। এমন পরিস্থিতিতে শাপলার আবেদন- একটি ফুল, যা পানিতে ভাসে এবং জাতীয় প্রতীকের মূল চিহ্ন- অনেক বেশি স্পর্শকাতর একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিতর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- প্রতীকের চেয়ে বড় হলো গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও সুশাসন। জাতীয় প্রতীক হিসেবে যেসব প্রতীকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক মর্যাদা রয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বা দলীয়ভাবে জবরদখলের মানসিকতা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিভ্রান্ত করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়