স্পোর্টস ডেস্ক : লড়েছিলেন তিনি। ভয়ঙ্কর রকম লড়েছিলেন। যদি জেতাতে পারতেন হয়ত ভারতরত্নটা তার জন্যই রাখা থাকত। কিন্তু পারলেন না জাদেজা। নিজে অপরাজিত থাকলেন ৬১ রানে। কিন্তু শোয়েব বশিরের বলটা সিরাজ খেলার পরেও দিল উইকেট ভেঙে। আটকাতেই পারতেন পা দিয়ে। মুহূর্তের ভুল। আর তাতেই সবশেষে। ১৯৩ রান তাড়া করতে নেমে ভারত শেষ হয়ে গেল ১৭০ রানে। লর্ডস টেস্ট ইংল্যান্ড জিতে নিল ২২ রানে। সিরিজে এগিয়ে গেল ২–১ ব্যবধানে।
ওয়াশিংটন সুন্দর বলেছিলেন লাঞ্চের পরই লর্ডস টেস্ট জিতে নেবে ভারত। ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ মার্কাস ট্রেসকোথিক বলেছিলেন, পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতকে অল আউট করে দেবে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড জিতল। তবে খেলা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে ভারতকে শেষ করতে পারলেন না আর্চাররা। চা পানের বিরতির পর শেষ হল ভারতের যাবতীয় প্রতিরোধ। শেষ পর্যন্ত লর্ডস টেস্ট জিতে নিল ইংল্যান্ড। সিরিজে স্টোকসরা এগিয়ে গেল ২–১–এ।
২০২১ সালে ভারত শেষ বার লর্ডসে জিতেছিল। এবারও গতিপ্রকৃতি যে দিকে মোড় নিয়েছিল, তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ভারতই শেষ হাসি হাসবে। কিন্তু যা ভাবা হয়, তা সব সময়ে হয় না। চার বছর আগের লর্ডস টেস্টে লোকেশ রাহুল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
চার বছর পরে লর্ডস টেস্টের নায়ক হতে পারতেন তিনি। প্রথম ইনিংসে তিনি সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকেই ত্রাতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন কি আর কেউ জানতেন বেন স্টোকসের বাঁক খাওয়া বলটা মৃত্য পরোয়ানা নিয়ে হাজির হবে ভারতের ওপেনারের সামনে? চতুর্থ দিনের শেষে রাহুল ব্যাট করছিলেন ৩৩ রানে।
পঞ্চম দিন রাহুল বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। বেন স্টোকসের ব্যুমেরাং মোক্ষম সময়ে রাহুলের পায়ে লাগল। ৩৯ রানে ফিরে গেলেন ভারতের ওপেনার।
সবাই বলছিলেন, ক্লাসিক্যাল ওপেনার বলতে যা বোঝায়, লোকেশ রাহুল তাই। তিনি বল ছাড়েন, শরীর লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা বল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেন। সেই লোকেশ রাহুল থেমে গেলেন। স্টোকস দুর্দান্ত বলটা বেছে বেছে লোকেশ রাহুলকে কেন যে করতে গেলেন! চতুর্থ দিনের শেষে দ্রুত চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। স্কোরবোর্ডে ভারতের রান ছিল ৫৮।
জেতার জন্য পঞ্চম দিন ভারতের সমীকরণ ছিল অপেক্ষাকৃত সহজ। ১৩৫ রান করতে হবে। হাতে ৬ উইকেট। খুব একটা কি কঠিন ছিল বিষয়টা?
পঞ্চম দিনের শুরুতে ব্যাট করতে নামেন রাহুল ও ঋষভ পন্থ। প্রথম ইনিংসে রাহুল ও পন্থ গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। এদিন পন্থ তাঁর সহজাত ভঙ্গিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জোফ্রা আর্চারের আগুনে বোলিং ছিটকে দেয় পন্থের অফ স্ট্যাম্প।
স্কোরবোর্ডে ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ৭১। দশ রান যোগ করার সঙ্গে সঙ্গেই রাহুলের পতন। জোফ্রা আর্চার ভারতকে আরও ধাক্কা দেন। ওয়াশিংটন সুন্দর আর্চারের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে হাঁটা লাগান। ভারত হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৮২। চার উইকেট নিয়ে ভারতকে ভেঙেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তাঁর ব্যাটের হাতও ভাল। কিন্তু এদিন তিনি ব্যর্থ। খাতা না খুলেই ফিরতে হল ওয়াশিংটন সুন্দরকে।
ভারতের জয়–পরাজয়ের মাঝে বহুক্ষণ দাঁড়়িয়ে ছিলেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া রবীন্দ্র জাদেজা ও নীতীশ রেড্ডি। বুকের উপরে চেপে বসা পাহাড়টা ধীরে ধীরে সরানোর কাজ শুরু করেন জাদেজা ও নীতীশ রেড্ডি। ভারতের দুই ব্যাটসম্যানের দিকে উড়ে আসে বিষাক্ত বাউন্সার। মরিয়া হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। কার্সের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন জাদেজা।
পরিস্থিতি সামাল দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। কিন্তু লাঞ্চের ঠিক আগে ক্রিস ওকসের বলটা ছাড়বেন না খেলবেন ভাবতে ভাবতেই তাঁর ব্যাটে চুমু খেয়ে তা চলে গেল উইকেট কিপার স্মিথের হাতে। ৮ উইকেটে ১১২ রান, জাদেজার সঙ্গে যোগ দেন বুমরাহ।
বুমরাহকে দেখে কে বলবে তিনি ভাল ব্যাটার নন। জাদেজার সঙ্গে মরিয়া হয়ে লড়লেন। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারলেন না। ট্রাজিক হিরো হয়েই রয়ে গেলেন জাদেজা।