মনিরুল ইসলাম: সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় ঘটে যাওয়া লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “পরিকল্পিত অপপ্রচার ও অশ্লীল স্লোগানের মাধ্যমে আবারও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।”
সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের দায় অযৌক্তিকভাবে চাপানো হচ্ছে: বিএনপি
মির্জা ফখরুল বলেন, “একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি এবং এর শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য চরিত্র হননের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
তিনি দাবি করেন, বিএনপি এই ঘটনায় দলীয়ভাবে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। নিহতের পরিবারও এজহারে অসংগতি থাকার কথা বলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"অপরাধী যেই হোক, গ্রেপ্তার ও বিচার চাই"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বারবার বলেছি— এই হত্যাকাণ্ডে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “খোলা জায়গায়, জনসম্মুখে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির কাছাকাছি এই হত্যাকাণ্ড ঘটল— অথচ তা প্রতিরোধ করা গেল না কেন? এটি জনমনে গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।”
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে?
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে একটি মহল আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর পেছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই আমাদের সন্দেহ।”
তিনি আরও বলেন, “কুমিল্লার মুরাদনগর, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ডে যেভাবে সবাই নীরব থেকেছে, এখন সেই একই সমাজ আজ দ্বৈত মানসিকতা দেখাচ্ছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘প্রি-প্ল্যানড’ অপপ্রচার
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ৯ জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘প্রাইম টাইমে’ পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পূর্বপ্রস্তুত ফটোকার্ড, ভিডিও ক্লিপ এবং স্ট্যাটাস থেকে পরিষ্কার— এটি একটি সুসংগঠিত অপপ্রচার ক্যাম্পেইন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে একজন সাবেক বিচারপতি, আইনজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি গঠন করা হবে।
“বিচারের দাবি ও সহানুভূতি একসঙ্গেই সম্ভব”
মির্জা ফখরুল বলেন, “নিহত সোহাগের রাজনৈতিক পরিচয় নয়, নাগরিক হিসেবে তার ন্যায়বিচার পাওয়াটাই মুখ্য। আমরা তার পরিবারের পাশে আছি। অপরাধী যেই হোক, আইনের মুখোমুখি হতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ বাতিল করার নজির বিএনপি রেখেছে, যা অন্য দলগুলো খুব কমই করে।”
তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় ও স্পষ্ট।”