চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামতেও প্রস্তুত বিএনপি। বিএনপির একাধিক নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ের জন্য তারা সম্ভব সবকিছুই করবেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই এতটা প্রত্যয়ী তারা৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট কিছু না বললে বিএনপির সামনে এ মুহূর্তে আন্দোলন ছাড়া উপায়ও নেই। তারা মনে করছেন, নির্বাচন ইস্যুতে আগামীতে রাজনৈতিক অনৈক্য আরো বাড়বে। এ কারণে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
‘ইন্টেরিম রিমেম্বার, ইলেকশন ইন ডিসেম্বর'- ইতিমধ্যে এই স্লোগান দিতে শুরু করেছে বিএনপি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টার আকারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এই বার্তা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুধবার ঢাকায় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে' ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেছেন," আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আবারো আমরা বলতে চাই- আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরুর অভিযোগ করে তিনি বলেন, "কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। কেউ ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তারা যেন পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেয়।” এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে জাপান সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, "একটিমাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন,"বিএনপির মধ্যে প্রফেসর ইউনূসের ব্যাপারে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তিনি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সম্ভব সব ধরনের চাপ তৈরি করবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ও দায়িত্ব পালনে অগ্রগতি
অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মৌলিক দায়িত্বের ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ দৃশ্যত একমত, সেগুলো হলো: সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। কিন্তু প্রধান এই তিন কাজের কোনোটিতেই ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে, ১৬৬ টি সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হলেও সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ব্যাপক দ্বিমত আছে। কমিশন থেকে সরকারের কাছে এখনই বাস্তবায়নযোগ্য বেশ কিছু সংস্কার-প্রস্তাব চূড়ান্ত করে পাঠানো হলেও গত এক মাসে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে মাতানৈক্য সবচেয়ে বেশি। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা না করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা, প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না, প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা হতে পারববেন না, সংখ্যানুপাতিক উচ্চ কক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, সংবিধান সংশোধনে গণভোট, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন- এমন অনেক মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন," আসলে যদি সংখ্যা হিসাব করা হয়, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। যেমন, দুদকের ব্যাপারে প্রায় শতভাগ ঐকমত্য হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে সংবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে। সংবিধান এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত কতগুলো মৌলিক বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। আর যে সংস্কারগুলো এখনই সম্ভব, তার একটা প্রস্তাব আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠিয়েছি। আমরা এর অগ্রতি সম্পর্কে জানতে চাইবো।”
তিনি জানান, জুনে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু হবে। এরপর কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বা হয়নি তা প্রকাশ করা হবে। তার কথা, " কিছু সংস্কার আছে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আবার কিছু আছে অধ্যাদেশ জারি করে করা যাবে। এরজন্য কী করা হবে, নির্বাচনের সম্পর্ক কী তা নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে।”
‘নির্বাচন যাতে না হয় সেই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে?'
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আসলে সংস্কারের নামে প্রফেসর ইউনূস দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চান। একটি বয়ানও তৈরি করা হচ্ছে যে, এই সরকার ৫ বছর প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বট বাহিনী তৈরি করে এর পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে।”
তার কথা, "সংস্কার , বিচার ও নির্বাচন কোনো বিষয়েই গত ১০ মাসে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আইন-শৃঙ্খলার কোনো উন্নতি নেই। এনসিপির নাহিদ ইসলাম যে বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা নির্বাচনের উপযোগী নয়। তাহলে কি নির্বাচন যাতে না হয় সেই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে? এই সরকার একটি দলের হয়ে কাজ করছে। তার সঙ্গে আরো কিছু দলকে তাদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।”
৫ আগস্টের পর দেড় হাজারের বেশি মামলা হলেও ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত একটি মাত্র মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়েছে। নারীদের ওপর হামলা, নারীর অবমাননা বন্ধ হচ্ছে না। মব ভায়োলেন্স অব্যাহত আছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "আসলে গত ১০ মাসে এই সরকার কোনো ক্ষেত্রেই কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। ইউনূস সরকার কী করতে চায় তা এখনো পরিস্কার করেনি। অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কার বলে তিনি কী বোঝাতে চান তা-ও পরিস্কার করেননি। তিনি আসলে একটা অস্বচ্ছতা তৈরি করছেন। তিনি সংস্কারের নামে যদি করিডর দিতে চান তাহলে আমাদের প্রশ্ন তিনি কি এইসব কথা বলে অন্য কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করছেন?''
এনসিপি যা মনে করে: এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, " আসলে সবাই সহযোগিতা করলে এই সরকার সফল হবে। প্রফেসর ইউনূস ইতিহাসের সবচেয়ে একটি ভালো নির্বাচন করতে চান। সেইজন্য সব কিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময় নিচ্ছে।”
তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, " সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা আলোচনা করেছে। এরপর দ্বিতীয় দফা হবে। এখানে কিছুটা দৃশ্যমান অগ্রগতি আছে। তবে বিচার নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আর আইন-শৃঙ্খলার কেনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। পুলিশ প্রশাসনে নানা সংকট আছে।”
১০ মাসে সরকারের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন," একটি গোষ্ঠী সংস্কারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা সক্রিয় আছে। ফ্যাসিবাদের চক্রও এখনো আছে।”
‘কমপক্ষে ৫৫টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়'
জাপানে সফরে গিয়ে প্রফেসর ইউনূস বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘‘একটিমাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়।'' এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার প্রধান উপদেষ্টার কথা সমর্থন করে বলেন, " তিনি ঠিকই বলেছেন। আমরা প্রধান উপদেষ্টা যে সময়ের কথা বলছেন তার ওপর আস্থাশীল। জামায়াত দ্রুত নির্বাচনের কথা বললেও তারা ডিসেম্বরের কথা বলেনি। আর অন্যান্য দলের মতামতও কাছাকাছি। ফলে বিএনপিই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। তাদের কথায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে- এটা তো ঠিক না।”
"তারেক রহমান সাহেব যেভাবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে বলছেন, সেভাবে তিনি বলতে পারেন না। নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবে সরকার সব দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে। কারুর একক চাওয়ায় হতে পারে না।”
তবে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন," বিএনপির সমমনা ৪২টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আর আমাদের গণতান্ত্রিক জোটও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। আমরা তো ছয়টি দল। এর বাইরে আরো দল আছে, যারা নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চায়। প্রধান উপদেষ্টা যদি দলের হিসাব করেন, তাহলে আমার হিসাবে কমপক্ষে ৫৫টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। ফলে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা তো দেশের জনগণের দোহাই দিচ্ছেন। তিনি কি দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন? আমরা দেশের মানুষের কাছে যাই। তারা দ্রুত এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। প্রধান উপদেষ্টা যা চান, তার সঙ্গে আছে এনসিপি এবং কয়েকটি দল। দেশের প্রায় সব দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। নির্বাচনই দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। আমরাও সংস্কার ও বিচার চাই। কিন্তু ওইটাকে সামনে এনে বর্তমান সরকার নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়।”
নির্বাচন এবং সরকার, সেনাবাহিনী ও বিএনপির গুরুত্ব: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কোন দল চায় আর কোন দল চায় না তার সংখ্যা হিসাব করেন, তা ঠিক হবে না। তিনি একটা কাউন্টার দিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক ট্রানজিশন নির্ভর করছে তিনটি শক্তির ওপর। সরকার, সেনাবাহিনী এবং বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা তো এনসিপির প্রতি বায়াসড। কিন্তু তাদের কোনো ভোট আছে? নিবন্ধনই তো নেই। বিএনপির পরে আছে জামায়াত। তার ভোট বা শক্তি বিনএপির তুলনায় কিছুই না। তাহলে প্রধান উপদেষ্টা একটি দল বলেন আর অন্য দিকে যদি ১০০ দলও থাকে তাতে কিছুই ম্যাটার করে না।”
তারেক রহমানের বক্তব্যে কী ইঙ্গিত: ২১ মে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস' বলেছেন, এ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত- এমন খবর সংবাদমাধ্যমে চলে আসার পর প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছেন- ২৩ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এসে এমন দাবি করেন এনসিপি নেতা ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ২৫ মে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। পরের দিন তিনি আরো ২০টি দলের ২০ জন নেতার সাথে বৈঠক করেন। তাতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা থেমে যায়। তবে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকায় সংকট থেকেই যায়।
দুই ছাত্র উপদেষ্টা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানেরও পদত্যাগ চায় বিএনপি। এনসিপিও বিএনপিপন্থি আখ্যায়িত করে অন্য তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। বুধবার তারেক রহমান স্পষ্ট করেই বলে দেন নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তারেক রহমান আসলে সরাসরি কথা বলেন। এর আগেও তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এবার তিনি আরো দৃঢ়ভাবে বলেছেন। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে বোঝা যায় যে, এটা নিয়ে শক্ত অবস্থানে গেছেন।”
তার মতে, " সরকার যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে, সেটা হয়নি। এখন আমার মনে হচ্ছে বিভেদ আরো বাড়বে। কারণ, ইউনূস সাহেব স্পষ্ট করে কিছু বলেন না। তার কথার মানে বোঝা কঠিন। ফলে বিএনপিসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাকে নিয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন তিনি সংস্কারের কথা বলে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে চান।”
আর ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, "বিএনপি নেতারা চেষ্টা করেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। কিন্তু এনসিপিকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন। ফলে এটা তো পরিস্কার যে, তিনি এনসিপিকে সুযোগ দিচ্ছেন। এটা বিএনপি মানবে কেন? আর প্রধান উপদেষ্টা তো কেনো কিছুই স্পষ্ট করে বলছেন না। এতে তাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ফলে বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে শক্ত আস্থানে গেছে। এটা আন্দোলনে গড়াতে পারে। ”
তার কথা, "আসলে তো এখনো সংস্কার নিয়ে কোনো ঐক্য হয়নি। তাদের কাজ কবে শেষ হবে তা-ও নিশ্চিত নয়। বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। তাহলে ১০ মাসে এই সরকার কী করলো? ফলে স্বাভাবিভাবেই প্রশ্ন ওঠে- এই সরকার আসলে কী চায়?”
বিএনপির অবস্থান: বুধবার ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ' ডেকেছিল ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। ঢাকাসহ সারাদেশে তারা আরো বড় বড় শো ডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকায় বৃহস্পতিবারও বিকালে জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, "গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিগরিই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান আশা করছি।”
সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তারা মাঠ পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চান। আর বিএনপি মনে করে, সেনাবাহিনী ডিসেম্বরে নির্বাচনের ব্যাপারে অটল থাকবে। বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, "সেনাবাহিনী যদি স্বৈরাচারের পতনে এবং দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা নিতে পারে, তাহলে তারা নির্বাচন নিয়ে কেন কথা বলতে পারবে না? তারাও তো গণ আন্দোলনের অংশ নিয়েছে।”
তার কথা, "আমাদের কাছে তারেক রহমানের নির্দেশনা স্পষ্ট। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে আছি। তার মধ্যে আন্দোলনও আছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হওয়ার কোনো প্রক্রিয়া করলে আমরা আন্দোলনে নামবো।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, "তারেক রহমান সাহেব যা বলেছেন, তা তো সবাই শুনেছে। এর তো আর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন নেই। বিএনপি তার নির্দেশনায়ই কাজ করে।”
"আমরাও সংস্কার চাই। বিচার চাই। কিন্তু সরকার ১০ মাসে দৃশ্যমান কিছুই করেনি। একটি নির্বাচিত সরকারই পারে এখন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে। তাই আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। সেটাই হতে হবে, ” বলেন তিনি।