শিরোনাম
◈ এইচএসসির উত্তরপত্র আপাতত বোর্ডে না পাঠানোর নির্দেশ ◈ হত্যা চেষ্টার স্থলে ফিরে যাওয়ার সংকল্প ট্রাম্পের  ◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ বাংলাদেশ নিয়ে আমার বক্তব্য বিকৃত করেছে বিজেপি: মমতা ব্যানার্জি ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির

প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:২৩ রাত
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:২৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শবে বরাত একটি ‘সম্প্রীতিমূলক’ উৎসব

হাসনাত এ কামাল

হাসনাত এ কামাল: শবে বরাত কোরআনে নেই এই যুক্তি তুলে সালাফি এবং ওয়াহাবি আলেমরা এই আয়োজনের বিরোধিতা করেন। এক শায়খের ওয়াজ শুনলাম। তিনি বলেছেন,  শবে বরাতে সারা রাত নামাজ পড়ার চাইতে বেশ্যাখানায় যাওয়াও ভালো! প্রথমে ফেসবুক ছবিতে দেখে ভেবেছিলাম ভুয়া স্ক্রিনশট কিংবা উনি হয়তো রেটরিক্যালি বলেছেন। এরপর দেখলাম, ভিডিওতে আক্ষরিকভাবেই এই ওয়াজটা করলেন শবে বরাতের কথা কোরআনে নেই। শবে মেরাজের মিরাজ ন্যারেটিভও তো নেই। কিংবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথাও নাই কোরআনে। আছে তিন ওয়াক্তের কথা। ওয়াজ মাহফিলও তো নাই। যাই হোক, হুজুররা এই বিষয়ে স্পেশালিস্ট  তাদের মতামত তারা দিবেন। ধার্মিকদের মধ্যে যার যার ইচ্ছা অনুযায়ী পালন করবেন কিংবা করবেন না। এই চর্চাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পালন করতে না দেওয়াটাকেই অনেক হুজুর দ্বীনি কর্তব্য বানিয়েছেন।

ভারতবর্ষের মুসলিমদের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে,  বিশেষ করে মুঘল ও সুলতানী আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে শবে বরাত পালন শুরু হয়। সুলতানী আমলে  হিন্দু জমিদাররা প্রজাদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য কালীপূজো আর দীপাবলির রাত পালন করতে অনেক প্রণোদনা দিতেন। দুর্গাপূজা তখন এত জনপ্রিয় ছিল না। অপরদিকে- মুসলিম জমিদাররা শবে বরাতের উৎসাহ দিতেন। ইসলামের ঈদ কিংবা অন্য প্রধান উৎসবগুলো খুবই রেস্ট্রিকটিভ হওয়াতে এগুলোতে ফেস্টিভ্যাল সংযোজন বিয়োজন সম্ভব ছিল না। কিন্তু শবে বরাতের বেলায় আতশবাজি, হালুয়া রুটি আর সারা রাত অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি বেশ সহজেই সংযোজন হয়েছিল। বোধকরি, এজন্যই শবে বরাত আমাদের উপমহাদেশে জনপ্রিয় হয়েছিল। অধুনা পেট্রোডলারের ইসলামের প্রভাবে শবে বরাত তো বটে। ঈদে মিল্লাদুন্নবিও বাতিলের খাতায় যোগ হয়েছে। অথচ রবীন্দ্রনাথ অবধি পয়গম্বর দিবসে বিশেষ বাণী দিয়েছেন। উনার বিরুদ্ধে হিন্দু কট্টরপন্থীরা যেসব অভিযোগ করেন তার একটা হচ্ছে  উনি শান্তিনিকেতনে দুর্গাপূজা করতে অনুমতি দেন নি।

কিন্তু ঈদ-এ মিল্লাদুন্নবি বা রাসূল (সা.) জন্মদিবস পালনের অনুমতি দিয়েছিলেন। বিশেষ বাণীও লিখেছেন কয়েকবার। যাই হোক, শবে বরাতের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্স শক্ত না হওয়াতে অচিরেই হারিয়ে যাবে আমাদের শৈশবের স্মৃতি। ইদানীং এক শ্রেণির সালাফি আলেম বলেন, এটি হিন্দুদের দীপাবলির বিপরীতে স্বতন্ত্র্য উৎসব হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছিল। মুসলমান জমিদাররা এই বিদআত পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কিন্তু শবে বরাতের হালুয়া খাওয়াকে কোনো হিন্দু আদৌ নিজেদের জন্য বিরোধপূর্ণ হুমকি মনে করেছে কিনা এটা আমার চোখে পড়ে নাই। বরং ইসলামের অন্য উৎসবের তুলনায় শবে বরাত বেশ ইনক্লুসিভ ছিল। যেহেতু পলিটিক্যাল ইসলাম একে ত্যাগ করেছে শক্ত ধর্মীয় রেফারেন্সও নেই। কাজেই শবে বরাতের বেদনাদায়ক বিলুপ্তিই হবে আমাদের জীবদ্দশায়। ধর্ম বাতিল করলেও এটিকে বাঙালির একটি ‘সম্প্রীতিমূলক’ উৎসব হিসেবে রাখা যেত। যেমন আমেরিকায় থ্যাংকসগিভিং প্রটোস্ট্যান্ট পাদ্রীদের ধর্মীয় আয়োজনের চাইতে আমেরিকার জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত হয়েছে ইদানীং। 

ধর্মীয় আচার পালনের চাইতে সেখানে খাওয়া দাওয়াই মুখ্য এখন। ঠিক তেমনি শবে বরাতকে পাড়াপড়শি ও মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য এবং খাবার আদান প্রদান বিষয়ক একটি উৎসব হিসেবে রাখা যেতো। একটা আইডিয়া হতে পারে  শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই দিন সবাই আয়োজন করে গরীবদের হালুয়া রুটি আর মিষ্টি বিতরণ করবো। অর্থাৎ ইবাদাত নাই। কিন্তু দান খয়রাত আর দাওয়াত থাকুক। কিন্তু এখন এটি করতে হবে সেক্যুলার কমিউনিটিকে। ইসলামিক ঘ্রাণ আছে এমন একটি উৎসবকে উনারা হয়তো এই নার্সারিটা করবেন না। করতে চাইলেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না উনারা। কেননা বড় বড় শায়খরা ইতোমধ্যে এই আয়োজনকে বেশ্যাখানায় যাওয়ার সাথে তুলনা করে আক্রমণ করছেন। কাজেই শবে বরাতের জন্য আমাদের নাইন্টিজ কিংবা মিলেনিয়াল কিডদের একধরনের শৈশবের নস্টালজিয়ামাখা মায়া থাকলেও এটি হারিয়ে যাবে বোধ করি। অনেকটা ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় চেনা প্লুটো গ্রহের বেদনাদায়ক বিদায়ের মতন। স্মৃতি যাকে ধরে রাখতে চায়  কিন্তু পিউরিটান টেক্সট যাকে বাতিল করে দিয়েছে। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়