সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ৯ তলা ভবন থেকে পড়ে গিয়ে প্রীতি ওড়াং নামের একজন গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে এবং সে ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক এবং তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। সব বিষয়ে কথা বলা যায় না, কথা বলিও না বা নানা রকম চিন্তাভাবনা করে সাবজেক্ট বাছাই করি। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল আটটার দিকে শাহজাহান রোডের একটি বাসায়। স্থানীয়রা সেখানে বিক্ষোভ করে, নানা ধরনের স্লোগান দেয় এবং অভিযোগ করে যে মেয়েিেটকে হত্যা করা হয়েছে। সৈয়দ আশফাকুল হক একজন বড় সাংবাদিক, অত্যন্ত বিনয়ী একজন মানুষ এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি। তার জন্য আমার ব্যক্তিগত খারাপ লাগা আছে, কিন্তু তারপরেও দুয়েকটি কথা বলছি। আমাদের হয়তো মনে আছে যে ৬ মাস আগেও এই বাসায় এরকম ঘটনা ঘটেছে। সে সময় ৭ বছরের এক গৃহকর্মী কিশোরী এই বাসা থেকে পড়ে যায়, লাফ দেয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। রক্তাত্ব জখম হলেও বাচ্চাটি বেঁচে যায়। ৬ মাস না পেরোতেই আবার একই ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকা, যে পত্রিকা সবসময় শিশুঅধিকার নিয়ে বড় ধরনের মতামত তৈরি করে থাকে এবং তার একটি ইতিবাচক ভূমিকা আছে। সেই পত্রিকার একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের বাসায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে? এটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ৭ বছরের শিশুকে কী করে একজন মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে? নিয়োগ দেওয়া হলো, অথচ তার নিরাপত্তা দেখা হলো না। ৬ মাসের ব্যবধানে দুজন শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুর ফলে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমাকে দুয়েকজন বলার চেষ্টা করেছেন যে, এটি একটি দুর্ঘটনা। এগুলো কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি বড় বিতর্কের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সমাজে যারা মানবাধিকার সংবলিত বিভিন্ন কথা বলেন তারা নিজেরা মানুষদের জন্য কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রীতি ওড়াংয়ের বাবা একজন চা শ্রমিক। মিন্টু নামের ডেইলি স্টারের একজন স্থানীয় সংবাদদাতার মাধ্যমে তাকে এখানে পাঠানো হয়। বাবার অভিযোগ অভাবের কারণে ছোট মেয়েকে আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু মিন্টু গৃহকর্মীর কথা না বলে ঢাকায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে এনেছিলেন। দুই বছরে মাত্র ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এই খবরও আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে দেখেছি। একটি গুরতর অভিযোগ আছে যে, দুই বছরে মেয়ের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি অভিভাবককে, শুধু টেলিফোনে কথা হতো। আমরা এটি অনেকের ভেতরে দেখতে পাই, বাসায় একবার ঢুকিয়ে নিতে পারলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এই গৃহকর্মীদের । আমি যখন রিপোর্টার ছিলাম এরকম অনেক রিপোর্ট আমি করেছি। এখানেও যখন একই কথা আমি শুনেছি আমি ব্যথিত হয়েছি। কারণ আশফাক একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং এমন একটি কাগজের সাংবাদিক, যেটি বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদ চর্চা করে থাকেন।
দুঃখজনক বিষয় হলো এই ঘটনায় একটি বিবৃতি ছাড়া ডেইলি স্টার তেমন কিছুই বলেনি। আসলে তারা হয়তো অপেক্ষা করছে তদন্তের জন্য। অভিযোগ উঠেছে যে প্রীতির পরিবারকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে এটি অনেক ঘটে। যখন গৃহশ্রমিকরা মারা যায় তখন পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়Ñ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায়। প্রীতির স্থানীয় এলাকার চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় বলেছেন, ‘শুনেছি প্রীতির উপর আগে থেকেই মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। সেই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় প্রীতি আজ আমাদের মধ্যে নেই’। এখন তদন্ত দরকার। পুলিশ বলছে যে, এখনো তাদরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এর মাধ্যমে সত্য বেড়িয়ে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু যে প্রশ্নগুলো বর্তমান সমাজে উঠেছে যে, যাদের আইন রক্ষা করার কথা, অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা সেখানে কেন বারবার এরকম ধরনের ঘটনা ঘটবে? এসব কথা বা প্রশ্নগুলো বড় রকমের বিতর্ক তৈরি করেছে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ফেসবুক পেজের ভিডিও কনটেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস
আপনার মতামত লিখুন :