কাজী এম. মুর্শেদ: আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেন্যুফেস্টোতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা আছে। এর চার পিলার, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনোমি। আপনারা এই কনসেপ্ট কতোটা পরিষ্কারভাবে বোঝেন? সিরিয়সলি বলি, আমার কাছে পরিষ্কার নয়। স্মার্ট সিটিজেন ও স্মার্ট সোসাইটির মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নয়। স্মার্ট গভর্নমেন্ট কথা বলা হয়েছে, শব্দটা স্মার্ট গভর্নেন্স হওয়া উচিত ছিলো। স্মার্ট ইকোনোমি আইটি বেইজড হওয়ার কথা। কয়েকটা টকশো শুনেছি এবং সেখানে কিছু আইটি বিশেষজ্ঞ বা তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের কথা শুনেছি। আমি নিজে বুঝি না, আমার দুর্বলতা। কিন্তু তারা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন এবং স্মার্ট বাংলাদেশের পদক্ষেপ হিসেবে বোঝান।
আমার মাথায় কোনোভাবেই এটা আসে না, এই দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা কনসেপ্ট কীভাবে উনারা কীভাবে মিলান। সোজা কথায় এসব জার্গান আপনারা বলতে পারেন, লোকে আপনাকে বিজ্ঞ মনে করবে, মূলত আপনারা নিজেকে হাসির পাত্র বানাচ্ছেন। আপনারা ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশন ব্যাপারটাই বোঝেননি। এবার অন্য বিষয়ে আসি, আমি ঘুরে ফিরে অর্থনীতি নিয়ে বলবো, সেই কুমীরের রচনার মতো কুমীরের লেজ খাঁজ কাটা, খাঁজ কাটা, খাঁজ কাটা। দুইটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন। প্রথম কথা আওয়ামী লীগের মেন্যুফেস্টের প্রথম কথা ছিলো পণ্যের দাম সহনশীল করবে।
গত দুই বছরের উপর একের পর একেকটা পণ্য তুলে ধরে সেটার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো চলছে। তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম এমন বিভিন্ন পণ্য জনগণের নাগালের বাইরে যায়। এটার পেছনে যেই সিন্ডিকেট কাজ করে, তারা সরকারের প্রধান চাঁদা বা দাতাগোষ্ঠি। এদের সামলানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। দ্বিতীয় ব্যাপার খেয়াল করেন, গত কয়দিন ব্যাংকগুলোর লিক্যুইডিটি ক্রাইসিস চলছিলো, এর জন্য ৪/৫টা ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়ে বসে আছে। এভাবে টাকা ছাপিয়ে লোক দেওয়ার কারণে টাকার মূল্যমান কমছে। পণ্য কিনতে খরচ আরো বাড়তে যাচ্ছে। তৃতীয় ব্যাপার হলো, সরকারি বন্ড বিক্রি নেগেটিভ অবস্থায়।
এই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচ মাস একটানা বন্ড বিক্রি কমে আসছে, সেখানে জনগণ যতোটা কিনছে তার চেয়ে বেশি বেঁচতে হচ্ছে। সংসার চালাবার অন্য রাস্তাম নেই। চতুর্থ ব্যাপার, গত কয়দিন বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই উঁচু দরে বন্ড কিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সরাসরি প্রতিযোগিতার এসে দাঁড়িয়েছে। যখন রেগুলেটরি অথরিটি নিজেই প্রতিযোগী, ব্যাংক টিকবে কী করে? পঞ্চম ব্যাপার, আইএমএফের ঋণের শর্ত পুনঃবিবেচনা করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫% কমিয়েছে। সেটাও সরকার মেলাতে পারেনি। বাকি হিসাব মিলান, কিছু নিজেরাই বুঝতে পারবেন। এবার দ্বিতীয় যা খেয়াল করবেন, এই স্মার্ট বাংলাদেশের সংজ্ঞা ও পৌঁছানোর রাস্তা। আপনারা আসলেও যদি স্মার্ট বাংলাদেশ এবং ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশনের কোনো সরলরৈখিক মিল পেলে লেখেন। শেখার ইচ্ছা আছে। শেষ কথা, একটা কথা আছে, হোয়েন ইউ ক্যান্ট কনভিন্স সামওয়ান, কনফিউজ হিম। স্মার্ট বাংলাদেশ তেমনই একটা পদক্ষেপ। সময় পেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আরেকদিন একটা গল্প বলবো। লেখক: কলামিস্ট