শিরোনাম
◈ আইন সংশোধন, নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও প্রশিক্ষণে আটকে নির্বাচন পরিকল্পনা ◈ খামেনির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ পরিকল্পনা বন্ধ করলেন ট্রাম্প? ◈ ডিজিটাল বাংলাদেশে নতুন মাইলফলক: সার্টিফিকেট সত্যায়ন এখন অনলাইনেই (ভিডিও) ◈ রাতের আকাশে আগুন! ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে কাঁপছে ইসরায়েল ◈ ইসরায়েলে আঘাত করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্যে 'সরকারি সফর' থেকে কী অর্জন হলো ◈ ইরানে বিদ্রোহের ইঙ্গিত সাবেক যুবরাজ রেজা পাহলভির: ইসরায়েল-যুদ্ধ পরবর্তী ‘রেজিম চেঞ্জ’ পরিকল্পনার আভাস ◈ ভুটানসহ আরও ৩৬ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, বাকি দেশ গুলোর নাম হলো ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার আসল কারণ যা জানাগেল! ◈ ইরান প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু

প্রকাশিত : ১৬ জুন, ২০২৫, ১২:৫২ রাত
আপডেট : ১৬ জুন, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইসরায়েলে আঘাত করা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল

শুক্রবার ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ইরানও। বর্তমানে উভয় দেশই পরস্পরকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর আসা হুমকি মোকাবিলা করতেই তারা ইরানে এই হামলা চালিয়েছে।

গত কয়েক দশক ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে সতর্কতা প্রকাশ করে আসছিলেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি তিনি ইরানের 'ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র'কে নতুন হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

১৯৮৪ সাল থেকেই ইসরায়েল দাবি করে আসছিল, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলার জবাবে করা পাল্টা হামলায় ইরান ইতোমধ্যে ২০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

যদিও ইতোমধ্যে ইরানের পারমাণবিক ও তেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, তবে তেহরানও পাল্টা হামলা চালাতে থাকবে বলে মনে করছে ইসরায়েল।

শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের গতি বাড়িয়েছে এবং প্রতি মাসে ৩০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে। সেই হিসাবে বছরে তারা ২০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র করে ফেলার কথা।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র যেন 'বিস্ফোরক ভর্তি একেকটি বাস', যেগুলো ইসরায়েলি শহরগুলোতে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত।

ইরান কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে কয়টি
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত থেকে ইরান প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পাশাপাশি অনেকগুলো বিস্ফোরক ড্রোনও নিক্ষেপ করেছে তারা।

ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ইরানের নিক্ষেপ করা কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে কিংবা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে কতগুলো হামলা প্রতিহত হয়েছে, তা এখন জানায়নি জেরুজালেম। এর পেছনের কারণ হিসেবে তারা বলছে, এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলে তা প্রতিপক্ষকে সহায়তা করতে পারে।

তবে শনিবার দুপুরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে এমন ১৭টি স্থানে তারা চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে কিছু তেল আবিব এবং কিছু কেন্দ্রীয় উপকূলীয় অঞ্চলের রামাত গান ও রিশন লেজিয়ন এলাকায় পড়েছে। শনিবার রাতে উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।

ইরানের গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১২৮ ইরানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, ইরানি হামলায় তাদের অন্তত ১০ নাগরিক নিহত হয়েছেন।

শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের সেরাগুলোর একটি হলেও তা পুরোপুরি হামলা প্রতিরোধযোগ্য নয়।

ইসরায়েলের কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের চেষ্টা করছে ইরান?
ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেসব স্থানে আঘাত হেনেছে, তার অনেকগুলোই ইসরায়েলের শহরের ভেতরে বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা করছে।

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা সামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। বিরোধীপক্ষ উপকৃত হতে পারে—এমন ধারণা থেকে এই তথ্য প্রকাশ করছে না ইসরায়েল।

তবে ইসরায়েল অপেক্ষাকৃত ছোট দেশ। আয়তনে দেশটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চেয়ে সামান্য বড়। এর বেশিরভাগ মানুষ ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় সমভূমিতেই বসবাস করে। দেশজুড়ে এবং দূরবর্তী এলাকাগুলোতেও সেনাবাহিনী ঘাঁটি ও ক্যাম্প আছে।

শনিবার সকালে একটি আবাসিক টাওয়ার ব্লকে সরাসরি আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র, যা একটি জনপ্রিয় বিনোদন অঞ্চলের অংশ। সেখানে অসংখ্য ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এটি তেল আবিবের সামরিক ও সরকারি সদর দপ্তরের কাছেই অবস্থিত। ওই দুটিই সম্ভবত ছিল মূল লক্ষ্য।

পরে শনিবার হাইফা বন্দরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার হাইফা উপসাগরীয় এলাকায় অবস্থিত।

ইরানের হাতে এখন কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র বাকি আছে?
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্মগুলোর মজুদে হামলা চালাচ্ছে। ফলে ইরানের কাছে থাকা ইসরায়েলের দিকে ছোড়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা কমে আসছে।

সামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এখনো শত শত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে—এমন রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা দুই হাজার পর্যন্ত হতে পারে। ইরান যদি বর্তমান গতিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তবে তারা আরও কয়েকদিন এই গতি ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তারা।

ইসরায়েলে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কতটা শক্তিশালী?
নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে এক টন বা এক হাজার কেজি ওজনের বিস্ফোরক আছে। যদিও সামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওজন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

ইসরায়েলি মহাকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ তাল ইনবার বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ওয়ারহেডের ওজন হতে পারে সর্বোচ্চ এক হাজার কেজি। আর এগুলো ৩০০ থেকে ৬৮০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করে থাকে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা সম্পর্কে ইসরায়েল কতটুকু জানতে পেরেছে?
তাল ইনবারের মতে, ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেখে বিস্মিত নয়। কারণ এর আগে ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলার জবাব হিসেবে ইরান একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেই তারা এই হামলা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে। তবে হুতিরা সাধারণত দিনে একটি করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে এবং এর অধিকাংশই ইসরায়েলি ও মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছে।

ইনবার বলেন, এবার পার্থক্যটা হলো—ইরান একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। এর ফলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সব প্রতিহত করা যাচ্ছে না। উপরন্তু কিছু ক্ষেপণাস্ত্র জনবহুল এলাকাতেও আঘাত হেনেছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, ইরান এই প্রথম ইসরায়েলের দিকে যে নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, তার নাম 'শাহেদ হাজ কাসেম। এর রেঞ্জ প্রায় এক হাজার মাইল।

ইনবার আরও বলেন, ইরানের আগের ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এটি বেশ আধুনিক। উৎক্ষেপণের আগে এতে জ্বালানি লোড করতে হয় না। অর্থাৎ এটি বছরের পর বছর মাটির নিচে থাকলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই এটি দিয়ে আঘাত হানা যায়। উৎস: ডেইলি স্টার।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়