শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কাজ করতে দেওয়া হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ৪৮ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগরে নতুন লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা, ভারী বর্ষণের শঙ্কা ◈ খেলতে গিয়ে নদীতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু, চলছে নিখোঁজ দুইজনের উদ্ধারকাজ ◈ শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায় ◈ তুরস্কে ১,৬০০ বছরের প্রাচীন ওয়াইন তৈরির কারখানা উদ্ধার! ◈ ভারতের ৩৯% অবিবাহিত মনে করেন বিয়ে আর জীবনের মাইলফলক নয়, এটি ঐচ্ছিক ◈ বাংলাদেশে চতুর্থ গণভোটের আলোচনা: সংবিধানে কী আছে, আগের অভিজ্ঞতা কী বলছে ◈ বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ কর‌লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হলো না?  ◈ নূর ভাই বেঁচে আছেন, সে বেঁচে থাকা মৃত‍্যুর চেয়ে একটু ভালো: অভিনেতা আফজাল হোসেন

প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০২:২৪ রাত
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০২:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নতুন স্বাস্থ্য নেতা, আর আমাদের প্রত্যাশা

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল): বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গোটা পৃথিবীটাকে যে কয়টি অঞ্চলে বিভক্ত করে বিশ্বমানবের স্বাস্থ্যের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে, তার অন্যতম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলটি। অন্যতম বলার উদ্দেশ্য, জনসংখ্যা হিসেবে হু’র এই অঞ্চলটিতেই পৃথিবীর সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের বসবাস। সেই প্রেক্ষাপটে হু’র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী বা রিজিওনাল ডাইরেক্টর নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। সিয়ারো অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাউথ ইষ্ট এশিয়া রিজিওনাল অফিসের আওতাভুক্ত ১১টি রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেতো বটেই, এমনকি পুরো পৃথিবীর স্বাস্থ্য অধিকর্তারা সবাই সিয়ারোর রিজিওনাল ডাইরেক্টরের এই পদটিতে কে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তা খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণে রাখেন। সেই প্রেক্ষাপটে একজন বাংলাদেশির জন্য সিয়ারোর রিজিওনাল ডাইরেক্টর পদে নির্বাচনটি দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ। তাছাড়া এই প্রথমবারের মতো সিয়ারোর নবীনতম সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের একজন নাগরিক এই পদটিতে বিজয়ী হয়ে পুরো জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন। আমাদের জন্য গর্ব আর আনন্দের মাত্রাটা আরো কয়েক ডিগ্রি বেশি। কারণ হু’র এই নবনির্বাচিত ডাইরেক্টর জাতির জনকের সুযোগ্য দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ। তার বিজয়ের এই রেশ তাই ছুঁয়ে গেছে প্রতিটি বাঙালির অন্তরকে, তা তিনি ডাক্তারই হন বা অন্য কোনো কিছু। বাংলা আর বাঙালিত্বে বিশ্বাস করেন আর বাঙালিয়ানাকে অন্তরে ধারণ করেন এমন একটি মানুষও সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা এই জয়কে নিজের বলে মনে করেননি।

এটি তো গেলো একজন সায়মা ওয়াজেদের সিয়ারো জয়ের আবেগাশ্রয়ী প্রেক্ষাপটটি। এর একটি অন্য ডাইমেনশনও আছে। সায়মা ওয়াজেদের সিয়ারোতে রিজিওনাল ডাইরেক্টর পদে বিজয়ী হওয়াটা যে সময়ের অপেক্ষা মাত্র, এ বিষয়ে যারা নিয়মিত চর্চা করেন তাদের তা জানতে, বুঝতে একদমই সময় লাগেনি। এই বাস্তবতাকে বোঝার পরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশের এগিয়ে চলা যাদের গায়ে জ্বালা ধরায়, সেই চক্রটি এক হয়েছিল গুরু এই দায়িত্বটি নেওয়ার আগেই তাকে একজন অযোগ্য রিজিওনাল ডাইরেক্টর হিসেবে প্রমাণ করার অশুভ চক্রান্তে। ভাবখানা এমন যে শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে বলেই তিনি এ যাত্রাটা উতরে গেলেন আর কী? 

সায়মা ওয়াজেদ যে নিজ গুণে কতেখাানি গুণান্বিত তা তারা সম্ভবত জেনে না জানার ভান করছিলেন। তবে আমার ধারণা, তাকে মূল্যায়নের যোগ্যতাও সম্ভবত তাদের নেই। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার প্রণীত তিন তিনটি আন্তর্জাতিক রেজুলেশন জাতিসংঘ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্রহণ করেছে। এ তিনটি হচ্ছে ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রেজুলেশন, ‘কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটেড এফোর্টস ফর দ্য ম্যানেজমেন্ট অব অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টাল ডিজএবিলিটিজ’, একই সংস্থার ২০১৪ সালের রেজুলেশন ‘কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটেড এফোর্টস ফর দ্যা ম্যানেজমেন্ট অব অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস’ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২০১২ সালের রেজুলেশন, ‘এড্রেসিং দ্য সোশিও-ইকোনোমিক নিডস অব ইন্ডিভিজুয়ালস, ফ্যামিলিজ অ্যান্ড সোসাইটিজ এফেক্টেড বাই অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস, ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড এসোসিয়েটেড ডিজএবিলিটিজ’। তিনি নিজ গুণে একদিকে যেমন ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা, তেমনি তারও পাঁচ বছর আগে থেকেই তিনি সংস্থাটির মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেলেরও  সদস্য। 

সায়মা ওয়াজেদ ২০২৩ সালে চ্যাথাম হাউজের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামের এসোসিয়েট ফেলো নিযুক্ত হন আর তার ঠিক আগের বছর থেকে তিনি কমিশন ফর ইউনিভার্সাল হেলথের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭-২০১৯ পর্যন্ত তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অটিজম বিষয়ক এম্বাসেডারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে তিনি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের এম্বাসেডার ছিলেন। দেশেও তিনি অটিজম সংক্রান্ত জাতিয় কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন সেই কবে ২০১২ সাল থেকে। এই সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তার ললাটে স্বীকৃতিও কম জোটেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কার্যালয় থেকে ‘সাইটেশন ফর এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ’, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিস্টিংগুইশড এ্যালুমনাই এওয়ার্ড’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইনোভেটিভ লিডার ইন গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন।

মূলত সায়মা ওয়াজেদের যে বহুমাত্রিক পেশাগত ও পারিবারিক অভিজ্ঞতা আর তার ঝুড়িতে এই যে এতোসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিÑ এ সবকিছু মিলিয়ে তার এই নির্বাচন তার কাছে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিশারদদের প্রত্যাশার পারদটাকে একেবারে আকাশে নিয়ে ঠেকিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাইরাস হেপাটাইটিস সংক্রান্ত কোলাবোরেশন সেন্টারের প্রধান এবং লাখনৌয়ের সঞ্জয় গান্ধী পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেসের অধ্যাপক অমিত গোয়েলের ধারণা, আমাদের এ অঞ্চলে পাবলিক হেলথকে নতুনভাবে সামনে নিয়ে আনার জন্য সবচাইতে যোগ্য ব্যক্তিটি হচ্ছেন সায়মা ওয়াজেদ আর জাপানের এহিমে ও ওইতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং রিসার্চার ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবরের ধারণা, সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বের গুণে শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া নয়, গোটা বিশ্¦ের মানুষই উপকৃত হবেন। তিনি অটিজমের মতো একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসায় তিনি সায়মা ওয়াজেদকে অভিবাধন জানাতে ভুলেননি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভুটানের সাবেক প্রধান ডা. রিওয়ারী আশা প্রকাশ করেছেন যে, অটিজমকে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ফোরামে প্রতিষ্ঠা করায় সায়মা ওয়াজেদের যে পথিকৃত ভূমিকা আর সাথে তার মানবিক গুণাবলির সমন্বয়, তাকে সিয়ারোর রিজিওনাল ডাইরেক্টর পদে যোগ্যতম প্রার্থীতে পরিণত করেছিল। 

ভারতের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেসের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সুব্রত কুমার আচারিয়া মনে করেন, সায়মা ওয়াজেদ এই পুরো অঞ্চলের একজন সত্যিকারের হেলথ এম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে ভারতীয় সায়েন্স কংগ্রেসের ন্যাশনাল গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক প্রদীপ ভৌমিকের বিশ্বাস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিনির্ধারণী এই পদে সায়মা ওয়াজেদের অন্তর্ভুক্তি এই সংস্থাটিকে আরও জনমুখী করবে। আর দক্ষিণ এশীয় লিভার এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক শিবরাম প্রসাদ সিং মনে করেন, সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগ আমাদের এই অঞ্চলে হেপাটাইটিস বি ও সি’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে আমাদের আরও অনেক বেশি শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান এসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ান অরিজিনের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ড. অমিত চক্রবর্তী সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে তার লেখা দীর্ঘ প্রবন্ধে তার জীনব ও ক্যারিয়ারের নানা দিক তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পদের জন্য সায়মা ওয়াজেদের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন নির্বাচনের বেশ আগেই।
  
যার কাছে এতসব বিদগ্ধজনদের এতবেশি প্রত্যাশা, তাকে যখন কেউ হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় তখন তাদের বড়জোড় কিছুটা করুণা করা যেতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। বরং বিজ্ঞজনদের প্রত্যাশার পারদটা যাতে নিম্নমুখী না হয়, সায়মা ওয়াজেদের সিয়ারোর রিজিওনাল ডাইরেক্টর হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে এই মানুষগুলো যেন মনে করেন যে, তারা আসলে অনেক কমই প্রত্যাশা করেছিলেন, সেটাই এখন প্রত্যাশা এবং আমি এবং আমরা এটাও জানি যে একজন সায়মা ওয়াজেদ এতো বিশাল প্রত্যাশার এই চ্যালেঞ্জটা অনায়াসেই উতরে যাবেন।

লেখক : ডিভিশনপ্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য, স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপ ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি এবং সেক্সচুয়ালী ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন ডিজিজ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়