শারফিন শাহ: ‘আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি’ বাক্যটির ইংরেজি অনুবাদ এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়া একটি মেয়ে পারেনি, আর এটাই সাংবাদিক ভিডিও করে ছড়িয়ে দিলো। আজকাল হাতে মোবাইল হলে সবকিছুই হওয়া যায়। এই মোবাইল এক ইচ্ছে দৈত্য। যে সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেছেন তার বংশের সবাই কি ইংরেজির জাহাজ? তিনি নিজেও কি ইংরেজির বস? আমাদের শিক্ষা ভাষাকেন্দ্রিক নয়। ইউরোপে স্কুল থেকেই মাতৃভাষার পাশাপাশি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ফরাসি ও জার্মান শিখতে হয়। কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব এই দুই ভাষাতেই বেশি। ফরাসি দূরে থাক, আমরা তো ইংরেজিই পারি না। এর পেছনে বহু কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ আমরা ভাষাকে ভালোবাসি না। ভাষা শিক্ষাকে অবহেলা করি। বিদেশি যে কটা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থায় আবেদন করেছি, সবার আগে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র চেয়েছে।
আর আমাদের শিক্ষক নিয়োগ থেকে সবখানেই একগুচ্ছ অপ্রয়োজনীয় শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে কি ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয়? এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও নয়। এজন্যই ছাত্রছাত্রীরা ভাষায় এমন দুর্বল থেকে যায়। আমাদের উপরে ওঠাই প্রধান ধর্ম। ভাষা শেখার দরকার কী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ফরাসি ভাষার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। নানা কারণে এগোতে পারিনি। উদ্বোধনী ক্লাসে অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন, ‘আমরা তো মাতৃভাষাই ঠিকঠাক পারি না, আমিও পারতাম না, কিন্তু এই আমি এখন বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি ভাষায় মোটামুটি দক্ষ। আমার মতো গ্রামের স্কুলে গরুর রচনা মুখস্থ করা বালকেরা কীভাবে তিনটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে, এগুলো নিয়ে আমাদের পণ্ডিতদের ভাবা দরকার। ওই যে বড়লোকের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছেলেটির ইংরেজি শিক্ষাকে আমাদের ইংরেজি শিক্ষার মানদণ্ড করা ঠিক নয়। আমরা চাষার বংশধর, আমাদের ইংরেজি শেখার ধরন বড়লোকের ছেলেমেয়েদের মতো হবে না।
ভাষার গুরুত্ব না বুঝলে আমরা বোকার স্বর্গেই থেকে যাবো। আমার কাছে অবাক লাগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লোকবল নিয়োগে ভাষাগত দক্ষতা লাগে না, মনে করা হয় ভালো ফলাফল থাকলেই সব জানা আছে। পৃথিবীর কোথাও এরকম চিত্র নেই। আমি ভালো ছাত্র ছিলাম না। সেই অভাবের দায় থেকেই মনে হয় এখনও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। ভালো ছাত্র হলে হয়তো পারতাম না। আমাদের ভালো ছাত্রদের পড়াশোনা একটা সময়ের পর না করলেও চলে। আর ভাষা শেখা তো বহুদূর। লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :