শিরোনাম
◈ সেনা বা পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির ভিডিও ধারণ ও প্রচার নিয়ে প্রশ্ন ◈ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী দলগুলো, এবার আগাচ্ছে ভিন্ন ভাবে ◈ ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের, তেহরানের আকাশসীমায় ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ ◈ মঙ্গলবার সি‌রি‌জের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মু‌খোমু‌খি ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের অ‌ভি‌ষেক ম‌্যা‌চে  অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০গো‌লে হারা‌লো পিএসজি ◈ কর্মীদের ভাতা কমিয়ে দিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, কিছু অবাধ্য কর্মীর জন্যই এই সিদ্ধান্ত ◈ ক্রিকেটেও ভারতকে টক্কর, এ‌শিয়া কাপ না হ‌লে ত্রিদেশীয় সি‌রি‌জের আ‌য়োজন কর‌বে পাকিস্তান ◈ ইরানসহ ৪ দেশ মিলে ইসলামিক আর্মি গঠনের প্রস্তাব ◈ দুই হাজার কোটি টাকা পাচার : দুদকের জালে স্বামীসহ সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা ◈ লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত ইসিকে জানাতে হবে, দ্রুত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আহ্বান সালাহউদ্দিনের

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:৪৬ রাত
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৩, ০১:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কীটনাশক ব্যবহার থেকে সাবধান!

মো. আরাফাত রহমান : কীটনাশক হলো বিষাক্ত পদার্থ, যা পোকামাকড় মারতে সাহায্য করে। রাসায়নিক কীটনাশক প্রধানত পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। এর প্রয়োগ পোকামাকড়ের ডিম লার্ভা ধ্বংস করে। কৃষিসহ চিকিৎসা, শিল্প ও গৃহস্থালী কাজে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। বিংশ শতাব্দীতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হিসেবে কীটনাশকের ব্যবহার প্রসারিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। কীটনাশক মিশ্রিত খাবার প্রায়ই মানুষের ক্ষতি করে। এছাড়াও ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের কীটনাশক জীববৈচিত্র্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। অনেক ধরনের কীটনাশকও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কিছু কীটনাশক খাদ্য শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করে। নিকোটিন, নিম থেকে প্রাপ্ত একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক, পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। নিকোটিন-ভিত্তিক কীটনাশক এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা-সহ বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অ-ভেষনাশক কীটনাশক ধাতব যৌগ দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে সালফার থাকে।

কীটনাশক অজৈব বা জৈব পদার্থ হতে পারে। তিনটি সাধারণ বিভাগে পড়ে খাদ্য বিষ, যোগাযোগের বিষ ও ধোঁয়ার বিষ। ধোঁয়া সাধারণত ঘর, শস্যাগার বা গ্রিনহাউসের মতো আবদ্ধ স্থানে সঞ্চিত পণ্যের কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর। কিছু পদার্থ যেমন বিকর্ষণকারী, আকর্ষক, রাসায়নিক জীবাণুনাশক, ফেরোমোন ইত্যাদিও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, তবে তাদের কর্মের পদ্ধতি ভিন্ন। সাধারণত এই রাসায়নিকগুলো বিষাক্ত নয়। সাধারণত অজৈব কীটনাশক শুধু খাদ্যের বিষ হিসেবে কার্যকর ও বর্তমানে প্রধানত টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বেশির ভাগ জৈব কীটনাশক কৃত্রিম বা উদ্ভিদ-ভিত্তিক যোগাযোগের বিষ হিসাবে কিছু ক্ষেত্রে ধোঁয়ার বিষ হিসাবে কার্যকর। কীটনাশকের উদ্ভবের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৮০০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে কলোরাডো পটেটো বিটল দ্বারা আলু ক্ষেতে আক্রান্ত হলে কীটনাশকের প্রথম ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। প্যারিস গ্রিন নামক একটি আর্সেনিকযুক্ত পদার্থ উদ্ভিদ সংরক্ষণকারী হিসাবে এতটাই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল যে চাষীরা আপেলের মথ ধ্বংস করতে এটি ব্যবহার করতে শুরু করে।

নতুন কীটনাশক আবিষ্কারের বর্তমান প্রবণতা প্রায় পুরোটাই কৃত্রিম জৈব-রাসায়নিকের দিকে। ২০ শতকের মাঝামাঝি ছিল কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য সিন্থেটিক কীটনাশক আবিষ্কারের বিপ্লবের সময়। ডিডিটি আবিষ্কার মাছি-সহ ব্যাপক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে এর সফল ব্যবহার, রসায়নবিদ  রাসায়নিক শিল্পকে শত শত নতুন কীটনাশক আবিষ্কার ও বাজারজাত করতে অনুপ্রাণিত করেছে। কৃত্রিম জৈব-কীটনাশকগুলোকে রাসায়নিক সংমিশ্রণের ভিত্তিতে বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে যেমন ক্লোরিনযুক্ত হাইড্রোকার্বন, সাইক্লোডিয়ান যৌগ, কার্বামেট, অর্গানোফসফেট ইত্যাদি। ক্লোরিনযুক্ত হাইড্রোকার্বনের মধ্যে ডিডিটি, মেথোক্সিক্লোর লিন্ডেন বহু বছর ধরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর অবশিষ্টাংশ দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এর ব্যবহার এখন নিষিদ্ধ।

সাইক্লোডিন যৌগগুলো অত্যন্ত ক্লোরিনযুক্ত চক্রীয় হাইড্রোকার্বন। এর মধ্যে রয়েছে ক্লোরডেন, হেপ্টাক্লোর, অ্যালড্রিন, ডিলড্রিন, এনড্রিন ইত্যাদি। এই কীটনাশকের বেশিরভাগই মাটির কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর। এন্ড্রিন মাছের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত হওয়ায় ১৯৬২ সাল থেকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কার্বামেট একটি অনন্য শ্রেণীর কীটনাশক। অর্গানোফসফরাস কীটনাশক প্রায় সব ধরনের কীটপতঙ্গ মারার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই গবেষণার ফলে সব ধরনের হাজার হাজার কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছে। ম্যালাথিয়ন, ডায়াজিনন, বাইড্রিন, ডিমিক্রন, অ্যাজোড্রিন, নোগোস, নেক্সিয়ন ইত্যাদি হলো সবচেয়ে পরিচিত কিছু অর্গানোফসফেট। এই কীটনাশকের বেশিরভাগেরই একাধিক ট্রেডমার্কযুক্ত নাম রয়েছে।

বেশিরভাগ অর্গানোফসফরাস কীটনাশক পদ্ধতিগতভাবে কাজ করে। এটি একটি অসামান্য বৈশিষ্ট্য কারণ এটি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে শোষিত প্রাণঘাতী স্তরে পরিবাহিত হয় তৃণভোজী পোকামাকড় সেগুলো খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। কান্ড-বিরক্তিকর শুঁয়োপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই গুণাবলীর কীটনাশক এখন অপরিহার্য। মাইক্রোবিয়াল কীটনাশক হলো ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গকে রোগজীবাণু ও তাদের উপজাত দ্বারা সংক্রামিত করে নিয়ন্ত্রণ করা। রাসায়নিক কীটনাশকের মতো এগুলোকে কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে, ড্রামে বাজারজাত করে, পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করার মেশিনে স্প্রে করা যায়। রাসায়নিক কীটনাশকের তুলনায় মাইক্রোবিয়াল কীটনাশকের কিছু লক্ষণীয় সুবিধা রয়েছে। এগুলো নির্দিষ্ট কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে কার্যকর, নিরাপদ  বিষাক্ত অবশিষ্টাংশ মুক্ত।

অণুজীব কীটনাশক ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের সাধারণ শত্রুদের মেরে ফেলে ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের মধ্যে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে না। কিছু রাসায়নিক কীটনাশকের বিরোধী নয়, তবে সংযোজক সংমিশ্রণে ব্যবহৃত হয়। তবে এই কীটনাশকেরও কিছু অসুবিধা রয়েছে। অত্যধিক নির্দিষ্টতার কারণে, তাদের উৎপাদন ও বিপণন সীমিত। তারা তাপমাত্রা ও আলোর তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। বাঁধাকপির শুঁয়োপোকা মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে যথাক্রমে বিউভারিয়া বেসিয়ানা মেটারিজিয়াম এনিসোপ্লিয়া খুবই কার্যকর। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া  রাউন্ডওয়ার্মের বেশ কয়েকটি প্রজাতি তাদের খাওয়ানো জীবাণু ও  পোকামাকড়ের পেটে প্রবেশ করে কার্যকর সংক্রমণ ঘটায়। পোকামাকড়ের দেহে সবচেয়ে ভালো স্পোর-গঠনকারী ব্যাকটেরিয়া হলো ব্যাসিলাস পপিলিয়া  বি. থুরিংয়েনসিস প্রোটোজোয়া  বিশেষ করে নোসেমা কিছু পতঙ্গের বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইক্রোবায়াল কীটনাশকের ব্যবহার খুবই সীমিত। এটি ধানের পোকা পুঁচকে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এমন অনেক জীবাণু শনাক্ত করে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। সব কীটনাশক সব পোকামাকড়ের জন্য সমানভাবে কার্যকর নয়। বিশেষায়িত ওষুধগুলো প্রায়শই নির্দিষ্ট ধরণের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকারী। কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের সাফল্য বিভিন্ন অবস্থার উপর নির্ভর করে। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় সঠিক ওষুধ সেবন করা হলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু সব কীটনাশকই মারাত্মক বিষ। তাই তাদের সতর্কতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত। আজকাল শুধুমাত্র ওষুধের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ পরিচালনার উপর জোর দেওয়া হয়। এ ধরনের পদ্ধতিকে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বলা হয়। যেহেতু কীটনাশক ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই পরিবেশকে দূষিত করে  পরিবেশের ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে, সেহেতু তাদের ব্যবহার কমানোর জন্য যত তাড়াতাড়ি বিকল্প গ্রহণ করা হয়, মানুষের জন্য ততই মঙ্গল।

লেখক : কলাম লেখক সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির একজন কর্মকর্তা । সূত্র : দি এশিয়ান এজ। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়