শিরোনাম
◈ শোকাহত ভারতের ক্রীড়াঙ্গন ◈ একক দলকেই প্রাধান্য, জাতীয় ঐকমত্য উপেক্ষিত—মুহাম্মদ ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের সমালোচনায় এনসিপি ◈ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও শিক্ষা-অর্থনীতির চ্যালেঞ্জে একমত ড. ইউনূস ও গর্ডন ব্রাউন ◈ টেস্ট চ‌্যা‌ম্পিয়ন‌শিপ ফাইনাল জিত‌তে আফ্রিকাকে ২৮২ রানের লক্ষ্য দিলো অস্ট্রেলিয়া ◈ অ‌ধিনায়ক মেহে‌দী মিরাজ বললেন, আমা‌দের দলে প্রতিভার অভাব নেই ◈ ‌ডি ব্রুইনা আর ম‍্যানসিটিতে খেল‌বেন না, যোগ দি‌লেন নাপোলিতে  ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের ◈ ইসরাইলের ২০০ যুদ্ধবিমানের একযোগে হামলা: ইরানে নিহত ৭০ ছাড়িয়েছে, আহত তিন শতাধিক ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল ৫ জনের

প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:১৮ রাত
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুক্তগদ্য : ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বপক্ষে

মোজাফফর হোসেন

মোজাফফর হোসেন: সবসময় স্বাধীনই হতে চেয়েছিলাম। বাইরের স্বাধীনতা নয়। দেশের, সমাজের, রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিষয়টি বোঝার অনেক আগেই আমি বুঝেছিলাম, স্বাধীন আমি নই। মাধ্যমিকে পড়ি, ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে মনে হলো, আমি চাইলে পৃথিবীর কোলাহল থামিয়ে দিতে পারি। শব্দহীন শূন্যতা আমাকে সবসময় টেনেছে জীবনের মতো। আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছি অনন্ত নৈঃশব্দ্যের ভেতর। একটা পা শূন্যে তুলে ধরতেই আগের সপ্তাহে শোনা ইমামের খুতবা কানে ভেসে এলো: এভাবে চলে যাওয়াকে বলে আত্মহত্যা, মহাপাপ, পরিণতি অনন্ত জাহান্নাম। জাহান্নাম জায়গাটা শব্দহীন কিনা নিশ্চিত হতে পারিনি বলে পাটা টেনে নিতে হয়েছে। এরপর থেকে সবসময় বুঝেছি, আমি স্বাধীন না। আমি আমার নিজের বেঁচে থাকার কাছেই পরাধীন। এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কিছু হতে পারে না। স্বাধীন হতে হলে সৃষ্টিকর্তার শাসন ও দায় থেকে আলাদা হতে হবে। অবিশ্বাস? না, তাতে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। একধরনের বোঝাপড়া। নিজের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতাটুকু নিয়ে নেওয়া। লিখিতভাবে। 

একদিন ফজরের আজানের আগে সেই লেখাপড়া হলো। আমি কিছুক্ষণ পরেই সেদিন আজান দেব। জানালার বাইরে অপূর্ব আকাশ। অনন্ত স্লেট। তার ওপর স্বাক্ষর করে সৃষ্টিকর্তা আমাকে স্বাধীন করে দিলেন; তবে এক শর্তে। আমি মেনে নিলাম। আজান দেওয়ার আগ মুহূর্তে আমাকে সৃষ্টিকর্তা মুক্ত করে দিলেন তার সমস্ত দায় থেকে। তাঁর উজ্জ্বল স্বাক্ষর ভেসে উঠলো ভোরের আলো ফোটার আগে আকাশ আলো করে। সেই আলোয় অনেকে ভুল করেছিল সকাল হয়েছে ভেবে। আমি আজান না দিয়ে নেমে আসলাম মসজিদ থেকে। কিছুটা পথ এসে ফিরে গেলাম মসজিদে, নামাজ পড়তে। মনে হলো, এতোদিন আমি পরাধীন হয়ে, দায় থেকে, ভয়ে এবং লোভ থেকে নামাজ পড়েছি, আজ আমি নামাজ পড়বো আমার একান্ত ইচ্ছা থেকে। এর জন্য সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কোনো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির যোগ নেই। আমি সেই প্রথম মুক্ত হয়ে নামাজ পড়ি। পৃথিবীর ইতিহাসে এভাবে ঈশ্বরের কাছে দায়মুক্ত হয়ে আর কেউ কোনোদিন প্রার্থনা করেছে কিনা জানি না। সেদিন কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, বিশ্বাসেরও একধরনের শব্দ আছে। এই শব্দ কেটে যাওয়ার পর ভেতরে যে স্তব্ধ ভাব তৈরি হয়, সেটা সমুদ্রের গর্জনের সমান নৈ:শব্দ্য। আমার তখনই মরে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছি আরও কতটা সময়, স্বাধীন সিদ্ধান্তে বেঁচে থাকার লোভে। 

ফের একদিন সিদ্ধান্তটা নিলাম শব্দহীন অবস্থায় চলে যাওয়ার। এবার একটা পা অনায়াসে চলে গেলো। জাহান্নামের ভয় আর নেই। আরেকটা পা চলে যেতো, যখনই যাবে তখনই মায়ের চেহারাটা ভেসে উঠলো, মনে হলো মা ডাকছে, অনন্ত আকাশজুড়ে মায়ের মুখ, পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল পরিণত হয়েছে মায়ের কণ্ঠস্বরে। সেটাও কাটিয়ে উঠতে পারলাম, কিন্তু তৎক্ষণাৎ একটা প্রজাপতি উড়ে এসে বসলো কাঁধে। আমার ভেসে ওঠা পা জড় হয়ে মিশে গেলো অন্যপায়ের সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তার সেই শর্তের কথা মনে পড়ে গেলো। তাঁর সমস্ত দায় থেকে মুক্ত হওয়ার বিনিময়ে আমাকে তিনি বেঁধে দিয়েছেন মায়ার বন্ধনে। মায়া আমাকে এভাবে একান্তে পরাধীন করে তুলবে, সেদিন তা বুঝতে পারিনি। অনন্তকাল আমি মায়ার বন্ধনে বেঁধে থাকবো, এই চুক্তিতে ঈশ্বরের বন্ধনমুক্ত হয়েছি। মায়ার বন্ধন থেকে এখন মুক্ত হবো কীভাবে? 

একদিনেই তিনটা প্রজাপতি, দুটো ফড়িং, একটা টুনটুনি পাখি হত্যা করার পর মায়ের সিঁথির কাছে গিয়ে বসলাম। মা তখন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। মাথায় হাত দিতে গিয়ে না দিয়ে বললাম, মা তুমি কবে মারা যাবা? আমার এমন প্রশ্নে একটু অবাক না হয়ে মা বললো, আর পঁয়ষট্টি দিন পরে। পঁয়ষট্টি দিনে কমাস হয় সেই প্রশ্নটা করে কোনো উত্তর পাইনি। মা মারা গেলো কিছুদিন পর। মায়ের মৃত্যু আমার ভালো লাগেনি। ক’দিন অবশ হয়ে পড়েছিলাম। যে মৃত্যুর দিনক্ষণ আগেই ঠিক করে দিয়েছিল ডাক্তার, সেই মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবার মতো বোকা আমি নই। আমি কিছু না করলেও মা মারা যেতেন। দু তিনদিন বেশি বাঁচতেন হয়তো। কিন্তু মাঝরাতে মনে হলো, মা ৬৫ দিনের কথা বলেছেন। এর বেশি তার বেঁচে থাকা ঠিক হতো না। এবার আমি আমার কাছে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পরীক্ষা নিতে পারি। লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়