শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও) ◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০৪ রাত
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:০৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্ব ঐতিহ্য শান্তিনিকেতনের দায়-দায়িত্ব বাড়বে না কমবে?

প্রবির বিকাশ সরকার

প্রবির বিকাশ সরকার: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ইউনেসকো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রাতৃবন্ধনের তীর্থস্থান শান্তিনিকেতনকে বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে কবিগুরুকেই সম্মানিত করেছে। এই শুভলগ্নে অভিনন্দন জানাই রবীন্দ্রপ্রিয় সকল মানুষকে। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষকে। অজপাড়াগাঁ বোলপুরের শান্তিনিকেতনে ১৯০১ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মচর্যাশ্রম থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় গড়েতোলা রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই এক দীর্ঘ সুকঠিন লড়াইয়ের ইতিহাস। সম্ভবত, বিশ্বে এটাই প্রথম কোনো বিরল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বঐতিহ্যের তালিকায় মর্যাদার স্বীকৃতি পেলো। আমার পরম আনন্দ হচ্ছে এই কারণে যে, শান্তিনিকেতনের সঙ্গে জাপানের গভীরতম সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্রহ্মচর্যা বিদ্যালয়ের প্রথম বিদেশি ছাত্র ছিলেন জাপানি তরুণ বৌদ্ধভিক্ষু হোরি শিতোকু। তিনি জাপানের কালজয়ী মনীষী, শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিনের শিষ্য ছিলেন এবং তাঁর ঐতিহাসিক ভারতভ্রমণের সঙ্গী হয়েছিলেন ১৯০২ সালে। 

শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ নিজে সাগ্রহে শিতোকুকে তাঁর সদ্যপ্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্র করে নেন। শিতোকু শিক্ষাগুরু বিধুশেখর শাস্ত্রীর কাছে সংস্কৃতভাষা শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন সদ্ধর্ম বৌদ্ধধর্মের উৎস অনুসন্ধানের সংকল্পে। তারপর সারাভারত পর্যবেক্ষণে বের হয়ে লাহোর ভ্রমণকালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ধনুষ্টংকার রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অমূল্য দিনলিপিটি জাপানি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন জাপানশীর্ষ রবীন্দ্রগবেষক দেশিকোত্তম কাজুও আজুমা। তিনি এবং তাঁর মহীয়সী সহধর্মিণী মাদাম কেইকো আজুমা মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন রবীন্দ্রঅন্তপ্রাণ। তাঁদের বহু অবদান এই শান্তিনিকেতনে রয়েছে। বিশেষ করে, কবিগুরুর স্বপ্ন ‘জাপান ভবন’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। ‘জাপান ভবন’ তথা ‘নিপ্পন ভবন’ প্রতিষ্ঠার অম্লমধুর ইতিহাস আমি লিখেছি বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক কাজুও আজুমার ভাষ্য অবলম্বনে। আমার রচিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও জাপান: শতবর্ষের সম্পর্ক’ শীর্ষক গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত আছে। 

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভাতৃবন্ধনের আরাধনাস্থল হিসেবে অনেক আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করেছেন বিভিন্ন দেশে পরিভ্রমণের সময়। জাপান তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯১৬ সালে প্রথম জাপান ভ্রমণকালে প্রভাবশালী শিল্পপতি রবীন্দ্রভক্ত শিবুসাওয়া এইইচি ব্রহ্মবিদ্যালয়ের জন্য তৎকালীন ২০০০ ইয়েন চাঁদা দিয়েছেন কবিগুরুকে। এখন হিসেব করলে বিশাল অঙ্কের টাকা। ১৯২৪ সালে জাপানপ্রবাসী মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে ভারতীয় প্রবাসীরা অনেক টাকা চাঁদা তুলে প্রদান করেন কবিকে তৃতীয়বার জাপান ভ্রমণকালে। আমার বিশ্বাস এই পর্যন্ত বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে জাপানিদের সংখ্যাই বেশি হবে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত জাপান থেকে কতজন ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পুরোহিত, রাজনীতিবিদ, পর্যটক শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন তার কোনো হিসেব নেই। 

ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য হওয়ার অর্থ শান্তিনিকেতন প্রশাসন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনেক দায়দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া। সেই দায়িত্ব কার্যকরীর প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত পরিবেশ সৃষ্টি করা, কারণ এখন থেকে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। সেজন্য পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। উদাসীন হলে ভারতের শুধু নয়, ইউনেস্কোরও মর্যাদাহানি হবে। প্রতিষ্ঠাতা কবিগুরুর তো হবেই। এই বিষয়ে কতোখানি সচেতন কর্তৃপক্ষ তা প্রশ্নবিদ্ধ। উল্লেখ্য যে, বহু বছর ধরে শান্তিনিকেতন জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন এবং বিশৃঙ্খলা চলছে। সাম্প্রতিককালে শান্তিনিকেতনেরই ছাত্র নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে নিয়ে উপাচার্য যে অপকাণ্ড করেছেন তাতে অনেক জাপানি নাগরিকও ব্যথিত হয়েছেন। জাপানের সঙ্গে অমর্ত্য সেন এবং তাঁর মাতামহ স্বনামধন্য পণ্ডিত এবং বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ক্ষীতিমোহন সেনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তিনি জাপান ভ্রমণ করেন। অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনেই জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর মাতা অমিতা সেন জাপানের জুউদোও প্রশিক্ষক সানো জিননোসুকের কাছে জুউদোও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন যখন বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। 

মানুষের সমস্যা-সঙ্কট আছে, সমাধানের নানা শোভন পন্থাও রয়েছে। সেই শোভনতা রক্ষা করাও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশরক্ষার নামান্তর। এটা কমন সেন্সের ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার মানের দিকে নজর দেয়া জরুরি। চলমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তিশিক্ষার প্রসার ঘটানো অতিপ্রয়োজন প্রচলিত বিষয়ের পাশাপাশি। এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা। তৃতীয়ত, একুশ শতকে অচল ভারতীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাব থেকে সমগ্র শান্তিনিকেতনকে মুক্ত ও নিরাপদ রাখা। চতুর্থত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি, সমতা, প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চা এবং তৎসম্পর্কিত উৎসব-সমাবেশ, আলোচনা ও সেমিনারের আয়োজন বৃদ্ধি করা। যা ছিল বিশ্বপথিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজীবন আরাধনা। পঞ্চমত, সকল অপছাত্র-ছাত্রী, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, মেধাহীন শিক্ষকদেরকে অনতিবিলম্বে বিদায় করে দেয়া জরুরি। তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক ও গবেষকদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শিক্ষাদানের নীতিকে আরও শক্তিশালী করা। যথার্থ শিক্ষানুরাগী এবং মানুষগড়ার সংকল্পে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিকে উপাচার্য নিযুক্ত করা। নচেৎ, বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতির কোনো অর্থ থাকবে বলে আমি মনে করি না। লেখক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়