জিল্লুর রহমান: [১] হযরত আদম (আ.), যাকে নমুনা ছাড়া এবং কার্যকারণ নিয়ম ব্যতিরেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষের বংশধারাকে বিস্তৃত করা হয়েছে। [২] ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.)। যাকে মানুষ সৃষ্টির নিয়ম ভেঙে দুনিয়াতে পয়দা করা হয়েছে, এখানে আল্লাহ স্বয়ং তাঁর প্রাকৃতিক আইন ভেঙ্গে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন। [৩] হযরত মুহাম্মদ (সা.) যাঁকে নূর হিসেবে সৃষ্টি করে, রূপান্তরের মাধ্যমে ‘বাষার’ রূপ দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ জন্যেই কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাকে সৃষ্টিকূলের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি’ এখানে প্রেরণ শব্দ এসেছে, বলা হয়নি রহমত হিসেবে সৃষ্টি করেছি। কারণ নবিজি (সা.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে সৃষ্টির সূচনাতেই। আর প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে দুনিয়াতে ‘বাষার’ রূপে প্রেরণ করা হয়েছিলো সেই মহান সৃষ্টিকে।
আবার ‘আনা বাশারুম মিসলুকুম’ আমি তোমাদের মতোই মানুষ (রূপক মানুষ) বলতে আল্লাহ হুকুম করলেন। অনেকেই দলিল দিয়ে থাকেন এই আয়াতে তোমাদের মতো মানুষ বলতে নাকি মাটির মানুষ বুঝানো হয়েছে, আবার কেউ কেউ বলেন ‘বাষার’ বলতে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মানুষদের বুঝানো হয়েছে, কিন্তু এই মতও সঠিক নয়। উচ্চ মর্যাদা বলতে পবিত্র কোরানে আল-আলীন শব্দটি এসেছে, সূরা আল আরাফে শয়তানকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইবলিস আদমকে সিজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিলো, না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন কেউ’। ‘বাষার’ শব্দ দ্বারা মাটি বুঝানো হয়েছে, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আর দশজন মানুষের দেহের যে উপাদান সেই উপাদানে মানুষ রূপেই রাসুল (সা.) কে দুনিয়াতে প্রেরন করা হয়েছে। বিষয় হচ্ছে মানুষের সকল উপাদান যা পদার্থ হিসেবে বিবেচিত, এই পদার্থের প্রতিটি কনিকাতেই আল্লাহর সৃষ্ট নূরের উপস্থিতি বিদ্যমান, অর্থাৎ প্রতিটি মানুষই সিফাতি নূরের সৃষ্টি। বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব জানা থাকলে এটি পরিষ্কার হবে যে কারো কাছেই। ‘বাষার’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছিলো জিবরাইল (আ.) এর ক্ষেত্রেও, যখন তিনি মারিয়াম (আ.) কাছে মানুষ রূপে এসেছিলেন অথচ তিনি নূরের তৈরি ফেরেশতা।
উক্ত আয়াতে মিসলুকুম শব্দটির পরিবর্তে ‘আসলেকুম’ শব্দটির ব্যবহার হহলেও সমস্যা ছিলো না, এতে বাক্যটি পূর্নাঙ্গই হতো, ব্যাকরণগত সমস্যা ছিলো না। যেহেতু নূরকে মানুষের রূপ দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে, তাই মিসলুকুম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সরাসরি মানুষ হলে এখানে ‘আনা বাশারুম আসলেকুম হতো। মানুষ বুঝাতে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন ইনসান এবং নাস শব্দ দুটো। কুরআনে বলা হয়েছে, আমি একটি নূর এবং কিতাব পাঠিয়েছি’, দেখুন এখানেও শব্দটি প্রেরণ, সৃষ্টি নয়। আল্লাহ এবং রাসুল্ললাহ (সা.) এর হাক্বিকত না জেনে আমরা কেন মানুষদের বিভ্রান্ত করছি? আক্বিদা হচ্ছে বিশ্বাসগত বিষয়, কিন্তু বিশ্বাসকে জ্ঞানে রূপান্তর না করা পর্যন্ত সেটি নিশ্চিত বিশ্বাস বা জ্ঞান হতে পারেনা। আক্বিদায় বিভ্রান্তি থাকলে ইবাদত আমল সব কিছুই বিফলে যাবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, নিশ্চিত জ্ঞান এবং দৃঢ় ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যাবার তাওফিক দান করুন। লেখক: সাংবাদিক