শোয়েব সর্বনাম: কবি হয়েও রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন কাজী নজরুল ইসলাম। একবার ইলেকশন করতে ভোটে দাঁড়ায়ে গেলেন নির্মলেন্দু গুণ। তার মার্কা কুমীর। ক্যাম্পেইন বিষয়ক কাজ করতে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি পুকুর কেটে কুমীর নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে সব টাকাপয়সা খরচ করে ফেলেন। পরে ঢাকা থেকে আর্টিস্ট নিয়ে উইড কিনে দেওয়া হয়। জিনিসটা নিম্নমানের হওয়ায় আর্টিস্ট কুমীরের পরিবর্তে টিকটিকি এঁকে ভরে ফেলেন। গুণের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
তবে ক্ষমতার রাজনীতিতে কবিদের ইতিহাস শুধু ব্যর্থতার গল্প নয়। কবি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হতে পেরেছিলেন, টানা অনেকদিন দেশ চালাইছেন তিনি। ফরহাদ মজহারও ওইরকম একটা একটা ধান্দায় আছেন। তবে এই দুইজনের মধ্যে একটা বেসিক পার্থক্য আছে। এরশাদ কবিতা লিখে পত্রিকা অফিসে পাঠায় দিতেন। বড় বড় পত্রিকার প্রথম পাতায় সেই কবিতা ছাপা হতো। দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস ও চায়ের দোকানগুলাতে তার কবিতা নিয়ে আলাপ আলোচনা হতো। তিনি কবিতার প্রচারের স্বার্থে ক্ষমতাকে ব্যবহার করতেন।
আর ফরহাদ মজহার কবিতাকে ব্যবহার করতেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। মোহাম্মদ রফিক মরে গেলেন। ফরহাদ মজহার তাকে নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট দিলেন। কবিতা নিয়ে একটা অক্ষরও লিখলেন না। যতটুকু টের পাই, তিনি এখন আর কবি অবস্থায় নাই। শহীদ কাদরি একটা সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, কবিতা একসময় কবিকে ছেড়ে চলে যায়। ফলে, কবি সাহিত্যিকদেরও অবসর নেয়ার আছে। কাদরি বিদেশ যাওয়ার সময় ঘোষণা দিয়েই অবসর নেন। অবশ্য এরপরেও তিনি কিছু কবিতা লিখার চেষ্টা করেন, ওইগুলা না লিখলেও চলতো। সাহিত্যমানহীন ও অযথা পুণরাবৃত্তি।
ফরহাদ মজহার চালাক আছেন। তিনি অবসর নিলেও ঘোষণা করেন নাই। কবিতা তারে অনেক আগেই ছেড়ে গেছে। রাজনীতির বাইরে এখন তার আর কোন আইডেন্টিটি নাই। ফলে, ফরহাদ মজহার কখনো এরশাদকে ছাড়ায়ে যেতে পারবেন, সেইটা আমার মনে হয় না। এরশাদকে বরং আমার তুলনামূলক মেধাবি এবং সাহিত্যের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে হইছে। আমার সন্দেহ, এসব কারণেই তিনি ক্ষমতার শীর্ষে পৌছাইতে পারলেও ফরহাদ মজহার খুলনা পর্যন্ত গিয়েই ধরা খেয়ে গেছেন। কবি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বহুলপঠিত হোক। লেখক: কথাসাহিত্যিক