শিরোনাম
◈ কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত ◈ ৯/১১ হামলার ২৪ বছর: নিহতদের স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রে শোক ও শ্রদ্ধা ◈ ৩৩ বছর পর ভোট জাকসুতে—ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৫ পদে লড়ছেন ১৭৭ প্রার্থী ◈ নরসিংদীতে তুচ্ছ ঘটনায় আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা ◈ চিঠি লিখে ভারতকে একহাত নিলেন নেপালের পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ◈ লাইফ সাপোর্টে ফরিদা পারভীন ◈ এ‌শিয়া কাপ, ৪ ওভার ৩ বল খে‌লে আরব আ‌মিরাত‌কে হারা‌লো ভারত ◈ আগুন জ্বলে উঠতে পারে ভারতেও, শিবসেনা নেতার সতর্কতা ◈ অবশেষে খোঁজ মিললো ক্ষমতাচ্যুত নেপালি প্রধানমন্ত্রীর ◈ ডাকসু নির্বাচন: শিবিরকে অভিনন্দন জানিয়ে দেয়া পোস্ট সরিয়ে ফেললো পাকিস্তান জামায়াত!

প্রকাশিত : ২৫ জুলাই, ২০২৩, ০১:৩৪ রাত
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০২৩, ০১:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছাত্র-রাজনীতি মানে কী? 

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ছাত্ররাজনীতি বলতে আসলে আমরা কী বুঝিÑ এটাই পরিষ্কার নয়। ছাত্ররা কি কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করতে পারে? আর যদি করে, তাহলে কি তার মেরুদণ্ড গড়ে উঠবে? ছাত্ররা কি কাউকে ক্ষমতায় নিতে বা ক্ষমতায় রাখতে কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হিসাবে কাজ করে সেই ছাত্ররা কি নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারবে? ছাত্ররা করবে ছাত্রদের জন্য রাজনীতি। আমি নিজে যখন ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়েছি সেখানকার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি সিনিয়র ছাত্ররা নতুন ছাত্রদের কীভাবে হেল্প করে। নতুন যারা ক্যাম্পাসে আসে তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, বাসা খুঁজে দেওয়া, এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসা ইত্যাদি কল্যাণকর অনেক কাজ করে। আমাদের দেশের ছাত্র নেতারা বা সিনিয়র ছাত্ররা কি এইসব কাজ করে? যদি এইসব ভালো কাজ করত তাহলে আমিও ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকতাম। তারা বরং গেস্ট রুমে নিয়ে সধহহবৎ শেখানোর নামে টর্চার করে। জোর করে মিছিলে নিয়ে যায়। নবাগতরা যারা মাত্র গ্রাম থেকে জীবনের প্রমবার ঢাকায় এসেছে তাদের ভালনারেবিলিটির সুযোগ নেয়। এদেরই হলে একটা সিট্ পাওয়ার রাইট সবচেয়ে বেশি। আর আমরা কি করি যত বেশি সিনিয়র হলে সিট্ পাওয়ার রাইট তার তত বেশি। এটা হতে পারে না। আগে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের থাকার জায়গা নিশ্চিত করে যদি কিছু খালি থাকে সেখানে সিনিয়ররা থাকতে পারে। 

ছাত্র রাজনীতি মানে কী? ছাত্র রাজনীতি হলো সরকার যেন শিক্ষায় যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ দেয় তার জন্য জোরালো দাবি করে সরকারকে বাধ্য করা। তাদের চোখ কান খোলা রাখা যেন কেউ যোগ্য মানুষদের রেখে অযোগ্য দলান্ধদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত না করা হয়। তাদের রাজনীতি হওয়া উচিত আবাসিক ব্যবস্থা যেন এমন হয় যাতে সবার একটা পড়ার টেবিল থাকে, ঘুমানোর একটা বিছানা থাকে, কাপড় রাখার একটা ওয়ার্ডরোব থাকে। আমাদের ছাত্র রাজনীতি কি এইসব করে? ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি মানে ছাত্রদের ভিতর লোভ ঢুকিয়ে দেওয়া। দেশে অন্যায় হলে ছাত্ররা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। আমাদের ছাত্ররা কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে? প্রতিবাদে নামার আগে কে অন্যায় করেছে সেটা দেখে। নিজ দলের কেউ অন্যায় করলে প্রতিবাদতো করবেই না উল্টো অন্য কেউ করলে তাকে জোর করে থামিয়ে দিবে। ছাত্র জীবনে যারা এইসব শিখে তারা বড় হয়ে যখন দেশের হাল ধরবে তারা কেমন কাজ করবে? কিছু ছোট খাটো ছাত্র সংগঠন আছে যারা সত্যি সত্যি ছাত্র রাজনীতি করে। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দাবি জানায়। কিন্তু তারা এতই ছোট যে এদের ইমপ্যাক্ট তেমন নেই। তাদের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে ওই দুর্বৃত্তপনা রাজনীতির সুযোগ রেখে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার পক্ষে আমি নই। ৫২ বছর ধরেতো এই ঘুনে ধরা ছাত্র রাজনীতি দেখলাম। এরা ছাত্রাবস্থাতেই সিট্ দখল, মারামারি ইত্যাদি শিখে যায়। দিন যত যাচ্ছে ছাত্র রাজনীতির মান কি বৃদ্ধি পাচ্ছে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি ছাত্র সংসদগুলো চালু থাকতো এবং ক্ষমতা কেন্দ্রিক বা লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি না থাকতো আমি ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকতাম। তাতো হচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তপনা থেকে মুক্তির একটিই উপায় ছাত্র রাজনীতি সামিয়ক বন্ধ করে দেওয়া। ক্ষমতাকেন্দ্রিক মূল রাজনীতির ক্যাডার প্রোডাকশনের সুতা কেটে দেওয়া। তখন বড় দুই দল বুঝতে পারবে ক্ষমতায় নিতে বা ক্ষমতা থেকে নামাতে তাদের পেছনে কোনো ঘুনে ধরা পচে যাওয়া ক্যাডার বাহিনী নেই। তারা তখন ভালো রাজনীতি শুরু করবে হয়ত। এই সুতাটা কেটে দিলে দেশ বদলে যাওয়ার একটা সুযোগ হবে। আমরা কেন ছাত্রদের বুইড়াদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করবো? দেশ চালানোর দায়িত্ব এখন আমাদের। সমস্যা থাকলে সমাধানের দায়িত্ব আমাদের। অন্যায়ের প্রতিবাদের দায়িত্ব আমাদের। ছাত্রদের কাজ লেখাপড়া করা। লেখাপড়া করে সুনাগরিক হয়ে তারপর দেশের হাল ধরা। তার আগেই তাদের চরিত্রকে নষ্ট করলে দেশ সামনে আগাবে না। ছাত্রাবস্থায় তাদের নষ্ট করছি বলেই তারা বড় হয়ে দুর্নীতিবাজ হয়, ধান্দাবাজ হয়, টাকা পাচারকারী হয়। অথবা নিরীহ হলে এমন চাকুরি খুঁজে যেই চাকুরিতে ঘুষ দুর্নীতির সুযোগ আছে। এইভাবে দেশ চলতে পারে না।
 লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়