শিরোনাম
◈ উপজেলায় প্রকাশ্যে ভোট দেয়ায় এমপি হাফিজ মল্লিককে ইসিতে তলব  ◈ লুর ঢাকা সফরে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসানীতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আব্দুল্লাহ  ◈ মঙ্গলবার কলম্বো থেকে ঢাকা আসছেন ডোনাল্ড লু ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে র‌্যাব ও ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বৈঠক ◈ অন্যকে দিয়ে সাজা খাটানো সেই যুবলীগ নেতা নাজমুল কারাগারে ◈ দলীয় বিভাজন ভুলে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান মির্জা ফখরুলের ◈ মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা অবৈধ: হাইকোর্ট  ◈ শহীদ মিনারে হায়দার আকবর খান রনোকে গার্ড অব অনার, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রকাশিত : ১১ জুলাই, ২০২৩, ০৪:৩৩ সকাল
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২৩, ০৪:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দাম্পত্য বিচ্ছেদ বলিদান: সমাজের এক অমানবিক পরিণতি 

শামীম ফাতেমা মুন্নী

শামীম ফাতেমা মুন্নী: ডিভোর্স। সহজ বাংলা ভাষায় যার নাম বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা আরবীতে তালাক। পাশ্চাত্য সমাজের মত ইদানিং প্রাচ্যে ও এই সামাজিক ব্যাধিটির রেশ লেগেছে মারাত্মক আকারে,  বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। আমাদের শ্যামল দেশে পারিবারিক বন্ধনকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো, মান্য করা হতো। 

কথায় আছে, যে সহে ,সে রহে। এখন কি আর সে যুগ আছে?  ডিজিটাল যুগ, স্মার্ট যুগে এসব কেউ আর মানে না। এখন যুগ হচ্ছে -থাকলে থাকো , না থাকলে নেই- এরকমই নারী-পুরুষ উভয়ের  মন-মানসিকতা এমন ।

আসলে অস্থির এই যুগে অভিভাবকদের অত্যন্ত যত্নশীল হওয়া  উচিত- প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি সন্তানদের পারিবারিক মূল্যবোধ শিখানো, প্রতিটি সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য।
ঠুনকো কারণে সম্পর্কের প্রতি বীতশ্রদ্ধ না হয়ে ধৈর্য্য  প্রদর্শনের মাধ্যমে তা সমাধানের পথ বের করার জন্য অভিভাবকরা যেন উস্কানিমূলক বক্তব্য  না দিয়ে আশার আলো দেখান। সন্তানদের হতাশার পথ থেকে সরিয়ে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান ।

তবে এর ব্যতিক্রমও যে নেই তা কিন্তু নয়। ধৈর্য্য ধারণ করে সংসার টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মত কঠিন কিন্তু ভালোবাসায় বিশ্বাসী দম্পতি এখনো আছে, যারা শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। সংসারটি যদি টিকে যায়, আর যদি সন্তান থাকে- তাহলে সন্তানদের ভবিষ্যত ভেবেও সমঝোতায় আসার চেষ্টা করে। কিন্তু সমাজে এমন সংখ্যা অনেক কম ।

দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী একের প্রতি অপরের শ্রদ্ধাবোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতাবোধ প্রমাণ করে তাদের দাম্পত্যের ভালোবাসার গভীরতা। 

আজকাল  কথায় কথায় সংসার ভাঙছে ঠুনকো সব কারণে, ধৈর্য্য ধরে খানিক অপেক্ষার সময় কারো নেই যেনো। 

যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অকারণ বিচ্ছেদ সত্যিই বেদনাদায়ক।

মতের অমিল, ইগো প্রবলেমে যদি আলাদাই হবেন তাহলে সেসব দম্পতির কোনো অধিকারই নেই সন্তান জন্মদানের!  

তাদের কোনো অধিকার নেই ‘ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান’ সাইনবোর্ডটি একজন সন্তানের গায়ে ঠুকে দেওয়ার সারা জীবনের জন্য। 

তারচেয়ে লিভ টুগেদার করুন, ভালো লাগলে থাকবেন, নতুবা সরে গিয়ে নতুন কাউকে খুঁজে নেবেন। বাবা-মা হতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, ভাবতে হয় সন্তানকে নিয়ে, নিজেদের নিয়ে আর নয়। 
শখের বশে পুতুল খেলার মতো বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেন, আবার ইচ্ছে করলো না, মিললো না মত, তথাকথিত সেপারেশন আর ডিভোর্স এর শরণাপন্ন হলেন। উচ্চ শিক্ষা আপনাদের এই শিখিয়েছে? তাহলে যুগল জীবন নিয়ে পাঁচ বছর এক্সপেরিমেন্ট করে তারপর সন্তান নিতেন! 

কেন সন্তানকে তার সমস্ত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করবেন? বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা- ভালোবাসা প্রতিটি সন্তানের প্রাপ্য। বাবা- মায়ের সম্পদে সন্তানের হক। কেন স্নেহের পুতুলটাকে জীবনের জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে ধাক্কা দিয়ে তাকে জ্বলতে দিয়ে সরে যান আপনারা?  

কেন পনেরো বছর বয়সের সন্তানের লাশ সামনে নিয়ে ডিভোর্সী বাবা-মা শোকে পাথর হয়ে  বসে থাকেন? তাদের বুকের মাণিক তো দাদাবাড়ি আর নানা বাড়ি করেই ছোট জীবন কাটিয়ে দিলো। জানাজাও হলো দুই জায়গাতেই রশি টানাটানির মত অবস্থায়। অনুশোচনা কি তখন একটুও তাদের স্পর্শ করে না? আরো একটু নিজেদের সংশোধন করার সময় কি দেওয়া যেত না নিজেদের ?

কেন চার বছরের ছোট শিশুকে বাবার নাম জিজ্ঞেস করলে সে তার নানার নাম বলে। বাবাকে চেনে না। বাবা কি তা সে বোঝে না! তার দুই বছর বয়সেই বাবা-মায়ের মনোমালিন্যের কারণে তাদের সংসার টেকেনি, সেই থেকে মা মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে আছে, এখনো বিয়ে করেনি আর। 
কেন পাঁচ বছরের সন্তানকে দেখার জন্য একজন বাবা বুক ভরা অস্থিরতা আর লুকোনো চাপা কান্না নিয়ে অপেক্ষা করেন- কখন তার ছেলেকে একপলক  দেখতে পাবেন, বুকে জড়িয়ে ধরবেন!
তার মা যে মিথ্যে ইগোর বশবর্তী হয়ে তথাকথিত সেপারেশনে গিয়ে ডিভোর্সের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নতুন জীবনের হাতছানিতে! বাবা এখনো প্রতীক্ষায় কখন তার সন্তানের মায়ের মারাত্মক এই ভুল ভাঙবে! 
আদৌ কি আর এই ভুল ভাঙে ? একবার আদালতপাড়ায় গেলে আর কি সমঝোতায় আসা যায়? তখন তো সমাজ-সংসার-মান- সম্মান-জেদ সন্তানের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়।

বিচ্ছেদই যখন শেষ গন্তব্য হয়ে যায়, তখন পারলে সাথে থেকে যান সন্তানকে সঙ্গ দিয়ে। জীবনে বিয়ে কতবার করতে হয় একজন মানুষকে? অন্তত সন্তানের জীবন গড়া পর্যন্ত সাথে থাকুন।

নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এরকম হয়ে থাকে। মাধবীলতার মতো সন্তান আপনাকে জড়িয়ে বাঁচবে, বাবা-মা দুজনকেই বলছি, আপনি ও মায়ার আকর হয়ে থাকবেন সন্তানের জীবনে।

সমাজকে উপেক্ষা করুন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিন, সে সন্তানের কথা ভাবুন দয়া করে, বেলাশেষেও যে সন্তান ভুলতে পারে না  তার বাবা-মায়ের দেওয়া সেই উপাধি-- ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান, ১ম ঘরের সন্তান! এ এক নীরব কষ্ট  ।

আপনারা আপনাদের জীবন আর নতুন সঙ্গী নিয়ে সরে যান নতুন যাপিত জীবনে সুখী হওয়ার অভিনয় করে, আসলেই কি সুখী হন? 

একবারও গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছেন, তারপর কি যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে ঐ সন্তান পুরো জীবনকে জড়িয়ে নেয় বেঁচে থাকায়, দাম্পত্য বিচ্ছেদের বলিদান হয়ে ? 

কেন শেষ জীবনে সন্তানের কাছে অপরাধবোধ থেকে ক্ষমা চাইবেন কেঁদে কেঁদে আর তাকে ও কাঁদাবেন যন্ত্রণায় রক্তাক্ত করে? 

সময় তো পেয়েছিলেন অনেক, অথচ তখন ভাবেননি রক্তগরমের জোয়ারে!  আর  যখন শেষ মুহূর্তে  অক্সিজেনের প্রয়োজন, বিবেকের দংশনে ভুলে যাওয়া রক্তের স্মৃতি মনে পড়ে, তাকে খুঁজে ক্ষমা চাওয়াতেই কি সব ঠিক হয়ে যায়?  সর্ব শক্তিমান একজন আছেন, তিনিই সাক্ষী সবকিছুর, ফিরে যে যেতেই হবে তাঁর কাছে আমাদের সবার। 

নিজেকে পরিবর্তন আসলেই করা যায়। আমরা চাইলেই পারি নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে। কিন্তু আমরা করি না তা, জেদের কিংবা ইগোর বশবর্তী হয়ে--আমিই বা কম কীসে এই মনোভঙ্গি নিয়ে। 

তাই যৌবনের জোয়ারে ইচ্ছায় - অনিচ্ছায় কবুল বলার আগে ভাবুন দুজনেই শতবার, সন্তান জন্মদানের আগে ভাবুন সহস্রবার, মুখে তালাক বলার আগে জিভকে সংযত করুন, তালাকনামায় স্বাক্ষর করার আগে ভাবুন লক্ষবার, সন্তানকে বঞ্চিত করার আগে ভাবুন কোটিবার, বিবেকের দংশনে।
আমাদের দেশ-সমাজ-সংসার বিচ্ছেদের এই আগ্রাসী দংশন কাটিয়ে উঠুক, বোধোদয় হোক প্রতিটি যুগলের। শুভ্রতায়-স্বচ্ছতায় সুন্দর হয়ে উঠুক সবার জীবন, বুক জুড়ে থাকুক সবার ভালোবাসা। 

শামীম ফাতেমা মুন্নী: শিক্ষক, কবি ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়