শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০২৩, ০৩:৫৯ রাত
আপডেট : ২০ জুন, ২০২৩, ০৩:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ল্যাংড়া’, নাকি ‘হিমসাগর এবং আমার আমনীতি!

মোজাফফর হোসেন

মোজাফফর হোসেন: হিমসাগর না ল্যাংড়া? এই ‘আম প্রশ্নের’ উত্তর আমি গত ত্রিশ বছরেও খুঁজে পাইনি। যখন যেটা খাই, সেটাই প্রিয়। মোটা দাগে, আমনীতিতে আমার কোনো নীতি নেই। তবে পক্ষপাত আছে লক্ষ্য করেছি, মেহেরপুরের ল্যাংড়া আর হিমসাগর রাজশাহীর চেয়ে স্বাদু, একসঙ্গে খেলে সাধু অসাধু উভয়েই টের পাবেন। সাতক্ষীরার হিমসাগরও ভালো। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম্রপালি আর ফজলি। বিশেষ করে রাজশাহীর সুরমা ফজলি। নাটরের নারদ নদের তীরে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মোহন লাহীড়ি নামে একজন ব্রাক্ষ্মণ জমিদার ভারতের দাক্ষিণাত্য থেকে এই আমের চারা সংগ্রহ করে এনেছিলেন বলে জানা গেছে। রাজশাহীর গোপালভোগও (মেহেরপুরের তিলে বোম্বাই) বেশ, ইঁচড়েপাকা টাইপের, মৌসুমের শুরুতেই পেকে যায়। শোনা কথা, গোপাল একবার আমতর্কে রাজার সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর জোর করে তাকে এই আম এক বসাতে একশোটা খাওয়ানো হয়েছিল, সেই থেকে গোপালভোগ। তাই বোঝা যাচ্ছে, এই ভোগ ঠিক উপভোগ না। 

চাঁপাইয়ের অনন্য ক্ষিরসাপাত যেটা অনেকটা হিমসাগরের মতো। ক্ষিরসাপাত আশু জাতের আর হিমসাগর নাবি জাতের আম। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ভারতের নদীয়া ইত্যাদি এলাকার হিমসাগর আমের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের শাদওয়ালা বা শাদৌলা এবং রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের ক্ষিরসাপাতের প্রায় দিক থেকে মিল রয়েছে। আর আম্রপালি একটা হাইব্রিড জাতের আম। আম্রপালি রাজশাহীর আম-গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবিষ্কার শুনেছিলাম। অবশ্য নেট বলছে (নোট: শোনাকথা বা নেটকথা নিজ দায়িত্বে বিশ্বাস করতে হয়), উত্তর ভারতের (লখনৌ অঞ্চল) বিখ্যাত আম দুসেহরী এবং দক্ষিণ ভারতের অপর একটি বিখ্যাত জাত নীলম।  এই দুটির মধ্যে শংকরায়ণ ঘটিয়ে আম্রপালি জন্ম। ১৯৭৮ সালে আমটির নামকরণ করে ভারতে প্রথম ছাড় করা হয়েছে। জন্ম হোক যথাতথা, স্বাদ হোক ভালো। আম্রপালি আমার খুবই ভালো লাগে তবে হিমসাগর আর ল্যাংড়ার মতো না। মিশ্রস্বাদের এই আমটি দেরিতে আসে বলে তখন আর তুলনা করে খাওয়ার সুযোগ থাকে না। তখন, এক ক্লাসে একাই ছাত্র। 

ঢাকার আসার পর আমি প্রথম খাই হাঁড়িভাঙা আম। এটা রংপুরের আম। প্রায় ১০০ বছর আগে মিঠাপুকুরে সোহরাব আলী নামের একজন হাড়ি পাতিলের ব্যবসায়ী আম খেয়ে আমের আঁটিটি বাড়ির পিছরে ঝোপঝাড়ে ছুড়ে ফেলেন। আঁটিটি পড়ে একটি ভাঙ্গা হাড়ির মধ্যে গাছটি হয়, সেই গাছই এই আমের প্রথম গাছ। কলসভাঙার মধ্যে হলে নামটি কলসভাঙা হতো, কিংবা গ্লাসভাঙা বা প্লেটভাঙাও হতে পারত। আমাদের বাড়ির পেছনে একটা চারাগাছ হয়েছিল জুতোর ভেতর থেকে, কিন্তু সেই সময় নামকরণের এই চল ছিল না, ভাগ্যিস। সেই অর্থে হাড়িভাঙা আমাদের দেশি-আম। আঁটির আম মাত্রই তাই। কারণ অধিকাংশ কলমের আম এসেছে বেনারস, উত্তর কিংবা দক্ষিণ ভারত থেকে। মেহেরপুরের বিশ্বনাথ আম আর মল্লিকা আমও  আমার প্রিয়। বিশেষ করে বিশ্বনাথ আম ঘ্রাণের কারণে অনন্য। 

ছোটবেলায় একটা আম খুব প্রিয় ছিল ‘সরিখাস’। একটামাত্র গাছ ছিল আমার চাচার। আর কোথাও এই আম দেখিনি। আঁটির আম। দেখতে অপূর্ব, খেতেও এতই মজার যে লোকজন থেকে ‘সরে’ খেতে হত। দুধশাস, ধনচা, সিঁদুর এমন অনেক আম এখন কেবল স্মৃতিতেই আছে। তবে সাধারণত, আটির আম কোনো কদর পেত না বাড়িতে। এমনকি ছাগলেও খেত না। নিঃসন্দেহের কিছু কিছু আটির আম দারুণ স্বাদের হয়। শুধু একটু বেশি দাড়ি (আশ) থাকে ভেতরে। এটা আমাদের বাঙালি চরিত্রেও আছে, বাঙালি আম সেই লেগাসি বহন করছে। কোনো কোনোটার আটি তালের আটির মতো হয়। খাওয়ার পর দাঁতের ভেতর থেকে আমের ‘চুল’ বের করতে হয়। খেতে তিন মিনিট, আশ বের করতে ত্রিশ মিনিট। 

আমাদের বাড়িতে সবচেয়ে বড় আমগাছটা ছিল আটির। হাজার হাজার আম হত। পাড়াশুদ্ধ খেয়ে শেষ করা যেত না। আমি গাছে উঠে টিপে টিপে গাছপাকা আম খেতাম। টেপাটিপির অভ্যাসটা কাল হলো সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মনোযোগ দিয়ে আম টিপতে টিপতে (পাকা আম খোঁজ দ্য সার্চ) গাছের একটা ডাল ভেঙে পুকুরের কিনারে পড়লাম। একটা হাত গেল মাঝ থেকে ভেঙে। ভেঙে মানে একেবারে উল্টে। সেই হাতের চিকিৎসা করাতে আমার প্রথম কুষ্টিয়া শহরে আসা। হাতটা এখনো ঠিকমতো সোজা হয়নি। না-হোক, আমের কারণে আমি শুধু হাত না স্বভাবটাও বাকা করতে রাজি আছি।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়