শিরোনাম
◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ ◈ অনিশ্চয়তার মাঝেও পি‌সি‌বি চায় বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে আসুক ◈ এই প্রথম হ‌কি বিশ্বকাপে আম্পায়া‌রিং করবেন  বাংলা‌দে‌শের সে‌লিম ও শাহবাজ  ◈ পারভেজ হত্যায় গ্রেফতার অভিযুক্ত টিনা ◈ রাফালের ধ্বংসাবশেষ সরানোর প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই! ◈ যুদ্ধক্ষেত্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ হারোপ ড্রোনের বিশেষত্ব কী? (ভিডিও) ◈ এখানে আরেকটা বেয়াদব আছে, সে শহীদ ফ্যামিলিকে ননসেন্স বলেছে: সংবাদ সম্মেলনেই শহীদ ইয়ামিনের বাবা(ভিডিও) ◈ দুপুরের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি, জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি ◈ ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব, সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ: উপদেষ্টা মাহফুজ

প্রকাশিত : ০৭ জুন, ২০২৩, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ০৭ জুন, ২০২৩, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছয় দফায় অভিনবত্ব ছিলো কি?

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (১৯১১-১৯৬৯) ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘বাস্তবতার আলোকে ৬-দফা’ শিরোনামের (৪ মার্চ ১৯৬৬) কলামে লিখলেন, আর যে যাই বলুন, আমি কিন্তু এই ৬-দফা পরিকল্পনায় নতুন কিছুই দেখি না। পরিকল্পনাটির সঙ্গে কেউ কেউ একমত হতে পারেন। আবার কেউ হয়তো ভিন্নমতও পোষণ করতে পারেন। তাই বলে, একথা কেউ বলতে পারেন না যে, এই কর্মসূচিতে যা বলা হয়েছে, তিনি আগে কখনও তা শোনেননি। মুজিবুর রহমানকে এতটুকু কৃতিত্ব দেয়া চলে যে, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার আলোকে জাতীয় সমস্যাবলি যখন নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময় তিনি বিস্তারিত কর্মসূচিটি প্রণয়ন করে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।

সময়ের নিবিষ্ট দর্শক মানিক মিয়া ৬ দফা নিয়ে যা বলেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার তথ্য ও যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। ছয় দফা বাঙালির বাঁচার দাবিÑ মুক্তিসনদ। ভুলে গেলে চলবে না যে, এ কর্মসূচি আকস্মিক কোনো ব্যাপার ছিলো না; মানিক মিয়া যেন সে ইতিহাসের পটভূমির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে আমরা ছয় দফা কর্মসূচিটি পেয়েছি। কিন্তু স্মর্তব্য, তিনি তো প্রথমত ও প্রধানত বাঙালির নেতা ছিলেন (বিশ্বমানবতার প্রেক্ষিতে তিনি বিশ্ববন্ধু হিসেবেও স্বীকৃত); আর সে কারণে তাঁর রাজনীতি ও জীবনসাধনা ছিলো বাঙালিকে ঘিরেই। সুতরাং ছয় দফা বাঙালির রাজনৈতিক ঐতিহ্য-উৎসারিত হবার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। উপরন্তু মানিক মিয়ার মতো বঙ্গবন্ধুও চলমান ঘটনাবলির নিবিড় পাঠক ও পর্যালোচক ছিলেন। সুতরাং এ লেখায় আমরা ছয় দফা ঐতিহাসিক পটভূমিতে কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা দেখার চেষ্টা করবো।

কিছু মাইলফলকসম কর্মসূচি ঘটনার প্রেক্ষিতে ছয় দফার পটভূমি নির্দেশিত হয়। তবে সর্বক্ষণিকভাবে মনে রাখতে হবে, ছয় দফার আপাত লক্ষ্য ছিলো স্বায়ত্তশাসন, যা ইতিহাস পরম্পরায় বাঙালির প্রধান রাজনৈতিক দাবি হয়ে উঠেছিলো। তাদের বিশ্বাস ছিলো, স্বায়ত্তশাসন হলে অন্য দাবি মিটবে। ১৯২৯-এর মার্চ-এ দিল্লিতে জিন্নাহ্র সভাপতিত্বে মুসলিম লীগের অধিবেশন হয়। জিন্নাহ এই অধিবেশনে তাঁর চৌদ্দ দফা উপস্থাপন করেন। এই চৌদ্দ দফার অন্তত তিনটি দফার ছায়া আছে ছয় দফায়; দফা তিনটি হলোÑ ভবিষ্যতে সংবিধান হবে যুক্তরাষ্ট্রীয়, যাতে প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে অবশিষ্ট (residuary) ক্ষমতা। সমানভাবে সব প্রদেশকে দেয়া হবে স্বায়ত্তশাসন। প্রদেশের অনুমতি ছাড়া সংবিধানে কোনো পরিবর্তন করা হবে না।

১৯৪০-এর ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের ১৭ তম বার্ষিক লাহোর অধিবেশনে শের-এ-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি তখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রি। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন উত্তর প্রদেশের চৌধুরী খালিকুজ্জামান লাহোর প্রস্তাবের কোথাও ‘পাকিস্তান’ শব্দটি ছিলো না। তবে ২৪ মার্চ দ্য হিন্দু পত্রিকার শীর্ষ খবরে বলা হয়েছিলো, ‘পাকিস্তান রেজুলুশন অব দ্য মুসলিম লীগ’Ñ সেই থেকে লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব বলা শুরু হলো। উল্লেখ্য, পাকিস্তান শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী। ১৯৩৩-এর জানুয়ারিতে নাও অর নেভার নামে একটি পুস্তিকায় তিনি শব্দটি চয়ন করেন। কিন্তু এই পরিকল্পনায় যে যে ভূখণ্ড নিয়ে পাকিস্তান হবার কথা ছিলো, তাতে পূর্ব বাংলার কথা ছিলো না। এমনকি ১৯৩৬-৩৭ এ ইকবাল তাঁর জিন্নাহর কাছে লেখা চিঠিসমূহে যে পৃথক মুসলমান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন, তাতেও পূর্ব বাংলার কথা ছিলো না। তবে ১৯৩৭-এ তিনি তাঁর প্রস্তাব সংশোধন করে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলেন।

তবে উল্লেখ্য, লাহোর প্রস্তাবে সর্বপ্রথম সুনির্দিষ্টভাবে পূর্ব বাংলার কথা বলা হয়, এবং তা-ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে। এই প্রস্তাবে মুসলমানদের জন্য পৃথক ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহ’ গঠনের কথা বলা হয়। বাংলা ও আসাম নিয়ে পূর্বাঞ্চলে একটি রাষ্ট্র হবার কথা ছিলো। অন্যদিকে ছিলো পাঞ্জাব, সিন্দু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও কাশ্মির নিয়ে গঠিত অন্য একটি রাষ্ট্র। তবে লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পাকিস্তান হয়নি; হয়েছে দিল্লি প্রস্তাব (৯ এপ্রিল ১৯৪৬) অনুযায়ী। কারণ লাহোর প্রস্তাবের ‘রাষ্ট্রসমূহ’ দিল্লি প্রস্তাবে হয়েছিলো ‘রাষ্ট্র’, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রের পরিবর্তে হলো এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র, যা লাহোর প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। দিল্লি প্রস্তাবের উৎস জিন্নাহ্র মস্তিষ্ক ও আকাক্সক্ষা; জিন্নাহ্র ইচ্ছায় প্রস্তাবক ছিলেন সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গীয় মুসলিম লীগ প্রধান আবুল হাশিম এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন; জিন্নাহ্র একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পাকিস্তান হলে ছয় দফার প্রয়োজন হতো না। ছয় দফার শুরুতেই লাহোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। তবে সামগ্রিক বিচারে, বাংলাদেশের অভ্যুদয়  অনিবার্য ছিলোÑ ইতিহাস তাই বলে।

১৯৪৬-এ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তিন ধরনের প্রদেশসমূহ নিয়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবার কথা ছিলো। কেন্দ্রের ক্ষমতা ছিলো তিনটি ক্ষেত্রেÑ বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও মুদ্রানীতি। প্রদেশগুলোর (যারা ৩ গ্রুপে বিন্যস্ত) হাতে থাকতো অন্যান্য ক্ষমতা। মওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি (১৮৭২-১৯৪৪) এবং মওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৮) -এর ভাষ্যমতে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার উৎস ছিলো তাদের প্রণোদনা। তবে জিন্নাহ এই পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত হলেও, কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে সবকিছু ভেস্তে যায়।

পাকিস্তানের বিকৃত জন্মের প্রেক্ষিতে স্মর্তব্য শেখ মুজিবুর রহমান-এর মন্তব্য (১৬ আগস্ট; ভবানিপুর সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেল পূর্ব বাংলার তরুণদের প্রতি), ‘মিঞারা ঢাকায় যাইবেন না। ওই মাউরাদের সাথে বেশিদিন থাকা যাইব না। এখন থিকাই কাম শুরু করতে হইব।’ ‘মাউরাদের’ সাথে আমরা ছিলাম ২৪ বছর ৪ মাস ৩ দিন। ১৯৪৭-এর আগস্ট মাসে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, ‘বর্তমানে কাঠামো নিয়ে পাকিস্তান বড়জোর পঁচিশ বছর টিকবে।’ ভবিষ্যদ্বানীটি  তো ফলে গিয়েছিলো!

১৯৪৯-এর ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকারস্বামীবাগে কাজী হুময়ুন বশির-এর বাড়ি ‘রোজ গার্ডেন’-এ মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ-এর। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান। সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হন মওলানা আবদুল খান ভাসানী। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক; আর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান (তখন তিনি কারাগারে)। পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী ও বাঙালিলগ্ন দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (২১ অক্টোবর ১৯৫৫, দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়); এতে দলটি অসাম্প্রদায়িক হয়।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগের খসড়া মেনিফেস্টোতে ‘ইসলামী রাষ্ট্রের রূপ’ নামে একটি ধারা ছিলো, যার কয়েকটি ধারায় ছয় দফার পূর্বাভাস পাওয়া যায়। যেমন ৪নং ধারা; ‘পাকিস্তান ব্রিটিশ কমনওয়েলথ তথা সর্বপ্রকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসনের বাহিরে একটি পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংঘ হইবে।’ ৫নং ধারা; ‘এই রাষ্ট্রে পূর্ব ও পশ্চিম দুইটি আঞ্চলিক ইউনিট থাকিবে।’ ৬নং ধারা; ‘পাকিস্তানের আঞ্চলিক ইউনিটগুলিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকার দিতে হইবে।’ ৭ নং ধারা; ‘সাধারণতন্ত্র এবং জনসাধারণের পূর্ণ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে রচিত হইবে রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র।’

১৯৪৯-এ দলটির ৪২-দফা দাবির প্রথম দুটি দফায় লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলার জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়; দেশরক্ষা, বৈদেশিক বিষয়, মুদ্রা ও টল্কন কেন্দ্রের এখতিয়ারে রাখার প্রস্তাব করা হয় এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৫০-এ পাকিস্তানের সংবিধান বিষয়ে যে মূলনীতি প্রণয়ন (Basic Principles Committee Report) করা হয়, তার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। সে বছর ৪ নভেম্বর বার লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্র্যাণ্ড ন্যাশনাল কনভেনশন।’ প্রতিবাদী এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। সম্মেলনে মূলনীতি কমিটির সুপারিশ করা সংবিধানের বিপরীতে একটি বিকল্প সংবিধান উপস্থাপিত হয়; যার প্রাসঙ্গিক দিকগুলো ছিলো প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত করে পার্লামেন্টকে অধিতর শক্তিশালী করা; পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের সমমর্যাদায় স্থাপন করা; বাংলা ও উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং কেন্দ্রের ক্ষমতা সীমিত থাকবে, কিন্তু প্রাদেশিক সরকারের কাছে অনেক ক্ষমতা থাকবে। অর্থাৎ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য। অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি ভাষিক-সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিও ছিলো। অপরপক্ষে ‘গ্রাণ্ড ন্যাশনাল কনভেনশন’ ছিলো, বাঙালির স্বীয়তা-স্বাতন্ত্র্য এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রতিবাদ। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির সম্প্রসারণ পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি।

১৯৫৩-তে শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেছিলেন, ‘Leave East Pakistan to work out its own destiny।’ গভীর অর্থবোধক মন্তব্যটি! আবার আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭-তে (৭-৮ ফেব্রুয়ারি) (১৮৮০-১৯৭৬) কাগমারী সম্মেলনে যখন পাকিস্তানকে ‘আস্সালামু আলায়কুম’ বলেন, তখন তা-ও স্বায়ত্তশাসনের প্রসঙ্গে বিবেচ্য। ১৯৫৭-৫৮-তে শেখ মুজিব-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো সাপ্তাহিক নতুন দিন, ওই পত্রিকায় সম্পাদক ধারাবাহিকভাবে যা লিখতেন তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ছিলো ছয় দফায়। ১৯৬৫-র পাক-ভারত যুদ্ধের পর শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’ তাঁর নতুন ভাবনার ফসল ছয় দফা। 

সুতরাং উপর্যুক্ত তথ্য-প্রমাণাদি থেকে অন্তত দুটো উপসংহার তৈরি কর যায়। এক. শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফায় নতুন কিছুই বলেননি; তিনি শুধু ১৯৪৯-এ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে বিবর্তিত হওয়া স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে পরিস্থিতি অনুযায়ী সুবিন্যস্ত করে উপস্থাপন করেছিলেন। কিছু পরামর্শকের ভূমিকাও ছিলো; যেমন সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং কৃতিধন্য আমলা রুহুল কুদ্দুস। দুই. ছয় দফা বাংলা ও বাঙালির ক্রমবিবর্তিত রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অনিবার্য ফসল।

লেখক: চেয়ার অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়ার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিউইপ)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়