তসলিমা নাসরিন: সুইডেন সঙ্গমকে খেলা বলে ঘোষণা করেছে। হ্যাঁ খেলা, স্পোর্টস। যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি, ভলিবল, বাস্কেটবল, টেনিস, ব্যালেড্যান্স, আইস ড্যান্স স্পোর্টস, তেমন স্পোর্টস। সুইডেন এও জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শীঘ্র সেক্সের বা সঙ্গমের প্রতিযোগিতা শুরু হবে। একেবারে আঙুল স্পর্শ থেকে শুরু করে শীর্ষসুখ বা অরগাজম পর্যন্ত খেলা চলবে, সময় সম্ভবত দু’ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা। এই পোড়া পৃথিবীতে কোনওকালে যে সেক্সকে স্পোর্টস বলে ঘোষণা করা হবে, এবং চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য কোনও বদ্ধ ঘরে নয়, রীতিমতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার আয়োজন করা হবে, এবং এই ঘোষণা কোনও দুষ্ট লোক নয়, সুইডেনের মতো রীতিমত সভ্য শিক্ষিত দেশ করবে, কল্পনারও অতীত ছিলো। কল্পনার অতীত ব্যাপারগুলো ঘটলে মন্দ লাগে না। কোনওদিন হয়তো শুনবো সেক্স নামক স্পোর্টস অলিম্পিকেও যাবে।
প্রতিযোগিতায় যাওয়ার জন্য খেলোয়াড়রা যেমন প্র্যাক্টিস করে, তেমন সেক্স প্রতিযোগীরাও প্র্যাকটিস করবে। সেক্সের সৌন্দর্য বাড়াতে চেষ্টা করবে, নিপুণ থেকে নিপূণতর করার চেষ্টা করবে পারফরমেন্স। দৈনন্দিন জীবনে এত নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি কাজ, যার ওপর মানুষের দুঃখ সুখ এত নির্ভর করে, সেটিকে লজ্জার ব্যাপার বলে অন্ধকারে ফেলে না রেখে আলোয় এনে সমাদর করা হোক। অনেকে বলবে পর্নোগ্রাফি থাকতে সেক্স-স্পোর্টসের কী দরকার। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে পর্নোগ্রাফি আজকাল একধরনের নারীবিরোধী ভায়োলেন্সে পরিণত হয়েছে। যত বেশি নারীর শরীরের ওপর অত্যাচার চলে, যত বেশি নারীরা যন্ত্রণা পায়, ততো বেশি জনপ্রিয় হয় পর্নো। এই পর্নো সমাজকে আরও বেশি নারীবিদ্বেষী করে ফেলছে। ইউরোপের সেক্স প্রতিযোগিতায় নিশ্চয়ই নারী পুরুষের ভূমিকা সমান হবে, কেউ কারও ওপর আধিপত্য করবে না, ভায়োলেন্সের কোনও চিহ্ন থাকবে না, শুধু সুচারু সুন্দর শিল্পই দেখবে দর্শক।
এমন প্রতিযোগিতা আদৌ সম্ভব হবে কি না এ ব্যাপারে আমি সংশয়মুক্ত নই। ঘোষণা হয়তো ঘোষণা পর্যন্তই। তারপরও সমাজকে তো এই ঘোষণাটি ভাবার ফুরসত দিলো, সেক্স ব্যাপারটি যে শুধু পুরুষের নয়, তা ভাবার, সেক্সকে যে শিল্পহীন সৌন্দর্যহীন অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হবে, তা ভাবার, সেক্সকে যে রকমারী আসনে সমৃদ্ধ করতে হবে, তা ভাবার। এটুকুইবা কম কী। লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে