শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও) ◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী ◈ ‘মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ জবাব দিলেন আসিফ নজরুল ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার রিপোর্ট দাখিল সোমবার ◈ জনগণ দ্রুত নির্বাচন চায় : ডা. জাহিদ ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল ◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৪৭ রাত
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ ‘উন্নয়নশীল’ থেকে ‘উন্নত’ দেশ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

সুব্রত বিশ্বাস

সুব্রত বিশ্বাস: সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্যতা হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সব ক্ষেত্রই বিশ্বে বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন, যেকোনো সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। বাস্তবায়ন হয়েছে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ তিনটি সূচকে শর্ত অনুযায়ী উন্নতি করায় জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ। ‘উন্নয়নশীল’ থেকে ‘উন্নত’ দেশ হয়ে উঠতে গেলে কী কী শর্তপূরণ করতে হতে পারে বাংলাদেশকে? উন্নত দেশ বলতে ওই সকল সার্বভৌম দেশকে বুঝায় যারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উচ্চতর প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর বা নির্দিষ্ট সীমারেখায় অবস্থানসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহ থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে। উন্নত দেশকে অনেকে অধিক উন্নত দেশ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেক উপায়ে উন্নত দেশের সংজ্ঞা নিরূপিত করা হয়।

২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৪৬টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে এ তালিকায় ছিলো বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে প্রথম এবং শুক্রবার কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যত উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করলো বলে মতো সংশ্লিষ্টদের। মানবসম্পদকে প্রকৃত সম্পদে রূপান্তরিত করার জন্য মানবের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, জ্ঞানগত এবং পেশাগত দক্ষতা, কর্মসংস্থান এ রকম নানা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উন্নতির প্রয়োজন। এসবের অভাব দেখা দিলে মানবসম্পদ আপদে পরিণত হতে পারে। ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ১৩৫তম। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে আগের বছরের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে ১৩৬ তম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি মধ্যম সারির। 

কারণ, কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। কেননা বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। মানব সম্পদ উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। তাই এ দুই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সরকার প্রতিবছর পর্যপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ দুই খাতের মোট বরাদ্দ ১ লাখ ০৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৭.৩৪ শতাংশ। উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ হচ্ছে প্রত্যক্ষ উপাদান (অপঃরাব অমবহপরবং), দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পুঁজি হচ্ছে পরোক্ষ উপাদান (চধংংরাব ঋধপঃড়ৎং)। মানবসম্পদই দ্বিতীয় বিষয়টি মানে, পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে তৈরি করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং তা নিশ্চিত করে জাতীয় উন্নয়নে অগ্রসর হয়। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম)-এ প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন একটি কোম্পানির মধ্যে কর্মচারীদের শিক্ষিত করার একটি সিস্টেমকে বোঝায়। এতে কর্মচারীর কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা বিভিন্ন সরঞ্জাম, নির্দেশাবলী এবং ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি কর্মীদের জন্য তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং তাদের দক্ষতা আপগ্রেড করার একটি সুযোগ। 

প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি পরিকল্পিত কার্যক্রম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন সাধন করে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে তার যোগ্যতার উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন করা। দৈনিক মাথাপিছু ৩.৬৫ আমেরিকান ডলার আয় সেই নিরিখে দেখলেও লক্ষ কোটি এখনও গরীব। ২.১৫ আমেরিকান ডলারের মাথাপিছু দৈনিক আয়ের মাপকাঠি এ দেশকে ‘চূড়ান্ত দরিদ্র’ বলে দাগিয়ে দিতে পেরেছিলো। কিন্তু এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের গণ্ডি এদেশ স্পর্শ করেছে। এখন আর সেই পুরনো তকমা দেওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ-মধ্য আয়ের মাপকাঠিটি পেরোতে হলে বেশ খানিকটা উপরে উঠতে হবে। দৈনিক মাথা পিছু আয় ৬.৮৫ আমেরিকান ডলারে নিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের বিভিন্ন রকম সূচক রয়েছে। সেই সূচকগুলোর কোনওটি আয়স্তরের কথা বলে, কোনওটি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা করে, কোনওটি আবার জীবনযাত্রার মান, কর্মসংস্থানের সুযোগ, দারিদ্র, অসাম্য, প্রযুক্তিগত অবস্থান ইত্যাদিও উন্নয়নের বিবিধ সূচক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। 

খুব উঁচু দরের’ মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণ, মানবোন্নয়নের সারণিতে বেশ উন্নতি করেছে, এ কথা মনে রাখতে হবে। উন্নয়নের সেই হার বজায় রাখা গেলে সাম্প্রতিক অবস্থান থেকে ‘অত্যুচ্চ’ পর্যায় পৌঁছতে পারবে। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মাঝে যেমন আকাশ-পাতাল ফারাক, তেমনি ধর্মান্ধতা ও ধার্মিকতার মাঝেও ব্যবধান ততোটুকু। মানব সমাজে ধর্মান্ধতাও একটি বড় ব্যাধি। অজ্ঞতাই এর মূল কারণ। এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীটির ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে অনেকেই প্রকৃত ধার্মিকদের প্রতি বিরূপ মনেভাব পোষণ করেন। এত যে মসজিদ-মাদরাসা হচ্ছে, এত যে ধর্মকর্ম হচ্ছে, নামাজির সংখ্যাও তো দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তবুও কেন নৈতিক অবক্ষয়, ঘুষ-দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণা, মিথ্যা, পরনিন্দা প্রভৃতি দুর্বৃত্তায়নও দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে? তাই যদি হয় তবে এ সব আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বার্থকতা কোথায়?

কিন্তু এর রহস্যটা কি? প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে হলে এর আসল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অধ্যয়নের বিকল্প নেই। কেননা অজ্ঞতাই ধর্মান্ধতা ও ধর্মহীনতার জন্ম দেয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০২০ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বাংলাদেশের অবস্থান ১২ তম, ২০১৯ সালে যা ছিলো ১৪ তম। বক্তৃতা-বিবৃতি-ভাষণে আমরা যতই বাগাড়ম্বর করি না কেন, দেশে যে দুর্নীতি বেড়েছে, এ সূচক তারই প্রমাণ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। কাজেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করে নাগরিকদের জন্য স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার দায়বদ্ধ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতির সুবিধাভোগীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে আগামী বছরগুলোয় সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। দুর্নীতি হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান অন্তরায়, এ বাস্তবতা অনুধাবন করে দুদককে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশকে দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ প্রেক্ষাপটে এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত, যাতে দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে পারি, তবে এর সুফল দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। লেখক: ব্যবসায়ী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়