শিরোনাম
◈ যমুনার সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়, নিরাপত্তা জোরদার, বাড়তি সতর্কতা ◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ ◈ অনিশ্চয়তার মাঝেও পি‌সি‌বি চায় বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে আসুক ◈ এই প্রথম হ‌কি বিশ্বকাপে আম্পায়া‌রিং করবেন  বাংলা‌দে‌শের সে‌লিম ও শাহবাজ  ◈ পারভেজ হত্যায় গ্রেফতার অভিযুক্ত টিনা ◈ রাফালের ধ্বংসাবশেষ সরানোর প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই! ◈ যুদ্ধক্ষেত্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ হারোপ ড্রোনের বিশেষত্ব কী? (ভিডিও) ◈ এখানে আরেকটা বেয়াদব আছে, সে শহীদ ফ্যামিলিকে ননসেন্স বলেছে: সংবাদ সম্মেলনেই শহীদ ইয়ামিনের বাবা(ভিডিও) ◈ দুপুরের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি, জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৪২ রাত
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৩, ০২:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রস্তাবিত বাজেট কি জনবান্ধব হতে পারলো!

কাজী এম মুর্শেদ

কাজী এম মুর্শেদ: বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন আনন্দ মিছিল করে। তারা বাজেট পড়ছেন বা বুঝছেন? নাকি ৫০০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি আর একটা মিনারেল ওয়াটারই তাদের সারা বছরের অর্জন? বাজেট ঘোষণার পর পড়তে যেই সময় লাগে তার আগে বিরোধীদল যে প্রত্যাখান করে বলে জনবান্ধব বাজেট হয়নি, তারা কি পুরোটা পড়ে দেখছেন? এবার আসুন আমি আমার মতো ব্যাখ্যা দিই।
 
[১] বাংলাদেশের বাজেটের যেসব সংখ্যা বলে, তা মোটামুটি সংখ্যা, বাস্তবতা বিবর্জিত। যেমন ধরেন ৭.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধি। গতবছর শুনছিলাম ৮.২% শেষে কতোতে থামলো? বিশ্বব্যাংক মনে হয় বলছিলো ৫.২% হতে পারে। আর মুদ্রাস্ফীতি টার্গেট ৬%। এখন চলছে ৯% এর উপর, সরকারি হিসাবে। প্রকৃত হিসাব কম করে হলেও ২৫% এর উপর, আমার ধারণা। 

[২] আমদানি কমানোর কারণ যাতে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখা যায়। যে হারে বিদেশ ভ্রমণ চলছে, ডলার এমনিই বের হয়। আমদানি ছাড়া রফতানি কিভাবে সম্ভব? রফতানির জন্য কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে তৈরি হয় না, আমদানি করতে হয়। আমদানি না করে রফতানি করতে পারে শুধু বাজেট। 

[৩] লোন নেওয়া হবে ঘাটতি মেটাতে। বিশাল অংকের টাকা পূর্বের ঋণের সুদ আসল শোধ করতে বের হয়ে যাবে, সেই খরচ শোধ করতে স্থানীয় ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হবে, সাথে বিদেশি ঋণ যোগ হবে। স্থানীয় ব্যাংকের মুডিস রেটিং কমেছে, বাংলাদেশের রেটিংও কমেছে। বিদেশিরা ঋণ দেবে এমন কোনো দরকারী প্রজেক্ট নেই, ঢাকায় মেট্রোরেল ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে চিন্তা ভাবনা, একইসঙ্গে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, দ্বিতীয় পারমাণবিক চুল্লী এজেন্ডায় আছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে লোন নিয়ে আবার টাকা ছাপিয়ে শোধ করা, আবুল মাল মুহিত যেই ধারা শুরু করেছিলেন সেটা চলছে। ফলাফল মুদ্রাস্ফীতি। [৪] সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৭৭ লক্ষ কোটি থেকে ৮০ কোটি করেছে। ভালো খবর, আমলাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ায়নি। তবে সরকারের জন্য সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে, ইলেকশনের বছর বলে কথা। 

[৫] সঞ্চয়পত্র বিক্রি ১৮ হাজার কোটি, গত বছর এমনই ছিলো, যদিও বাজেটে ৪০ হাজার কোটি ধরা হয়েছিলো। মানুষের হাতে পয়স নেই, সঞ্চয়পত্র ভেঙে খেতে হচ্ছে। যারা সৎ জীবন যাপন করে শেষ বয়সে সঞ্চয়পত্রের সুদ দিয়ে চলছিলেন, তাদের জন্য খারাপ সংকেত এটা। 

[৬] রাজস্ব আয়, স্থানীয় খাত মানে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস ডিউটি থেকে। গত বছর ধরা হয়েছিলো ৩৭০ হাজার কোটি, এবার ৪৩০ হাজার কোটি। গত বছর আয়কর কমেছে, মানুষের চাকরি নেই বলে ডিডাকশন এ্যাট সোর্স কমেছে। আমদানি কমায় কাস্টমস কাস্টমস ডিউটি কমেছে। বাকি আছে ভ্যাট। এটা মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকলেও আমার হেয়ারসে মানে শোনা কথা বলি, কিছু দোকানে এমনও বলে যে রিসিট দিতে পারবে, তাহলে ভ্যাট দিতে হবে, না হলে রিসিট ছাড়া নিতে হবে। আমাদের দেশে এই রিসিট দিয়ে কোনো ট্যাক্স বেনিফিট আসে না, মানুষ রিসিট ছাড়াই চলতে পারে। 

[৭] অভ্যন্তরীণ আয় নিয়ে অন্য কথা বলি, গতবছর এই সংখ্যা ছিলো ৩৭০ হাজার কোটি। অর্জন ছিলো ৩০০-১০ কোটির মধ্যে। এ বছর সেই লক্ষ্যমাত্রা ১৬% বাড়ানো হয়েছে, আগে যেটা ১৯% এর মতো কম আসছিলো, এবার বাড়বার কোনো কারণ দেখি না, এচিভমেন্ট ৩০% নীচে আসলে মাঝের এই গ্যাপ, ১৩০ হাজার কোটি কোথা থেকে আসবে তার কোনো পরিকল্পনা নাই। 

[৮] বিদেশি বিনিয়োগ কমে আসবে এটা আমার ধারণা। বাজেট ঘোষণার দুইদিন আগে মুডিস রেটিংয়ে স্পেকুলেটিভ রিস্ক থেকে হাই রিস্ক হওয়া বড় একটা আঘাত। হয় কিছু ঋণ আসবে না, অথবা আসলেও সুদ বেশি হবে। [৯] নির্বাচনের বছর। আইএমএফকে যেসব কথা বলা হয়েছিলো, যেমন অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর সঙ্গে বিভিন্ন সাবসিডি বা ভর্তুকি দেওয়া কমানো, এটা পুরো সম্ভব না। ভর্তুকির মূল খাত বিদ্যুৎ, সার, ডিজেলসহ জ্বালানি  তেল ইত্যাদি। প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, সব ভর্তুকি বন্ধ করা হবে, এখন বলছেন নির্বাচনের আগে ভর্তুকি বন্ধ করা ঠিক না। 

[১০] সামাজিক নিরাপত্তা খাতগুলো হয়ে দাড়িয়েছে বজ্র আটুনি ফস্কা গেড়ো। যাঁদের পাবার কথা তারা পায় না, যারা নেয় তারা ব্যবসা করে। সাথে অসৎভাবে চুরি করাও চলে। বিধবা, মুক্তিযোদ্ধা, ওএমএস এইসব ভাতা কিছু লোকের হাতে যায় যারা পাবার তাদের হাতে পৌঁছায় না। [১১] একমাত্র ভালো যা দেখলাম তা হলো এবার ডেফিসিট বাজেট জিডিপির ৬% এর নীচে নেমেছে। জিডিপির সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, তারপরও গতবছর যা ৬.২% ছিলো তা এবার ৫.২% এ এসেছে। সেটা অবশ্য আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে ছিলো।

[১২] আমরা সম্ভবত বড় একটা অর্থনৈতিক কলাপ্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। লক্ষণগুলো তেমনি। সম্ভবত যে টার্মটা ব্যবহার করে স্লাইডিং ব্যাক, পিছনে ধীরে ধীরে পতন। এটার পেছনে সরকারের নীতিমালার ঘাটতির চেয়ে বড় দায় খেলাপি ঋণ, মন্দ ঋণ রাইটঅফ করা, বিদেশে টাকা পাচার, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই দায় থেকে মুক্ত না। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কি দেওয়া কীভাবে দেয়া এখনো পাইনি। বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনলে কী সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা পাই নাই। আমি ট্যাক্স দিয়ে হালাল করা চাই না, বরং ফিরে আসুক অবং ইনভেস্ট হোক যেন ব্যবসা বাড়ে, চাকরির সুযোগ বাড়ে।

[১৩] ব্যাক্তি আয়কর ও সীমা নিয়ে কিছু বললাম না। আয়কর যখন নির্দিষ্ট পরিমান দিতেই হবে, তখন সীমা নির্ধারনের দরকার দেখি না। ছোট বেলায় বাজেট বলতে খুঁজতাম কিসের দাম বাড়ছে কিসের কমছে। পরে শিখলাম কোন খাতে কি হিসাব দেখানো। আরো পরে সেই হিসাব খাতগুলো ঠিক আছে কিনা এবং বাস্তবসম্মত কিনা। যা দেরীতে বুঝলাম, আপনাদের একটু আগে থেকে বোঝার জন্য লিখলাম। লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়