জাকির তালুকদার: আমরা লেখালেখি করতে এসে সবাই নিজেকে স্পেশাল প্রাণী মনে করি। মনে করি স্পেশাল প্রাণী হিসাবে আমরা কেন পেশাগত দক্ষতা অর্জন করতে যাব? কেন পেশায় মনোযোগ দেবো? কেন অন্যদের মতো খেটে খেতে যাব? তারুণ্য আর যৌবনটা এভাবে পাড়ি দেওয়া যায়। লিমিটেড বোহেমিয়ানগিরি, কিছু লেখালেখি আর নারীর প্রতি বিপুল মনোযোগ নিয়ে যৌবন পাড়ি দিই। কিছু অতিচালাক লেখালেখির সূত্র ধরে সিনিয়র লেখিকাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পেট চালায়। দেশে কিছু ধনীর বউ লেখক-কবি হবার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছেন। তারা এসব চালাক কবিদের পোস্টা। কিন্তু সমস্যা হয় বয়স ভাটির দিকে যাওয়া শুরু করতেই। অসুখ-বিসুখ জেঁকে বসে। ভাত না খেলেও ওষুধের পয়সা জোগাড় করতেই হয়। এইসব কারণে যারা একটু ভারিক্কি গোছের লেখা লিখতে শিখেছেন, তারা যোগ দেন সরকারের দালালির প্রতিযোগিতায়। যারা সেটি পান না, তাদের কেউ কেউ যোগ দেন ধনী লেখক-কবির ডুগডুগিবাদকের পদে।
আর একটি অংশ অসুস্থতা, দারিদ্র্য নিয়ে হাত পাততে থাকেন সরকারের কাছে, ধনিক সমাজের কাছে। তখন তারা ভিখিরির পর্যায়ে নামিয়ে আনেন নিজেদের। স্পেশালদের কী পরিণতি। নিজেকে আমরা যতই স্পেশাল ভাবি না কেন, আমাদের তো এইটুকু হুঁশ থাকা দরকার যে আমরা মাইকেল মধুসূদনের চাইতে স্পেশাল নই, নজরুলের চাইতে স্পেশাল নই, জীবনানন্দের চাইতে স্পেশাল নই, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাইতে স্পেশাল নই। বাঙালি জাতি তাঁদেরই মূল্য দেয়নি, আপনাকে-আমাকে গোনার সময় তাদের নেই। নিজেকে স্পেশাল ভাবলে ব্যক্তিত্বটাও স্পেশাল হতে হবে। দালালি করা, অন্যের কাছে হাত পাতা স্পেশালিটির বেলুন ফুটো করে দেয়। করুণা কোনো লেখক-কবির চাওয়া হওয়া উচিত নয়। সময় থাকতে স্পেশালিটি কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে আসুন। তাহলে লেখালেখির মাধ্যমে সত্যিই স্পেশাল হয়ে উঠতেও পারেন কোনো এক সময়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে