শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৯ মে, ২০২৩, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ২৯ মে, ২০২৩, ০৪:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চায়ের দোকানের আড্ডা, অর্থনীতি এবং রাজনীতি

কাকন রেজা 

কাকন রেজা: রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে চায়ের কাপ হাতে। সামনে বেঞ্চে বসা লোকজন আলাপ করছে। গণমাধ্যমে আমরা যারা কলাম তথা উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখি, নিজেদের দিগগজ ভাবি, তাদের সবাই যদি নিয়মিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতেন তাহলে ভালো হতো। বুঝতে পারতেন তারা পুরোটাই কলকাতার সেই সাঁতার না জানা বাবু। ঝড়ের রাতে প্রায় ডুবন্ত তরীতে যার জীবনের ষোলো আনাই মিছে। সাঁতারটা জানতে হলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। 

আলাপ শুনছিলাম। ছ’সাতজন মানুষ কথা বলছিলেন গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে। যিনি বক্তা তার মতে, এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দু’দিকেই লাভ হয়েছে। প্রথমত তারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এটা দেখাতে পেরেছে, দ্বিতীয়ত বিজয়ী এবং বিজিত দু’জনেই নিজেদের। মা হলেন ছায়া মাত্র। মূল হলেন পুত্র। তার দুষ্টুমির জন্য হালকা শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আবার ঘরে ফেরার প্রক্রিয়া চলছে। মেয়র হয়েই জায়েদা খাতুন ছেলেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যেতে চাইছেন। মাঝখান থেকে বেকুব হচ্ছেন সেই সরকারবিরোধীরা যারা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতায়। না, আমি আশ্চর্য হইনি। যারা এসির বাতাস খেতে খেতে কলাম লেখেন তারা আশ্চর্য হতে পারেন। আমি মানুষের সঙ্গে মিশি, বুঝতে চেষ্টা করি তাদের কথা, হৃদস্পন্দন। দেশের রাজনীতির হাল-হকিকতের খবর তারা যে যথেষ্ট ভালো রাখেন তা জানি তাদের সঙ্গে মিশি বলেই। 

এই যে রাজনীতির কথা সাধারণেরা বললেন, আমাদের ষোলো আনা মিছের অসাধারণ বাবুদের কেউ কেউ মনে মনে তাই বলেন, মুখে স্বীকার না করলেও। অন্ধ অর্থাৎ মতান্ধদের কথা বাদ। তাদের সবকিছুই অন্ধের হাতি দর্শন। এর আগের কলামে বলেছিলাম দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কথা। বলেছিলাম এভাবে চললে যা ভেঙে পড়বে। সাধারণ মানুষেরা অর্থনীতিও যে খারাপ বোঝেন না, সেটা বোঝা গেলো সেই চায়ের দোকানের আলাপেই। শুরু করেছিলেন এক বক্তা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে। বললেন, আগে দেশি মুরগির পা, চামড়া, গিলা-কলিজা কিনে খেতাম। আর মাঝেমধ্যে ব্রয়লার মুরগি ভাগ্যে জুটতো। এখন ব্রয়লার মুরগির গিলা-কলিজা কিনে খেতে হচ্ছে। পরিষ্কার বললেন, ‘ট্যাকার দাম কইমা যাইতাছে’। কথা কি মিথ্যা? ডলারের হিসেব তো তারই জানান দেয়। জিডিপির ফাঁকিটাও তারা নিজেদের মতন করে ধরে ফেলেছেন। বলছেন, বড়লোকদের হাজার কোটির সঙ্গে তাদের খালি হাজার মিলিয়ে গড় করা হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে সবাইকে ধনীলোক। ডলার সংকটের কথাও এই সাধারণ মানুষেরা জানে। পাচার হয়ে যাওয়া টাকার খবরও জানে তারা। বলেও নিসংকোচে। আর আমাদের ষোলো আনার বাবুরা বলতে গিয়ে সারাক্ষণই সংকোচে ভোগেন। কখনো উল্টো সাফাই গান। 

আলাপের মধ্যে নায়ক শাকিব খানের কথাও উঠলো। তারা অপু-বুবলীর দ্বন্দ্বটাও জানেন। সিনেমা কেন চলে না, হলগুলো কেন বন্ধ হচ্ছে তার কারণও স্পষ্টভাবে জানেন তারা, যা আমাদের ষোলো আনা মিছে বাবুদের জানা নেই। একজন বললেন, বাজারে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। একসময় ছিলো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরতাম। রাতের খাবার খেয়ে সেকেন্ড শোতে সিনেমা দেখতে যেতাম। এখন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে পোষানো যায় না। তাই রাতে আবার রিকশা নিয়ে বেরুতে হয়। উল্টো প্রশ্ন করলেন, সিনেমা দেখবো কখন? 

একসময় বলা হতো বাংলাদেশের সিনেমা দেখে রিকশাওয়ালারা। তাও ভালো, তখন এফডিসি জমজমাট ছিলো। নায়ক-নায়িকা ছাড়াও যাদের ‘এক্সট্রা’ বলা হয় তাদেরও দিন চলতো স্বচ্ছলভাবেই। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের রমরমা দিন ছিলো তখন। হলে টিকিট নিয়ে মারামারি হতো। এখন রিকশাওয়ালাদের সিনেমা দেখার সময় নেই। বিনোদনের বিষয়টি ক্রমেই তাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন বেঁচে থাকাটাই একমাত্র চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানি, এ কথাতেও ষোলো আনা মিছের বাবুরা এক আনা, দুই আনা করে নানান হিসেব দেখানোর চেষ্টা করবেন। অথচ দিনশেষে তাদের হিসেব মূলত সেই ষোলো আনাই মিছে। সিনেমার দুরবস্থা তাদের সেই ভুল হিসেবের কথাই জানান দেয়। 

অ্যামেরিকার ভিসা নীতির আলাপও বাদ পড়েনি সেই আড্ডায়। তাদের ধারণা এই নীতির ফলে যারা দু’নম্বরী করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। বাড়ি-গাড়ি করেছে। তারা সামনে সাইজ হবে। যদিও কীভাবে হবে সে বিষয়টা তাদের কাছে এখনো খোলাসা নয়। যেমন নয় আমাদের ষোলো আনা মিছে বাবুদের কাছেও। কারণ তারা ভাবতেও পারেনি এমন একটা ঘটনা ঘটবে। আমাদের নাইজেরিয়ার কাতারে ফেলা হবে। তাই এর সুদূরপ্রসারী বিষয়টি তাদের আয়েশী মস্তিষ্ক এখনো ধরতে পারেনি। ধরতে পারেনি, এর বিরূপ প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে এখন থেকেই পড়তে শুরু করবে। আমাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া মানেই আমাদের সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া। এমনিতেই আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাতাল। ঋণ পরিশোধের চাপ, জ্বালানির বকেয়া পরিশোধের চাপ, রিজার্ভ কমার চিন্তা, ডলার সংকট। করপোরেট বিশ্ব এমন একটি পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করার আগে শতবার ভাববে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতাটুকু চায়ের দোকানের আড্ডার মানুষেরা যতটা বোঝেন ততোটা যদি আমাদের ষোলো আনা মিছে’র বাবুর বুঝতেন...। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়