এ বি এম কামরুল হাসান : নাম তাঁর সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। বয়স বিশ। সারা জীবনে সারাহ সুস্থ ছিল দশ মাস। বাকি উনিশ বছর দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে যুদ্ধ করে গেছেন এ তরুণী। ব্যাধির নাম টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস। এটি ক্যান্সার নয়। তবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউমার হয়। সারাহর সারা মুখে ছিলো গোটা গোটা টিউমার। সহপাঠীরা তাঁর মুখের টিউমার দেখে ভয় পেতো। পাশে কেউ বসতে চাইত না। এভাবেই সারাজীবন ঐশ্বর্যহীনভাবে বেঁচে ছিলো সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য।
সারাহ মরণোত্তর অঙ্গদান করে গেছেন। চিকিৎসকরা নিয়েছেন তাঁর দুটি কিডনি আর দুটি চোখ। তাঁর দুটি কিডনি দুজন মৃত্যুপথযাত্রী কিডনি বিকল রোগীর দেহে সংযোজন করা হয়েছে। তাঁর দানের দুটি চোখ দিয়ে দুজন দৃষ্টিহীন দেখছেন পৃথিবীর আলো। চারজন ব্যক্তিকে নতুন জীবনের পথ দেখিয়ে ঐশ্বর্যহীনভাবে বেঁচে থাকা সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য বিষে ভরা তাঁর বিশ বছরের জীবনকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে গেছেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কতো মানুষকেই তো পদক দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য বিষয়ে সারাহ যে অবদান রেখে গেছেন তাতে জাতি হিসাবে আমরা কি তাঁকে স্বাধীনতা পদকের জন্য বিবেচনা করতে পারি না? কী অবদান রেখে গেছেন? দেশের ৫২ বছরের জীবনে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে সারাহ প্রথম, যিনি মরণোত্তর অঙ্গদান করে চারজনকে বেঁচে থাকার নতুন পথ দেখিয়ে গেছেন। রাষ্ট্র যদি স্বাস্থ্যখাতের নতুন দুয়ার উন্মোচনকারীকে যথাযথ সম্মান দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেকেই এ খাতকে সম্মৃদ্ধ করতে এগিয়ে আসবে। দেশের কাছে সারাহর আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তিনি তো অনন্তলোকে। কিন্তু সারাহর প্রতি এ সম্মান জাতিকে নতুন পথ দেখাতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ অবদানের জন্য এ বছর সারাহকে স্বাধীনতা পদকের জন্য বিবেচনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক : প্রবাসি চিকিৎসক, কলামিস্ট