খাজা নিজাম উদ্দিন: আমেরিকা আসলে বাংলাদেশ নিয়ে কী চায়? আশা করি, বুঝতে পারি। আমার শেষ বস ছিলেন আমেরিকান। বয়সে আমার ছোট হলেও শিখেছি বেশ। নানা কারণেই আমেরিকান প্রজেক্ট/প্রোগ্রাম স্ট্র্যাটেজিগুলো নিয়ে পড়তে হয়েছে। আমেরিকান স্ট্র্যাটেজি আমার কাছে সব সময়ে মনে হয়েছে সবচেয়ে ট্যালেন্টেড পিপলরা এগুলো তৈরি করে এবং তা নিশ্চিতভাবেই। এগুলোর ফ্লো মানে কোন অবজেক্টিভ দিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা কী চায় - সেটা বুঝতে গেলে মাথা ঘামাতে হবে ভালোভাবেই। দীর্ঘদিন আমেরিকার সাউথ এশিয়ার স্ট্র্যাটেজিগুলো বুঝার চেষ্টা করেছি। USAID এর কাজকর্ম আর এক সময়ে ব্রিটিশ DFID এর কাজকর্মে একটা জায়গায় মিল আছে।
এর সবাই দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজরা যেমন immediate output নিয়ে চিন্তা করে (outcome নিয়ে চিন্তার মতো মগজের ঘাটতি আছে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের), এরা তেমন না। এরা চিন্তা করে Impact নিয়ে এবং তা নিশ্চিত করতে তাদের আছে Result based নানা সিস্টেম। ধরেন সুকিকে মিয়ানমারের প্রধান বানাবে। এর জন্য তারা বিনিয়োগ করবে দরকার হলে ৫০-৬০ বছর! এবং তারা সফল হয়েছিলো। মাঝখানে চীন ঝামেলা করেছে। তার মানে কি সুকিকে নিয়ে আমেরিকার চিন্তা ধীর হয়ে গেছে? নিশ্চিতভাবে না। মিয়ানমার নিয়ে আমেরিকার চিন্তা আর পরিকল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। বাইডেন সরকার আসার সাথে সাথেই চায়না আর দেরি করে নাই। বাইডেন সরকারকে মিয়ানমার নিয়ে এক চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। আমেরিকানদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো - হাল ছাড়ে না।
আর একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলা ভালোÑ আমেরিকানরা তাদের প্রতিটি ডলার এর রিটার্ন হিসাব করে। এই বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলারের বেশি সাহায্য করেছে। এনজিও আর সুশীল সমাজের বড় অংশটা বেঁচে আছে আমেরিকার টাকায় অনেকটা। আমেরিকার টাকায় কত চাকরিজীবী দুনিয়ার কত দেশে ঘুরেছে হিসাব নেই। আমেরিকার ফান্ডের টাকায় বিদেশে ঘুরে সৌশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেয় - এখানে সব ধরনের হাজারো পেশাজীবীই আছে। বাংলাদেশের আমেরিকার বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। এবং তাদের সেই নেটওয়ার্কের সাথে বাকিরা কৌশলগতভাবে হাজার হাজার মাইল দূরে আছে। ধারণা করা হয়, দুটো পত্রিকা আমেরিকার আশীর্বাদে চলে। তো সেই দুই পত্রিকার ধারে কাছে যাওয়ার মতো আর কেউ নাই।
তো সেই আমেরিকা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে এবং জোরালোভাবে কথা বলছে। এবং আমার প্রেডিকশন হলো, নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা কথা বলা হঠাত করে শুরু করে নাই। সহজ কথা, তাদের অবজেক্টিভস আছে। কী (বা কী কী) সেই অবজেক্টিভস? তা বড় আলোচনা। এবং সেটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক বিষয়। অন্তত মিয়ানমার দিয়ে চায়নাকে নিয়ে একটা প্ল্যান থাকার সম্ভাবনা তো আছেই। যেদিন বিদেশি নিউজচ্যানেলগুলোতে পাকিস্তানি এমপিদের হালকা পাতলা ইমরান বিরোধী আলাপ শুনছিলাম - বুঝতে দেরি হয় নাই, ইমরান খানের গদির আয়ু শেষ, অন্য কেউ আসবে। আমেরিকা যখন সামনে আসে, তার অর্থ হলো - খেলা তখন বহুদূর চলে গেছে এবং তাদের কোন একটা সিদ্ধান্ত নেয়াই আছে।
আমার ফাইনাল প্রিডিকশন:বাংলাদেশের নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যত ধরনের চাপ দেওয়া যায়, আমেরিকা তা দিবে এবার। আমাদের রপ্তানি কমলেও আমেরিকাতে বাড়ছে, আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। মানে আমাদের নির্ভরশীলতা যেভাবে বাড়ছে আমেরিকার উপর, তাদের চাপ উড়িয়ে দেওয়া কঠিন হবে আমাদের জন্য। আর শেষ কথা -আমেরিকা তার প্রতিটি ডলারের রিটার্ন হিসাব করে। এবং তার স্বার্থে। ২০২১ সালে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাও এই খেলারই অংশ। তাদের স্বার্থ অর্জনের জন্য নির্বাচনকে তারা সুষ্ঠু করাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। ফেসবুক থেকে