শিরোনাম
◈ হামজা চৌধুরীর দুর্দান্ত পারফর‌মেন্স, ফাইনালে শেফিল্ড ইউনাইটেড ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ি চালু ◈ ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা কে এই আয়েশা ফারুক? ◈ গার্ডিয়ান থেকে বিবিসি; পশ্চিমা গণমাধ্যম কীভাবে ইসরাইলি অপরাধকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রচার করে? ◈ রংপুর রাইডার্স এবা‌রো‌ গ্লোবাল সুপার লি‌গে অংশ নি‌চ্ছে ◈ রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন আলোনসো ◈ রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আনচেলত্তি ব্রা‌জি‌লের প্রধান কো‌চের দা‌য়িত্ব নে‌বেন ২৬ মে ◈ ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে কেন আসছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা? ◈ দায়িত্ব নিলেন নতুন সিআইডি প্রধান  ◈ এনবিআর ভেঙে হলো দুই বিভাগ, অধ্যাদেশ জারি

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৬:১৮ সকাল
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৬:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারীর আন্দোলন জয়ের মুখ দেখে না কেন?

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [২] মার্ক্সবাদ ছাড়া নারীদের মুক্তির কোন পথ দেখি না। নারীবাদ দিয়ে নারীর কোন মুক্তি নাই। নারীবাদ সব নারীর মুক্তির কথাও বলে না, বলে বিশেষ বিশেষ নারীদের সুবিধার কথা। বিশেষ নারীদের মুক্তি- যদিও তাদেরও মুক্তি ঘটে না- বরং নারীদের মুক্তির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।  বিশেষ নারী মানেই বিশেষ শ্রেণীর নারী। এরা প্রধানত উঁচু শ্রেণীর নারী। মার্ক্সবাদ নারী বা পুরুষের মুক্তির কথা বলে না, বলে মানবজাতির মুক্তির কথা। এই মানবজাতি যদিও একটি শ্রেণীর মুক্তি দিয়ে শুরু, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বলা যায় ৯০ শতাংশ। বাকিদেরও মুক্তি ঘটে, তবে ধীরে ধীরে। 

[৩] নারীর আন্দোলন জয়ের মুখ দেখে না কেন?কারণ নারীর কোন বন্ধু নাই। নারীর চতুর্দিকে শুধু শত্রু। ধর্ম, পিতৃতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ- এই চারটি মহাশক্তির বিরুদ্ধে জয় পাওয়া চারটিখানি কথা নয়। পৃথিবীর কোন ধর্মই নারীর মুক্তির কথা বলে নাই, বরং তাকে প্রতি পদে পদে কি করে শৃঙ্খলিত করা যায়, তার সুচারু ব্যবস্থা করেছে। ধর্মে নারীর নিজস্বতা বলতে কোন স্বাধীনতা নাই। পুরুষের অধীন থাকাই তাদের একমাত্র দায়িত্ব বলে ধর্ম ঘোষণা দিয়েছে। এই ধর্মের বিরুদ্ধে নারীরা অসহায়, তারা নিজেরাই লড়াই করতে রাজী নয়। কিছু নারী ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের কথা বলে কিন্তু তা বুদবুদ হয়ে মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না।

[৪] পিতৃতন্ত্র মানেই হচ্ছে পিতা যা বলবে তাই চূড়ান্ত। পিতা মানে পুরুষ, মাতা নয়। পিতার সিদ্ধান্ত এখানে বেদবাক্যতুল্য, অমান্য করলেই নেমে আসবে নিপীড়নের খড়গ। পিতার বিরুদ্ধে কোন কন্যার রুখে দাঁড়ানোর কথা কে কবে শুনেছে বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া। এর পর পুরুষতন্ত্র। এটা সাংঘাতিক একপেশে বিষয়। পুরুষ হলেই এটা ধরে নেয়া হয় যে নারী তার অধঃস্তন। পুরুষ যদি নারীর চেয়ে অক্ষম হয়, তাতেও কোন সমস্যা নাই। পুরুষ মানেই সে নারীর চেয়ে শ্রেয়। নপুংসকও নারীর উপর আধিপত্য করে। পরিবারে পিতা, ছেলে, স্বামী- এই তিন পুরুষ নারীর সমগ্র জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখান থেকে নারীর মুক্তি নাই।

[৫] পুঁজিবাদ মানুষকে মুক্তি দিয়েছে, সমান্ততন্ত্রের যাঁতার নীচ থেকে তার মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। এই মুক্তি মানে কিন্তু তার শ্রমশক্তি বিক্রির স্বাধীনতা। আসল স্বাধীনতা সে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। সে তার পণ্যের চলাচলের স্বাধীনতাই নিশ্চিত করেছে। পুঁজিবাদ পুরুষের সংগে সংগে নারীর মুক্তির ব্যবস্থা করেছে কেন? কারণ সে এর মধ্য দিয়ে সস্তা শ্রমের বিশাল বাজার পেয়েছে। এই শ্রমের বাজারেও সে নারীকে পুরুষের চেয়ে নীচু চোখে দেখেছে। পুরুষের চেয়ে তার শ্রমশক্তির মূল্য কম দিয়েছে। পুঁজিবাদ নারী পুরুষকে এক চোখে দেখতে পারেনি। এছাড়াও পুঁজিবাদ নারীর দেহ এবং সৌন্দর্যকে পণ্য বানিয়ে তাকে বাজারের বস্তু বানিয়ে ছেড়েছে। পুঁজিবাদ মুক্তি দিয়ে তার পায়ে যে শৃঙ্খল পরিয়েছে, তা খুলে ফেলা কোন নারীবাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

[৬] নারীর বিরুদ্ধে এই যে শত্রু, তার বিরুদ্ধে জয় করা কি কোন বিশেষ আন্দোলন দিয়ে সম্ভব? সম্ভব নয়, ইতিহাস তার প্রমাণ। আসলে নারীর মুক্তি বলে আলাদা কোন বিষয় থাকতে পারে না, মানবমুক্তিই কেবল এই মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। নারীর বিরুদ্ধে এই চারটি শত্রু এখন সারা পৃথিবীতে একাট্টা হয়ে লড়াই করছে। সব স্থানে সমস্যা এক নয়, বিভিন্ন, কিন্তু এরা সকলেই নারীর শত্রু হিসেবে বিদ্যমান। বাংলাদেশের মত সমাজে এই চারটি শত্রু তার সব আদিমতা নিয়ে হাজির। ধর্ম এখানে নারীর বিরুদ্ধে প্রবল হিংস্রতা নিয়ে বিদ্যমান, পিতৃতন্ত্র এখনো তার নখর নিয়ে উদ্যত আছে, পরিবারের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়, পুরুষতন্ত্র এখানে নেকড়ের মত নৃশংসতা নিয়ে হাজির আর পুঁজিবাদ তার শোষক চরিত্র নিয়ে গোটা সমাজকে গিলে খাচ্ছে, নারী হচ্ছে তার অতি সফট শিকার।

[৭] প্রকৃতি কি নারীবান্ধব কোন সত্তা? মনে হয় না। নারীর উপর যে তথাকথিত মহান দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে এই প্রকৃতি, তা পুরুষের অধীন হওয়ার জন্য অন্যতম সহায়ক বৈশিষ্ট্য। এই একটাই দায়িত্ব যদি উভয়লিঙ্গকে বহন করতে হতো, তাহলে দৃশ্যপট আলাদা হতো। কিন্তু প্রকৃতির মত অবোধ সত্তার উপর তো আমরা অভিযোগের আঙুল তুলতে পারি না, পারি এই দায়িত্বকে যারা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে তাকে অধীনস্থ করেছে, করতে পারি সেই পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কিন্তু অভিযোগ তো কোন মুক্তির সন্ধান দেয় না, বরং একে আরো যুদ্ধময় করে তোলে।

[৮] মার্ক্সবাদ কিভাবে মুক্তি দেয়? পুঁজিবাদ নারীর শত্রু হওয়ার পেছনে সবথেকে বড় যে কারণ তা হলো ব্যক্তিগত সম্পত্তি। পুঁজিবাদ নারীকে পণ্য বানিয়েছে, পুরুষ তাকে কিনে নেয় এবং তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পায় নারীর মধ্য দিয়ে। নারী যদি পুরুষ সন্তান দেয়, তাহলে সোনায় সোহাগা, তার হাতে সম্পত্তি দিয়ে যাবে হাসতে হাসতে, নারী সন্তানকে দেবে নামকাওয়াস্তা, না দিতে পারলেই বরং খুশি। পুঁজিবাদের সংগে তখন হাত মেলায় ধর্ম, পিতৃতন্ত্র এবং পুরুষতন্ত্র। মার্ক্সবাদ এই ব্যবস্থাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিপরীতে কায়েম হয় সামাজিক সম্পত্তি এবং পুঁজিবাদী ব্যক্তিগত ভোগের জায়গা দখল করে সামাজিক ভোগ।

ইরানে যে হিজাব নিয়ে আন্দোলন চলছে, তা কখনো বিজয়ের মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। ইরানের ঐ চারটি শক্তি নারীর এই দাবীকে গুঁড়িয়ে দেবে। ইতোমধ্যে তারা হত্যাও করেছে বহুজনকে। আরো করবে। একসময় নারীরা ঘরে ফিরে যাবে এবং কালো নেকাবের অন্ধকারে নিজেদের ঢেকে ফেলবে। আসলে পোশাক একটা উসিলা, আসল হচ্ছে নারীকে যে করেই হোক পদানত করে রাখতে হবে। এজন্য যত অস্ত্র- ধর্ম, পিতৃতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং প্রকৃতি- সবকিছুকে একত্রে প্রয়োগ করে নারীর যে কোন স্বাধীনতাকে ছেঁটে ফেলাই হবে একমাত্র কাজ। তাহলে উপায়? উপায় একটাই- পুঁজিবাদের -যার ভেতর অন্য শত্রুগুলি মিলে আছে- বিরুদ্ধে লড়াই করা। এর বিরুদ্ধে জয় মানেই মুক্তির অর্গল খুলে যাওয়া, শুধু নারীর নয়, গোটা মানবজাতির। লেখক: ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়