সালেহ্ বিপ্লব: [২] বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খুচরা দাম: ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত ইউনিট ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ পর্যন্ত ইউনিট ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে ১৩ টাকা ২৬ পয়সা। সেচের বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৮২ পয়সা এবং শিল্পে লোড অনুসারে ৮ টাকা থেকে ১৩ টাকা।
[৩] বর্তমান বিপিডিবির বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বিক্রয়মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ। বিপিডিবির ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ বছরে মোট ৯৮ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৭ হাজার ২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
[৩.১] প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৩৩ পয়সা, বিক্রি করা হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সায়; লোকসান ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
[৩.২] আয়ব্যয়ের এই ভারসাম্যহীনতার কারণে গত অর্থবছরে জন্য ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
[৩.৩] এই বিশাল লোকসানের মধ্যেই বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ৮২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। আর নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে সরকার।
[৪] বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় আয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান মোকাবিলায় মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানান, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং জাতীয় অর্থনীতির উপর আর্থিক চাপ হ্রাস করা।
[৪.১] বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার কারণেই এ দফায় বিদ্যুতের দর বাড়ছে। তবে আবাসিকে গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত থাকবে। প্রতিমন্ত্রী আশ^াস দিয়ে বলেছেন, খুচরা ভোক্তাদের ওপর এ প্রভাব সর্বনিম্ন রাখা হবে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের দাম বাড়ানো হবে, যাতে যাদের সক্ষমতা কম তারা ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ পায়। এতে করে মানুষের জীবনের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
[৪.২] প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খরচ মেটাতে আমাদের খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হতে পারে।
[৫] বিদ্যুত কেনার ক্ষেত্রে ডলারও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার বেসরকারি খাত এবং ভারত থেকে ডলারে বিদ্যুৎ ক্রয় করে।
[৫.১] নসরুল হামিদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না। পেমেন্টের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য মাসিক ১০০ কোটি ডলারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন।
[৬] ডলার সংকটের এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আর্থিক সংকট কিছুটা লাঘব করতে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে, যা সম্ভবত ১২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। তবে, কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে চলমান ভর্তুকির সঙ্গে মিলিত এই পদক্ষেপটি যথেষ্ট নাও হতে পারে। শুল্ক সমন্বয় বা অতিরিক্ত বন্ড ইস্যুর জন্য আরও বিবেচনার কথা জানান তারা।
[৭] বিদুৎ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে। এ পটভূমিতেই বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম সমন্বয় পদ্ধতি চালু হচ্ছে।
[৮] সরকার আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি থেকে পুরো বেরিয়ে আসতে চাইছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পর্যালোচনা বলছে, ভর্তুকি তুলে দিলে বিদ্যুতের দাম ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে। সংস্থাটির সুপারিশ, ধাপে ধাপে দাম বাড়ালে জনগণের জন্য সহনীয় হবে। ফলে চলতি বছর কয়েক ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির ভর্তুকির প্রয়োজন ছিল ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।
[৯] সমকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমে যাবে।
[১০.১] তিনি বলেন, দুর্নীতি কমিয়ে, লোড ব্যবস্থাপনা করে এবং ক্যাপাসিটি চার্জের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান করলেই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসে। গ্রাহকের ওপর তা চাপাতে হয় না।
আপনার মতামত লিখুন :