শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০৯ রাত
আপডেট : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: আপত্তিকৃত ধারা বাদ, সন্তুষ্ট আন্দোলনকারীরা

অনানুগত্যে চাকরি থেকে অপসারণ দণ্ড এবং অনুপস্থিত থাকতে অন্যকে উসকানি ও প্ররোচিত করার বিষয়টি বাদ পড়ার পাশাপাশি শাস্তির আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করে 'সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) উপদেষ্টা পরিষদের ৩২তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিকে আপত্তি আমলে নিয়ে 'সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।  

'সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫' বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতিতে এ সন্তুষ্টির কথা জানানো হয়।  

বিবৃতিতে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনযন্ত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বহাল ও বিদ্যমান থাকায় অহেতুক এ ধরনের অধ্যাদেশ জারির প্রয়োজন ছিল না। যা হোক, কালো অধ্যাদেশটি সংশোধনের জন্য সরকারের বোধোদয় হয়েছে এ জন্য সারা দেশের ১৮ লক্ষ কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনটি ছিল মূলত সামরিক শাসনামলের বিতর্কিত ও কালো কানুন বাতিল করার জন্য। বর্তমান সরকার কর্মচারীদের আপত্তি ও আশঙ্কাগুলোকে বিবেচনায় এনে সংশোধন করেছে। এটি মন্দের ভালো দিক।  

নজরুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধ্যাদেশের সংশোধনীতে অনানুগত্যে চাকরি থেকে অপসারণ দণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে উসকানি ও প্ররোচিত করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে ইচ্ছুক কি না নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে।

এতে আরও জানানো হয়, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে।  

তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রতিবেদন দাখিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে এটি তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য হবে। এ অদক্ষতা এসিআরে লিপিবদ্ধ হবে। প্রয়োজনে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।  

কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হলে তা আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সেই কর্মচারী এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন।  

এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ এই সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাবে সম্মতি দিলে এর প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।  

সরকারি চাকরি আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরোনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামে একটি ধারা সংযোজন করা হয়। নতুন এই ধারায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়ী হলে সাত দিন করে নোটিশ দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছিল।

অনুমোদনের আগে অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে যা ছিল-

কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;

এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উসকানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;

কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।

অধ্যাদেশটিতে এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছিল।

এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিশ দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে বলা হয়েছিল।

অধ্যাদেশটিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল করার সুযোগও রাখা হয়েছিল। দণ্ডের নোটিশ হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার পারবেন বলা হয়েছিল।

সংশোধিত অধ্যাদেশটিকে তখন ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে পুরো সচিবালয়ে জুড়ে প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলন চলে। এ আন্দোলনে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে এ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মো. নূরুল ইসলাম, মো. বাদিউল কবীর ও মো. নজরুল ইসলাম।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি আন্দোলনরত সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের আলাপ-আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের আপত্তি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।  

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়