মনিরুল ইসলাম: দেশকে উন্নত করতে হলে আওয়ামী লীগকেই দরকার। অনেক রকমের কথা শুনি। আজকেই সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওইটা করবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে যে মর্যাদা পেলাম, আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করবে কে?
রোববার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বাজেট বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালের আগস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল, তবে পরবর্তীতে এই চাপ সামলাতে গিয়ে এটি হ্রাস পেতে শুরু করে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের ক্রমহ্রাসমান হার বেড়ে যায়। বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ যথেষ্ট।
সংসদ নেতা বলেন, কঠিন সময়ের মধ্যে এবারের বাজেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের দাম বিশ্বে বেড়েছে। যার আঘাত বাংলাদেশেও লেগেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনসের কারণে অনেক অর্থনৈতিক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা বাজেট দিতে পেরেছি, সেটাই সব থেকে বড় কথা।
জনগণ ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এ বাজেট দিতে পারছি। এ বাজেটটি আমাদের মেয়াদের ১৫তম। চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ নির্বাচন এ বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট। তবে একেবারে শেষ কি না সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। নানা ধরনের কথা বলেছেন। অনেকে সংস্কারের কথা বলেছেন। আলোচনা-সমালোচনা যাই করুক না কেন বাজেট নিয়ে যে তারা চিন্তা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামী বছরের বাজেট নিয়ে যারা মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জনগণের উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে স্বাবলম্বী করা। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পর মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে দেশ হিসাবে থাকতে চায়।
তিনি বলেন, এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা, এতকিছু হচ্ছে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেই জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ এতদিনে অনেক দূর, অনেক উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হতে পারত। তবে আমি বলবো এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময় সময় সমস্যাতো আসেই। এটা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না, এটা মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যুতের একটা অভাব ছিলো। রাশিয়া-ইউত্রেন ও স্যাংশনের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এমন কী কয়লা, এলএনজি বা তেল পাওয়াও যাচ্ছিল না। যাহোক সেটা থেকে আমরা মুক্ত হচ্ছি। সবাইকে এটাই বলবো বিদ্যুত উৎপাদনে যে খরচ সেটা তো সবাইকে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে আর কত ভর্তুকি আমরা দেবো। সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কাজেই বিদ্যুত ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন সেই আহ্বান জানাই।
রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করবো, সেই কাজই শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের ৪টি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে তা হলো স্মার্ট সিটিজেট, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। সম্পাদনা: নাহিদ হাসান
এমআই/এনএইচ