নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা, প্রথম আলো ও ডেইলিস্টার ভবনে অগ্নিসংযোগ, ছায়ানট-উদীচির কার্যাল ভাঙচুর- এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার সময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নিষিক্রয়তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ব ওঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ভোট বানচালের জন্য টার্গেট কিলিংয়ের মিশনে মাঠে নামানো হয়েছে একদল কিলারকে। নির্বাচনের আগে গুপ্ত হত্যার ঘটনা আরও বাড়বে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠেছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে। অনেকের অভিযোগ, গত একবছরেরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ভেঙে পড়া চেইন অব কমান্ড মেরামত করতে তিনি পারেননি।স হিংসতার নানা ঘটনা রোধে পুলিশ, র্যাব, বিজেবি ও অনন্য বাহিনীকে আগের মতো তৎপর ভূমিকায় পাওয়া যায় না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, অনেক কিছুই তার নিয়ন্ত্রণ নেই। সততার অনন্য নজীর গড়লেও স্বরাষ্ট্রে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর যোগ্যতা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
দেশের চলামান পরিস্থিতিতেজনসাধারণের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষেরা। কিছু আশ্বাস আর হুংকার ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিতে পারেনসি। এ অবস্থায় তার পদত্যাগে দাবি তুলেছে ইনকিলাব মঞ্জসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন।
আাইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান বেহাল দশাতেও অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আস্থা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীতেই। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্বে তিনিই থাকছেন। উপদেষ্টা পরিষদে কোনোধরনের রদবদলও আর হচ্ছে না। যদিও গুঞ্জন ওঠেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়ার এবং উপদেষ্টা পরিষদে নতুন দুজন সদস্য যুক্ত করার। কিন্ত মেয়াদের শেষপর্যায়ে কোনো ধরনের রদবদলে যায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। আগামীতেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন হচ্ছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। বুধবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সচিব। এতে অনেকটাই নিশ্চিত যে, উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল আর গজ্ঝে সা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পরে অনেক ভালো ভাবে কাজ হচ্ছে। তিনি সৎ মানুষ। বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্থলে বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী থাকবেন এবং জাতীয় নির্বাচনে সব দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি তিনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। হাদির মৃত্যুর পর তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দু’দিন ধরে গুঞ্জন আছে।
এর আগে, গত রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর বৈঠকে অংশ নেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পদত্যাগ করলে এখানে বসতাম না। এর আগে, আততায়ীর বুলেটে বিদ্ধ হয়ে টানা ৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৮ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেছেন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির অকুতোভয় যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উপদেষ্টার দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। গণমাধ্যমে একটি গুঞ্জন ছিলো।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তাকে সরিয়ে ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়