বছর পাঁচেক আগের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনও ভুলতে পারেন না ধামরাইয়ের মিম আক্তার। নিজের পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় তদন্তের নামে বাড়িতে গিয়ে হাজির হন পুলিশের ডিএসবি শাখার এক কর্মকর্তা। হোল্ডিং নম্বরে নামের বানান ভুলের অজুহাতে তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে পাঠাতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন তিনি। বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছিল মিমকে। এবার মেয়ের পাসপোর্ট করতে এসে যখন শুনলেন পুলিশ ভেরিফিকেশন আর লাগবে না, তখন তাঁর মুখে ফুটে উঠল স্বস্তির হাসি। রোববার রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে বসে তিনি বলছিলেন, তদন্তের নামে বছরের পর বছর যে আতঙ্ক আর হয়রানি চলত, তা বন্ধ হওয়া সত্যিই সাধারণ মানুষের জন্য বড় স্বস্তি।
সরেজমিন আগারগাঁও বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারগুলোয় নেই আগের মতো উপচেপড়া ভিড়। ছবি তোলা শেষে আবেদনকারীরা হাসিমুখে বের হচ্ছেন। পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের ফলে স্বস্তির কথা জানান সেবা নিতে আসা মানুষ। আবার পুলিশ প্রতিবেদন শিথিল করায় পাসপোর্টের প্রক্রিয়াও দ্রুততর হয়েছে।
পাসপোর্ট অফিস জানিয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধ হওয়ায় অপেক্ষমাণ থাকা প্রায় এক লাখ আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেওয়া সহজ হয়েছে। বিগত সময়ে পুলিশ প্রতিবেদন প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে সেগুলো ঝুলে ছিল।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আলামিন সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। পাসপোর্ট তুলতে এসে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধান বাতিল হওয়ায় অনেক হয়রানি থেকে মুক্ত হওয়া গেছে। পাসপোর্ট করতে পুলিশের তদন্ত একটা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।
আলামিন বলেন, আমরা এ দেশের নাগরিক, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। যদি আমার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধ থেকে থাকে, তাহলে সেটি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমার পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার পরে পুলিশ তদন্তে যাবে, এটি মোটেও কাম্য নয়। এই নিয়ম তুলে দেওয়ার কারণে মানুষের ভোগান্তি কমেছে।
তবে প্রথমবার পাসপোর্ট করতে আসা নাজমুন নাহার অর্পিতা বলেন, আবেদনকারীর তথ্য সঠিক আছে কিনা, সেটার জন্য অবশ্যই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তবে পুলিশ তদন্তের নামে মানুষকে যেভাবে হয়রানি করে, এটা খুবই দুঃখজনক। আগে বেআইনিভাবে টাকা না দিলে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে রাখা হতো।
মেহেদী হাসান গত বৃহস্পতিবার সুপার এক্সপ্রেস আবেদন জমা দিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে। গত রোববার আগারগাঁও অফিসে পাসপোর্ট নিতে এসে তিনি সমকালকে বলেন, পুলিশি তদন্ত তুলে দেওয়ার কারণে একধাপ হয়রানি বন্ধ হয়েছে। পুলিশের হয়রানির কারণে পাসপোর্ট অফিস নিয়েও মানুষের মনে নেতিবাচক ভাবনা ছিল। এখন মানুষের পাসপোর্ট পাওয়া সহজ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ শিহাব উদ্দিন খান সমকালকে বলেন, আগে অনেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশি প্রতিবেদন পেতে দেরির কারণে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়েছে। এ কারণে পাসপোর্ট অফিস সম্পর্কেও জনসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। এটা বাতিল হওয়ায় জনসাধারণ পাসপোর্ট পেতে হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রতিবেদন শিথিল করায় অপেক্ষায় থাকা প্রায় এক লাখ আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দালাল-প্রতারকের দৌরাত্ম্যও কমে এসেছে।
এর আগে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। সেখানে জানানো হয়, নতুন পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাইকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যতিরেকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে। উৎস: সমকাল।