শিরোনাম
◈ বাংলাদেশি ব‌লে গালি দিয়ে বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম তাড়ানোয় হতাশা ওড়িশায় ◈ শতভাগ ফিট না হলে নেইমার-ভিনিসুসদের বিশ্বকাপ খেলা হবে না  ◈ দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় শক্তি: তারেক রহমান ◈ আগামী ৮ জুলাই শুরু হ‌বে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ◈ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ–আহতদের জন্য ২,১০৬ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা ◈ সি‌লে‌টে নয়, ঢাকা পর্ব দি‌য়ে শুরু হচ্ছে বিপিএল ◈ মধ্যরাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বাড়ানো হলো নিরাপত্তা ◈ মোদির শুভেচ্ছায় কৃতজ্ঞতা জানালো বিএনপি ◈ রাঙ্গামাটিতে কয়েক সেকেন্ডের মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত ◈ বিদেশে আশ্রয় আবেদনে শীর্ষে বাংলাদেশিরা: বাড়ছে আবেদন, কমছে স্বীকৃতি

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৮ দুপুর
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ–আহতদের জন্য ২,১০৬ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা

মিরপুর ১৪ নম্বরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ভেঙে জুলাই যোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা হবে আবাসিক ফ্ল্যাট

সহযোগীদের খবর: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের স্থায়ী আবাসন সুবিধা দিতে ২ হাজার ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। রাজধানীর মিরপুরের ৯ ও ১৪ নম্বর সেকশনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জায়গায় দুই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে ২ হাজার ৩৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্প দুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে জুলাই যোদ্ধা ও সংশ্লিষ্টদের। সূত্র: বণিক বার্তা প্রতিবেদন

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর সেকশন-৯ ও মিরপুর সেকশন-১৪-এর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–২৪-এ শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে ‘৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় মিরপুর ১৪ সেকশনের পুলিশ লাইনসসংলগ্ন, ষাটের দশকে অধিগ্রহণ করা ৫ দশমিক শূন্য ৮ একর জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। সেখানে ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুট আয়তনের মোট ৮০৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বেজমেন্টসহ ছয়টি ১৪ তলা ভবনে ৬০০টি এবং ১২টি ১০ তলা ভবনে ২০৪টি ফ্ল্যাট করা হবে। এছাড়া থাকবে এক হাজার কেজির বেড লিফট, ৮০০ কেজির প্যাসেঞ্জার লিফট, সোলার, জেনারেটর, সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৬-এ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরে।

অন্যদিকে ঢাকার মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধা পরিবারের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ১ হাজার ৫৬০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট। ফ্ল্যাটগুলো ১৫ তলা ভবনে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে পার্কিং, বেজমেন্টে থাকবে দোতলা। বাকি ১৩ তলায় আটটি করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনেও লিফট, সোলার, জেনারেটর, সিসি ক্যামেরাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এ প্রকল্প জুলাই ২০২৫ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুনে শেষ হবে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এসব ভবনের সামনে খেলার মাঠ, শিশু পার্ক, সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে বাজার ও শপিং মলসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ফ্ল্যাটে আহতদের জন্য থাকবে বাড়তি সুবিধা।

শহীদ পরিবারের জন্য নেয়া প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের প্রথম একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলেও যথার্থ মূল্যায়নের অভাব ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগে বাদ দেয়া হয়। সে সময় প্রকল্পের ডিপিপি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। নির্দিষ্ট বিধিমালা না হওয়া, আন্তঃমন্ত্রণালয়গত সমন্বয়হীনতা ও ব্যয়ের যথার্থ মূল্যায়ন না হওয়ায় স্থগিত করা হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে সরকারের মেয়াদ শেষ হবে—সেজন্য তাড়াহুড়া করে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে মিরপুর-১৪ সেকশনে বসবাসরত বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করতে আরেকটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। যেখানে ব্যয় হবে ৫৮২ কোটি টাকা। ফলে এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আরেক প্রকল্প নেয়া রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘‌কোনো প্রকল্প নেয়ার আগে সেটা কোথায় বাস্তবায়ন করা হবে, সেটার স্টাডি হওয়া দরকার। জুলাই শহীদদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে প্রকল্পটি আগেই নেয়া দরকার ছিল। এখন নেয়ার কারণে বসবাসকারীদের জন্য আবার আরেকটি প্রকল্প নিতে হচ্ছে। এখন দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এটা বলব অবিবেচনাপ্রসূত পরিকল্পনা।’

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের প্রকল্পটি নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে পরিকল্পনা কমিশনের। তাদের প্রশ্ন, রাজধানীতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হলে ঢাকার বাইরের অঞ্চলের জুলাই যোদ্ধারা সেটা নেবে কিনা। যদি না নিয়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য কী করা হবে—এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া প্রকল্প অনুমোদন করতে সমীক্ষা যাচাই করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেটা করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‌জুলাই শহীদ পরিবারের জন্য প্রকল্পটি নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ওঠে। সে সময় উপদেষ্টারা পুনরায় মূল্যায়নের জন্য ফেরত পাঠান। ডিপিপি ঠিক করে আবার জমা দিতে বলা হয়।

সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে কোনো সংস্থার কাছে ডিপিপি ফেরত পাঠালে সেভাবে আর গুরুত্ব দিয়ে সংশোধন করা হয় না। ১০টা বিষয়ে আপত্তি দিলে দুইটা করে জমা দেয়। এক মাসের মধ্যে দিতে বললে ছয় মাস পরে দেয়। এগুলো মৌলিক সমস্যা হয়ে গেছে। এ প্রকল্পে অনেকগুলো সংশোধনী দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কয়েকটা সংশোধন করে পুনরায় জমা দিয়েছে। এখন অনুমোদন পেল, এরপর অনেক কাজ বাকি আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড়, ভূমি উন্নয়ন করতে গেলে বসবাসকারী বাসিন্দদের সঙ্গে আলোচনা, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার নিয়োগ, টেন্ডার হওয়ার প্রক্রিয়াগুলো বেশ দীর্ঘ। সেগুলো করতে করতে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে। তখন পরবর্তী সরকার প্রকল্প চালিয়ে নিবে কিনা। না নিলে নতুন কী প্রক্রিয়া হবে এসবও দেখার বিষয় আছে।’

একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রকল্প দুটির বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‌যারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছে এবং শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিতে গেলে উত্তরাধিকার কে হবে সেটা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সমস্যা আছে। এটা হয় আদালত নয়তো নিজেরা ঠিক করেছে। সেখানে কোন পরিবার কী সাহায্য পাবে সেটি দেখে ঠিক করা হয়েছে। নীতিমালা করা হয়েছে সে অনুযায়ী বরাদ্দ পাবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‌এখন অনুমোদন পেয়েছে। আগে ফ্ল্যাট নির্মাণ হোক। তারপর জুলাই ফাউন্ডেশন আর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কারা অগ্রধিকার ভিত্তিতে পাবে। আমরা তো আশা করি পরবর্তী সরকার প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে ফ্ল্যাট প্রকল্প অনুমোদন পেলেও বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থা জুলাই যোদ্ধাদের। তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে সরকারের হাতে আছে দুই মাস। এর মধ্যে প্রকল্পটি কতটুকু এগোতে পারবে। আর পরবর্তী সরকার যে এটি চালিয়ে নেবে তার নিশ্চয়তা কী। এটি যদি এক বছর আগে অনুমোদন করা হতো তাহলে অনেকদূর কাজ এগিয়ে যেত।’

২৪-এর অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এখন শুরু হলে অনেক দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল শহীদ পরিবারের জন্য প্রকল্পটির কাজ প্রথম দিকে শুরু করা। এখন আইনি, প্রশাসনিক বা আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে এটাকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন যে দল সরকারে আসবে তারা স্থগিত করতে না পারে। এর জন্য ছাত্র প্রতিনিধি, জুলাই যোদ্ধা, ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ে একটি কমিশন করতে হবে।’

একনেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ১৭ প্রকল্প অনুমোদন: গতকাল একনেকে ১৫ হাজার ৩৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ১২টি ও সংশোধিত প্রকল্প পাঁচটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৯ হাজার ৪৫১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা ৭০ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

একনেক সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি, গৃহায়ন ও গণপূর্তের তিনটি; সেতু মন্ত্রণালয়ের দুটি; স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের তিনটিসহ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, সমাজকল্যাণ, অর্থ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি করে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়