দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সাত শ্রেণীর খতিয়ানকে চিরতরে বাতিল ঘোষণা করছে সরকার। নতুন আইন ‘দলিল যার জমিদার আইন’ এবং আসন্ন ২০২৬ সালের ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড চালুর ফলে এসব খতিয়ানের ভিত্তিতে আর জমির মালিকানা দাবি করা যাবে না।
সরকার জানিয়েছে, যারা পূর্বে ভুল তথ্য, প্রতারণা, দ্বৈত রেকর্ড, অবিভক্ত মালিকানা বা অনিয়মের মাধ্যমে খতিয়ান তৈরি করেছিলেন—ডিজিটাল রেকর্ড চালু হলে এসব খতিয়ান অকার্যকর হয়ে যাবে। এতে প্রকৃত মালিকেরা তাদের জমি ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
কোন কোন ৭ ধরনের খতিয়ান বাতিল হচ্ছে?
১. দ্বৈত বা দ্বিতীয়বার তৈরি করা খতিয়ান
একই জমির ওপর দুইজন ব্যক্তি আলাদা সময়ে খতিয়ান করে নিলে বা প্রতারক বিক্রেতা একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করলে—এই ধরণের দ্বিতীয় খতিয়ান সম্পূর্ণ বাতিল হবে।
প্রথম বৈধ ক্রেতাই জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।
২. অবিভক্ত সম্পত্তির যৌথ খতিয়ান
পূর্বের যৌথ খতিয়ান ব্যবস্থা বাতিল হচ্ছে। কোনো পরিবার ভাগ-বণ্টন না করে যৌথ খতিয়ান ধরে রাখলেও, ডিজিটাল সার্ভে চলাকালে সবার নামে আলাদা আলাদা খতিয়ান তৈরি হবে। যৌথ খতিয়ানের আর কোনো আইনগত অস্তিত্ব থাকবে না।
৩. উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে আংশিক নামজারি
আগে উত্তরাধিকারীরা আলাদা আলাদা অংশ হিসাব করে আংশিক নামজারি করতে পারতেন; এখন সেই সুযোগ বাতিল। পরিবারের এক বা কয়েকজন গোপনে সবথেকে দামি অংশ দখলে নেওয়া বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
৪. শিকস্তি–পয়স্তি (নদীগর্ভে বিলীন বা চর জেগে ওঠা) জমির খতিয়ান
যে জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং ৩০ বছরের মধ্যে নতুন করে চর ওঠেনি—সেসব খতিয়ান আর বৈধ থাকবে না। এসব জমি সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৫. অর্পিত সম্পত্তির খতিয়ান
পরিত্যক্ত বা অর্পিত সম্পত্তি বহু বছর ধরে অনেকেই দখলে রেখেছেন; কেউ কেউ ভুয়া দলিল দেখিয়ে মালিকানা দাবি করতেন। ডিজিটাল রেকর্ডে এসব জমি আর ব্যক্তিমালিকানায় থাকবে না। হিন্দু, বিহারী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দখলকৃত জমির ক্ষেত্রে ভুল খতিয়ানও বাতিল হবে।
৬. দলিল আগে—রেকর্ড পরে মিল না থাকলে রেকর্ড বাতিল
কোনো জমির দলিল বৈধ হলেও যদি রেকর্ডে অন্যের নাম উঠে যায়, অতীতে সেই ভুল রেকর্ড ব্যবহার করে কেউ মালিকানা দাবি করতে পারত। এবার সেই রেকর্ড সম্পূর্ণ বাতিল হবে। দলিল যার নামে—ডিজিটাল রেকর্ডেও তার নামই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৭. জাল–জালিয়াতি করে তৈরি খতিয়ান
ভুয়া দলিল, প্রতারণা, জাল স্বাক্ষর, মিথ্যা হেবা বা প্রতারণামূলক দলিলের ওপর তৈরি সব খতিয়ানই বাতিল ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রকৃত দলিলধারীর পক্ষে জমি ফেরত নেওয়ার সুযোগও থাকছে।
কোন ঝুঁকিতে পড়তে পারেন ভূমি মালিকেরা?
• এ সাত ধরনের খতিয়ানের ওপর নির্ভর করে আর মালিকানা দাবি করা যাবে না।
• ২০২৬ সালের ডিজিটাল রেকর্ডে এসব খতিয়ান গ্রহণযোগ্য হবে না।
• ভুল খতিয়ানের কারণে ভবিষ্যতে জমি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।
• এখনই সংশোধন না করলে ডিজিটাল রেকর্ডে নিজের নামে জমি যুক্ত করা যাবে না।
প্রকৃত মালিকদের জন্য বড় সুযোগ
নতুন আইনের কারণে—
• প্রতারণায় হারানো জমি ফেরত পাওয়া সহজ হবে
• ভুল বা ফেক খতিয়ানধারীরা মালিকানা হারাবে
• ডিজিটাল রেকর্ডে স্বচ্ছতা ও স্থায়ী মালিকানা নিশ্চিত হবে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমি অপরাধ রোধ ও স্বচ্ছ রেকর্ড গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি দেশের ইতিহাসে বড় সংস্কার।
সূত্র: জনকণ্ঠ