শিরোনাম
◈ ক্ষণজন্মা নক্ষত্র সালমান শাহ: প্রয়াণের ২৯ বছরেও অম্লান স্মৃতিতে, জনপ্রিয়তায় এখনও সবাইকে ছাড়িয়ে ◈ মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন নিয়ম ◈ লক্ষ্মীপুরে যাত্রীবাহী বাস খালে পড়ে নিহত ২ ◈ নুরাল পাগলার কবরকেন্দ্রিক সংঘর্ষ: পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরে ৩,৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ◈ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? ◈ এবার গণঅধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ করার দাবি জাতীয় পার্টির মহাসচিবের ◈ কক্সবাজা‌রের নাফ নদীতে আরাকান আর্মির তৎপরতা, জেলে নিখোঁজ, কী হচ্ছে সেখানে? ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন: এক বছরে মন্দা থেকে শীর্ষে বাংলাদেশ ◈ শনিবার সাধারণ ছুটি : কারা পাবেন, কারা পাবেন না ◈ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুজন গুলিবিদ্ধ

প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৮ দুপুর
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?

এল আর বাদল : এই হামলা শুধুমাত্র ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে নয়। যদি ছত্রভঙ্গ করতেও চাইতেন, তাহলে আপনি (সেনা-পুলিশ) তো হাতে আঘাত করতে পারতেন, পায়ে করতে পারতেন। আপনি কেন মাথায় মারতেছেন, কেন চোখে মারতেছেন, আপনি কেন বুকে মারতেছেন," দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর সেনা-পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা সম্পর্কে বলছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।

গত ২৯শে অগাস্ট রাতে ঢাকার কাকরাইল এলাকায় জাতীয় পার্টির সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে লাঠিপেটার ওই ঘটনাটি ঘটে। দলটি দাবি করেছে, সেই ঘটনায় তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ---- বি‌বি‌সি বাংলা

তাদের মধ্যে দলের সভাপতি নুরুল হক নুরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

গণঅধিকার পরিষদের অভিযোগ, সেনা সদস্যদের নেতৃত্বে "পরিকল্পিতভাবে" তাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

আমাদের নেতাকর্মীদেরকে মাটিতে ফেলে, এমনকি যারা অফিসের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে সেখানে গিয়ে নির্বিচারে পেটানো হয়েছে। বেধড়ক পিটুনিতে নুরুল হক নুরুর নাক ভেঙে গেছে, চোখে আঘাত লেগেছে," বলছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

এসব দেখে আমাদের কাছে এখন যেটি মনে হয়, এটি একটা মাস্টারপ্ল্যান ছিল এবং সেই মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই নুরুল হক নুরকে চিনতে পারার পরেও এভাবে হামলা চালিয়েছে," বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. খাঁন।

পাঁচই অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়ায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তখন সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে রাখে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

গত এক বছর ধরে মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুক্ষেত্রে তারা যে ভূমিকা রেখেছে, সেটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হতে দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে "মাত্রাতিরিক্ত" বলপ্রয়োগ করছেন, আবার কোথাও কোথাও "অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন"। একই ধরনের ঘটনায় দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখানোয় বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

কোথাও কঠোর, কোথাও নরম

গণঅধিকার পরিষদের ঘটনাটির আগে সংঘর্ষের আরেকটি ঘটনায় "মাত্রাতিরিক্ত" বলপ্রয়োগ করে সমালোচনার মুখে পড়তে দেখা গিয়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

গত ১৬ই জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের হামলার জেরে সংঘর্ষটির সূত্রপাত হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় চলা সংঘর্ষের একপর্যায়ে সেনা-পুলিশের সদস্যরা গুলি চালালে বেশ কয়েক জন প্রাণ হারান।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের এসব ঘটনার বিপরীতে কিছুক্ষেত্রে আবার উল্টো চিত্রও লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনায় একটি গণপিটুনির ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মানবাধিকারকর্মী সহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়।

ইসলামের নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গত বছরের চৌঠা সেপ্টেম্বর একদল ব্যক্তি মব তৈরি করে পুলিশের কার্যালয়ের ভেতরেই হিন্দু ধর্মের এক তরুণকে গণপিটুনি দেয়।

উৎসব মন্ডল নামের ওই তরুণকে তারা যখন গণহারে পেটাচ্ছিলো, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তখন পাশেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু গণপিটুনি ঠেকাতে তাদেরকে সেভাবে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

মারধরের একপর্যায়ে মৃত ভেবে ফেলে যাওয়ার পর সেনা সদস্যরা মি. মন্ডলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। গণপিটুনিতে ছেলেটি মারা গেছে বলে প্রথমদিকে খবর প্রচারিত হলেও পরে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয় যে, মি. মন্ডল বেঁচে রয়েছেন।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোথাও কঠোরতা, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নমনীয় ভাব দেখানোর এমন সব ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা।

"মব যে ব্যাপারটা, পুলিশের ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি, সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও দেখছি যে, যথাযথ ভূমিকা তারা গ্রহণ করতে পারছে না," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।

"কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখছি তারা এক্সট্রিম পর্যায়ে অবস্থান নিচ্ছে, আবার কোনো কোনো পর্যায়ে দেখছি তারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছে অথবা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর এই ধরনের অবস্থান মানুষের ভেতর নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে," বলেন মি. লিটন।

দায় কার?

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যখন সেনাবাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর তাদেরকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একবছর পরে এসেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো মব সহ নানান বিশৃঙ্খলা সংঘটিত হতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, পুলিশ বাহিনীও পুরোপুরিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীকে ক্যান্টমেন্টে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

কিন্তু মাঠে রাখা হলেও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের যে "পরিষ্কার নির্দেশনার" ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে, সেটির দায় কার? সেনাবাহিনীর নাকি সরকারের?

"যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেই জায়গায় আসলে সংকটটা রয়ে গেছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

এই বিশ্লেষকের মতে, দেশের আইনশৃঙ্খলা কীভাবে রক্ষা করা হবে, মব কিংবা রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছ এবং সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান নেই।

"সেটা না থাকার কারণে এটার যে প্রয়োগের জায়গা, সেই প্রয়োগে বিভিন্ন রকমের ভিন্নতা তৈরি হচ্ছে এবং যা থেকে কিছু কিছু বিতর্কের জায়গাও তৈরি হচ্ছে," বিবিসি বাংলাকে বলেন অধ্যাপক ইসলাম।

এদিকে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে গত ২৯শে অগাস্টের লাঠিপেটার ঘটনার পর আইএসপিআরের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, মব সহিংসতার বিরুদ্ধে অন্তর্বতী সরকারের "জিরো টলারেন্স নীতি" বাস্তবায়ন করতে গিয়েই গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন সেনা সদস্যরা।

অন্যদিকে, সেনা-পুলিশের লাঠিপেটায় গণঅধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুর আহত হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকেও বিবৃতি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানাতে দেখা যাচ্ছে।

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্যের এমন ফারাকের কারণেও "নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ডালটালা মেলছে" এবং সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়