শিরোনাম
◈ গণহত্যার ভার বইতে না পেরে ইসরায়েলি সেনাদের আত্মহনন: যুদ্ধে ফেরেনি প্রায় ১ লাখ সেনা: গণমাধ্যম ◈ ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্র রুখতে হবে: শাহবাগে ছাত্রসমাবেশে মির্জা ফখরুল ◈ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা উন্নয়নে এডিবি-বাংলাদেশের ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি ◈ সৌদি আরবে একদিনে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ◈ শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন এনসিপি নেতাকর্মীরা ◈ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে ৫ আগস্ট পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা ◈ সুখবর এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য ◈ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর শাহবাগ (ভিডিও) ◈ সব ব্যক্তিশ্রেণির জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, কিছু শ্রেণি ছাড়ের আওতায় ◈ কালীগঞ্জে আকস্মিকভাবে বিশাল আকৃতির শতবর্ষী গাছ উপড়ে পড়ল ভবনের উপর, আহত ১ 

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০২:৪২ দুপুর
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ: ভূমি-সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে ৩০ বছরের পরিকল্পনা

ভূমি-সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে ৩০ বছরের পরিকল্পনা
প্রকল্প হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

দেশের ভূমি ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা প্রণয়নে ৩০ বছর মেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি, ভূগর্ভস্থ অঞ্চল, আকাশ, সমুদ্রসহ দেশের সামগ্রিক আঞ্চলিক উন্নয়নের কৌশল ও দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর সম্প্রতি প্রকল্পটির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। পরিকল্পনাটি প্রণয়নে ৮০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জনসংখ্যার সুষম বণ্টন ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে আনা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায় বিবেচনা করে সব ক্ষেত্রে থাকবে নির্ধারিত কাঠামো। এ ছাড়া ভূমি সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য ভূমি ব্যবহারের শ্রেণিবিন্যাসও তৈরি করা হবে। আঞ্চলিক পরিকল্পনার সঙ্গে জাতীয় খাতভিত্তিক নীতিমালা সমন্বয় করা হবে। এতে দেশের সীমানা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে অর্থনৈতিক করিডোর, নিরাপত্তা, সড়ক, রেল, জলপথ সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলন কপ-১৫ এ ‘কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ২০২৬ সালের মধ্যে জীববৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত একটি জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামো প্রণয়ন; ২০২৮ সালের মধ্যে জীববৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত স্থানিক পরিকল্পনাবিষয়ক আইন প্রণয়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জীববৈচিত্র্য সংবেদনশীল জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনার একীভূতকরণ সম্পন্ন করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। বছরের শুরু থেকেই এ নিয়ে সভা, সেমিনার, কর্মশালা হয়। গত ৭ জুলাই গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বসে। পরে ১৭ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির খসড়া অনুমোদন দেয়।

প্রকল্পের খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনার বিস্তৃতি হবে দেশজুড়ে। ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চলও এর আওতায় থাকবে। ২০২৫ থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনাটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো এবং পাঁচ বছর অন্তর পর্যালোচনা করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগের ঝুঁকি মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।

খসড়ায় আরও বলা হয়, ২০৫০ ও ২১০০ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রক্ষেপণ বিবেচনা করে প্রস্তুত করা হবে বন্যার ঝুঁকি মানচিত্র। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি মূল্যায়নে অতীতের ঘূর্ণিঝড়ের ঢেউ, জোয়ার এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা মডেল বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নেওয়া হবে। জাতীয় পরিকল্পনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে দক্ষ, নির্ভুল ও উপস্থাপনযোগ্য ব্যবহারকারীবান্ধব ওয়েব-জিআইএসভিত্তিক ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মতো জনবহুল কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকাজের জন্য প্রতিটি ইঞ্চি জমি রক্ষা করা জরুরি। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে প্রতি বছর শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। দেশে ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতের খাদ্য উৎপাদনে সরাসরি হুমকি। গত এক দশকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ছয় শতাংশ। দেশের নগরগুলোর জিডিপিতে ৬৫ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখে ও আগামী বছরগুলোয় তা দ্রুত বাড়বে। দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ২৬৫ জন লোক বসবাস করে। দ্রুত এ নগরায়নকে টেকসইভাবে বৃদ্ধির জন্য একটি জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রথম পঞ্চবার্ষিকীতে (১৯৭৩-১৯৭৮ সাল) স্থানিক পরিকল্পনা অধ্যাদেশ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। পরে কোনো সরকারই সেটি বাস্তবায়ন করেনি। এতে প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেটে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়, তাতে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সংযোগ থাকে না। সরকার জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দেশের ভূমি, সম্পদ আর পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলী কালবেলাকে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আর নগরায়ণের কৃষিজমি বাঁচিয়ে রাখতে জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি। এরই মধ্যে পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি অনুযায়ী-২০২৮ সালের মধ্যেই আমরা স্থানিক পরিকল্পনাবিষয়ক একটি আলাদা আইন প্রণয়ন ও পরিকল্পনা করতে পারব।’ উৎস: কালবেলা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়