শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৪ মে, ২০২৫, ০৬:২৫ বিকাল
আপডেট : ০৪ মে, ২০২৫, ১০:১২ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

সরকার বাধা দিচ্ছে না, সব কিছু লিখতে পারছেন সাংবাদিকরা: তথ্য উপদেষ্টা

মনজুর এ আজিজ: সরকারের কোনো রকম বাধা ছাড়াই মানুষ সব কিছু লিখতে পারছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের মেয়ে একটি লেখা লিখেছেন। সেখানে লেখা ছাপাতে কোনো প্রকারের বাধা দেওয়া হয়নি। তবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মিথ্যা মামলা নিয়ে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, সাবেক সরকারের ১৫ বছরের অপশাসনের ক্ষোভ থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব মামলা করছে। তবে সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের ক্ষোভ আছে এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। গত ১৫ বছরের যে ক্ষোভ আছে সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে সেটা আমরা এবং পুরো বাংলাদেশের পলিটিক্যাল সিস্টেম ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছি। যার বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ আছে সেই অভিযোগে মামলা হয়নি। হয়েছে হত্যা মামলা। এটা নিয়ে আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। আমরাও বারবার বলার চেষ্টা করছি। আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এটা একটা জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। মামলা হওয়া ও লিগ্যাল প্রসিডিং চলা দুটো ভিন্ন বিষয়।

মামলা যে কেউ করতে পারে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করছে কি না, সেখানে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারেন।

মামলা বাণিজ্যকে পুরোনো সংস্কৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। অনেক ধরনের রাজনৈতিক দল এখানে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে আছে। শুধু একমাত্র সরকারে নেই। সব ধরনের ভরকেন্দ্র সামলে সরকার চালাতে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মামলা দেয়। স্থানীয়ভাবে মামলা বাণিজ্য বাংলাদেশে নতুন কোন সংস্কৃতি না। এটা বন্ধ করতে হলে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেটা না হলে ৬০-৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা হবে। গায়বি মামলা হয়ে ধরপাকড় চলতে থাকবে। কেবল সাংবাদিক নয়। আমি-আপনি এর স্বীকার হতে পারি। আমরা এর বিরুদ্ধে।

আমরা কিছুই করতে চাই না, সংবাদমাধ্যম যা ইচ্ছা লেখার অধিকার রাখে। সংবাদ মাধ্যমকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। যত বেশি সংবাদ মাধ্যম প্রশ্ন করে রাষ্ট্রের ভেতর দায়িত্বশীল যারা আছেন, তারা আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য। সংবাদ মাধ্যমকে প্রশ্ন করতে হবে, প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু এটার মেট্রিক্স কী, এটা কীভাবে কাজ করবে। জবাবদিহি করাটাই কী মুখ্য নাকি আসলে আরও ১০টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা ভাবা দরকার। কিন্তু প্রশ্নটা করা দরকার, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও প্রশ্ন করতে হবে। আমাদের সরকার প্রশ্ন নিতে রাজি আছে।

স্বৈরাচার সরকারের সময়ের গণমাধ্যমগুলোর কার্যকলাপ নিয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি দরকার বলে মনে করেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তিনি জানান, বিগত ১৫ বছরে গণমাধ্যমগুলোর কার্যকলাপ রাজনীতিকরণ করার কারণে হাউসগুলোর সাংবাদিকরাই বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়ায় জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। সাংবাদিকতার জন্য করা সুরক্ষা আইন প্রণয়ণের কাজ চলছে। বেতার, বিটিভি ও বাসস নিয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা করার পক্ষে আমি। সরকারি বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণের পক্ষে আমি। ডিএফপির সঙ্গে টাস্কফোর্স গঠন করেছি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মূল্য ও লাইসেন্স পুননির্ধারণ করার জন্য। অধিকাংশ হাউসের এই পলিসি নেই যে, রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কারের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন যে, সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব কমিশন করেছে তা অবাস্তব। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম লাভ করতে পারছে না এগুলো রুগ্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। কিন্তু এসব গণমাধ্যম কোম্পানির মধ্যে যাদের হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে তার আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক। যা প্রমাণ করে এ ধরনের রূপান্তর মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়