শিরোনাম
◈ ‘আমার মা খুকুরানীকে ভুল বুঝিয়ে বক্তব্য নিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া’ (ভিডিও) ◈ রাতের খাবার খেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকসহ ৫০ ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি ◈ আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি : ভারতের হাইকমিশনার ◈ কলকাতার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা ◈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রত্যেককে জবাবদিহিতা করতে হবে: তারেক রহমান ◈ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিল আরএসএস ◈ জি এম কাদেরের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন রিজভী (ভিডিও) ◈ প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ন্যায়বিচার যাতে বিলম্বিত না হয় ◈ তুলসী গ্যাবার্ড চিন্ময়ের গ্রেপ্তার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি: ফ্যাক্টওয়াচ ◈ চীন থেকে ১৯ গোল হজম করে নারী এশিয়া কাপ হকি শুরু করলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫৭ দুপুর
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নজর বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

মহসিন কবির: ১৬ নভেম্বর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার তাদের শাসনপর্বের ১০০ দিন পূর্ণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছেই না। সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলছে। এসব ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কয়েকদিন আগে ঢাকায়  কয়েকটি কলেজ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। যৌথ বাহিনীকে রাস্তায় নেমে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়মিতভাবেই নানা ধরনের অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এদিকে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণকে শান্ত থাকার এবং অপ্রীতিকর কার্যকলাপে অংশ নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বন্দর নগরীসহ ঝুঁকিপূর্ণ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে কোনো মূল্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে ও সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করে। এর রেশ এখনও অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে কোনো কোনো মহল থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য এলেও বিএনপি, জামায়াত, সিপিপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিশিষ্টজনরা যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণের জন্য সব পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এতদিন দেশে একটি অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছিল। তার পতন হওয়ার পর একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে। একটি নির্বাচিত সরকারই পারে সেই শূন্যতা পূরণ করতে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তৎপর হতে হবে।

৫ আগস্টের পর থেকে চলমান সহিংসতা এবং সর্বশেষ মঙ্গলবারে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ আগের মতো কাজ করছে না। তাদের ভেতরও বেশ উৎসাহের অভাব দেখা যাচ্ছে। এটি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। 

ছাত্রদের সংঘর্ষে জড়ানো দুঃখজনক উল্লেখ করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন সফল করল তারাই আবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এর মূল কারণ বিশ্ব বিদ্যালয়, কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ চালু না হওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। আর সম্মিলিতভাবে প্রাথমিক দায়িত্ব হবে যার যার অবস্থান থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের দুই দিক থেকে চিন্তা করতে হবে। বর্তমানে একটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে এবং মানুষের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করতে হবে। আবার এটাও তো সত্য যে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ফেল করছে। শিক্ষক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ছাত্রছাত্রীরা কোন প্রক্রিকায় চলবে, এ নিয়ে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। পুলিশ প্রশাসনও নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, মনোবল কম।

করণীয় সম্পর্কে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, তারপরও পুলিশ-র‌্যাবকে কাজে লাগিয়ে খুনাখুনি-মারামারি যাতে নয় হয়, সর্বত্র আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়, এই বিষয়টাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে, বন্ধ করার উপায় বের করতে হবে। 

আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অবস্থা ভালো না। আগে থেকেই খারাপ ছিল, এখন তা ফেটে বের হচ্ছে। গ্রামে, শহরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সরকারি অফিসে এই অবস্থা বিরাজ করছে। যে রকম অবস্থা হলে মানুষ সন্তুষ্ট থাকে এই অবস্থার ধারে-কাছে তারা নেই। সুতরাং চলমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দেরি করা চলবে না। পাশাপাশি জনসাধারণও উচিত নিজ নিজ এলাকায় সচেতন থেকে আইনশৃঙ্খলার প্রতি সম্মানের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করা। জনসচেতনতা থাকলে এসব সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট করলে এরপর তো ভারতের বিভ্রান্তি থাকার কারণ দেখি না। ভারতেও অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো নিয়ে আমরা কোনো কথা বলি না। তাদেরও এই বিষয়গুলো ধৈর্যের সঙ্গে দেখা, বোঝা এবং যুক্তিসঙ্গত অবস্থানে থাকাই উত্তম বলে আমি মনে করি। স্পর্শকাতর সময়ে আবেগী প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হচ্ছে না।

সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় দিল্লি ও ঢাকার পাল্টাপাল্টি বিবৃতি বিষয়ে এম হুমায়ুন কবির বলেন, এটাতো ঢাকাকে করতেই হবে। সরকার তার স্বাভাবিক কূটনৈতিক কাজটিই করেছে। যেটা এতদিন ছিল না। আমরা অনেক কিছুই হজম করে নিয়েছি।

সাম্প্রতিক ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ, ডিজেল, পেঁয়াজ, আলু আমদানি করছি। টাকাও পরিশোধ করছি। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক স্বাস্বাভাবিক সম্পর্ক তো আছেই। তবে ভিসার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক শিথিলতা দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক বা মনোমালিন্য থেকে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, সেসব ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই সহযোগী অধ্যাপক মনে করেন, আইন মানার প্রশ্নে যখন নানা ধরনের বিভাজন তৈরি হয়, তখন একই শ্রেণির ‘সহিংসতা মনোভাবাপন্ন’ অন্যদের মধ্যে স্পৃহা তৈরি করে।

“আমরা মনে করছি শিক্ষার্থীরা ভুল করছে, কিছু বলা যাবে না। সরকারের কেউ বলছেন, নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মুখোমুখি অবস্থানে সহিংসতা বেড়ে যেত। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন একটা প্রশ্ন আসছে- জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের অবদান রয়েছে। এই ধারণাকে পুঁজি করে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহনশীল ভূমিকা পালন করছে।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী  বলেন, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপদেষ্টা হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা টোট্যালি ফেলিওর। তিনি কিন্তু যেসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলে সাধারণ মানুষ খুশি হবে সেটা করছেন না। এবং করেন নি। তিনি বিডিআর বিদ্রোহের হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই করেন নি। একটির পর একটি বিশৃঙ্খলার ঘটনায় রীতিমতো লেজেগোবরে অবস্থা। 

চট্টগ্রামের আদালতে ইসকন নেতা চিন্ময় প্রভুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সংঘঠিত এ হত্যাকাণ্ডের কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে।

আইনজীবী সাইফুলকে যে গলিতে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে সে সময় অন্যান্যদের মধ্যে এই ৩ জনকে দেখা যাচ্ছে— এমন একটি ছবি ২৭ নভেম্বর প্রকাশ করে গণমাধ্যম। তাদের মধ্যে একজন হলেন, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ কান্তি দাশ। আরেকজনের নাম জিয়া উদ্দিন ফাহিম। তিনি বাকলিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। 

এছাড়া, রাজীব ভট্টাচার্য ওরফে সুমন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক নেতার অনুসারী এবং একটি শিপিং কোম্পানির কর্মচারী বলে জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কোতোয়ালী পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। অন্য ৭ জন হলেন- রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও সনু মেতর।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষের সময় এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনা সংঘ (ইসকন) ইস্যুতে  বৃহস্পতিবারের (২৮ নভেম্বর) মধ্যে পদক্ষেপ জানানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েকদিনের সংঘটিত ঘটনাবলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোড ম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা, কৃষিতে সার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়