শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: [২] অমর একুশে বইমেলা ঘিরে বাঙালির যে আবেগ, সেটাই দিন দিন এতো বড় করেছে মেলাকে। তেমনি বাঁচিয়ে রেখেছেও বলা যায়। বাংলা একাডেমির ছোট্ট পরিসরে শুরু হওয়া মেলা এখন বিস্তৃত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। প্রথম দিকে অনেকেরই মনে সংশয় ছিল, এত বড় উদ্যানে মেলা নিয়ে গেলে সেটা খালি খালি লাগবে না তো! কিন্তু এখন উদ্যানেও যেন জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না! এতে বলতে গেলে এতোদিন খুশি ছিলেন সবাই।
[২] কিন্তু এ পর্যায়ে এসে সেই খুশি মলিন হতে চলেছে। কারণ মেলার ভিড়, বিক্রি এবং সমসাময়িক ঘটনা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, সেটি হলো ভিড় বড় হচ্ছে বটে, বইয়ের মানুষ কজন? দিব্য চোখে দেখা যাচ্ছে, অপাঠক অপ্রকাশক এমনকি অলেখকে মেলা ভরে গেছে। বেহাত হয়ে যাওয়া মেলায় যারা প্রকৃত লেখক পাঠক প্রকাশক তারাই গৌণ হয়ে গেছেন। স্বস্তি চলে গেছে তাদের। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন অমর একুশের আয়োজনে নতুন নতুন সংকট তৈরি করছে।
[৩] এসব ছাড়াও আরও কিছু যৌক্তিক কারণে বইমেলায় প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকিটের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। ১০ টাকা মূল্যের একটি টিকিট অনেক সমস্যার সমাধানে কাজ করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। সবাই তা মনে করছেন- এমন নয়। বিরোধিতাও আছে। ওই যে আবেগের কথা বলা হলো, সেই আবেগের জায়গা থেকেই টিকিটের বিরোধিতা। কিন্তু বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মেলার চরিত্র ধরে রাখতেই টিকিটের ব্যবস্থা করা জরুরি।
[৪] টিকিটের আলোচনা নতুন ইস্যু নয়। গত কয়েক বছর ধরেই ঘুরে ফিরে আসছে এ প্রসঙ্গ। বিষয়টি নিয়ে বুধবার বেশ কয়েকজন লেখক, প্রকাশক, পাঠকের সঙ্গে কথা হলো। তাদেও বেশিরভাগই টিকিট চালুর পক্ষে মত দিলেন। এরমধ্যে লেখক নাজিম উদ দৌলা বললেন, ‘ প্রচুর মানুষ মেলায় ঢোকে, কোনো বাছ-বিচার নাই। দল বেঁধে অনেক পোলাপান আসে, যাদের দেখলেই বোঝা যায় যে বইয়ের সাথে এদের কোনো প্রকার কানেকশন নাই! এরা মেলায় আসেই শুধু অযথা টাইম পাস করতে। এই কারণেই মোস্তাক-তিশা, হিরো আলম আর টিপু সুলতানদের আশেপাশে এত ভিড় দেখা যায়। মেলায় যারা ঘোরাঘুরি করে, তাদের কয়জনের হাতে বই দেখা যায়? আমি বলছি না মেলায় গেলে বই কিনতেই হবে। অন্তত বই ও বইয়ের জগতের মানুষের প্রতি রেসপেক্ট আছে, এমন মানুষদেরই বইমেলায় দেখতে চাই আমরা।’
[৫] টিকিটের বিষয়টি তুলে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ২০টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করলেই হবে। বাণিজ্য মেলায় যদি ৫০টাকা এট্রি-ফি দিয়ে ঢোকা যায়, তাহলে বইমেলায় ২০টাকা এট্রি-ফি দিতে সমস্যা কোথায়? এটা তো জাস্ট একটা ফর্মালিটি। টিকিটের ব্যবস্থা করলেই ‘আজাইরা’ টাইম পাস করতে আসা লোকের সংখ্যা অর্ধেক কমে যাবে। টিকিট বিক্রি থেকে যে অর্থ আসবে সেটা দিয়ে দুস্থ ও অর্থাভাবে থাকা লেখকদের জন্য একটা কল্যাণ ফান্ড করা যেতে পারে, অথবা লিটলম্যাগের কোনো উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হতে পারে। বাংলা একাডেমি এবং মেলার সাথে সংশ্লিষ্ট যারাই আছেন, তাদের এই ব্যাপারে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।’
[৬] রাশেদুল আলম নামের এক পাঠক বললেন, ‘আমার মতে টিকিটের দাম ২০০ টাকা হওয়া উচিৎ যার মধ্যে ১৫০ টাকা বইয়ের সাথে সমন্বয় করার ব্যবস্থা রাখা দরকার।’
[৭] কবি তারিক সুজাত বলছিলেন, ‘অর্থহীন আসা যাওয়া কিছুটাও যদি কমানো যায়, ভালো। সে চেষ্টা এখন করাই যায়। টিকিট কেটে মেলায় ঢুকলে মেলাটাকে আরও বেশি নিজের মনে হবে। বাংলা একাডেমির খরচও কমে যাবে।’
[৮] তাম্রলিপির প্রকাশক তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘মেলায় প্রবেশের জন্য ১০০ টাকার টিকিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে মেলায় বই কেনার সময় মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ওই ১০০ টাকাই ফেরত পাবেন পাঠক।’
[৯] এদিকে এবারের বইমেলা হতে যাচ্ছে ৩১ দিনের। কারণ মেলার সময়কাল দুই দিন বাড়ানোর যে দাবি তুলেছিলো প্রকাশকরা তা মেনে নিয়েচে বাংলা একাডেমি। সে হিসেবে এ বছর বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা শেষ দিন হতে যাচ্ছে ২মার্চ শনিবার। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
আপনার মতামত লিখুন :