একসময় কোলন বা মলাশয়ের ক্যানসারকে মূলত বয়স্কদের রোগ বলে মনে করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আমেরিকার একজন শীর্ষ অনকোলজিস্ট (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ), ডঃ অঙ্কিত মাংলা, এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং এমন পাঁচটি লক্ষণের কথা বলেছেন যা তরুণদের একেবারেই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যানসার এখন আর বিরল নয়। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম এবং সচেতনতার অভাবকে এর অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে।
ডঃ মাংলার মতে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি:
১. মলের সঙ্গে রক্তপাত:
এটি কোলন ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি। অনেকেই এটিকে অর্শ বা পাইলসের সমস্যা ভেবে ভুল করেন এবং এড়িয়ে যান। কিন্তু মলের সঙ্গে তাজা লাল বা কালচে রঙের রক্ত দেখলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
২. অকারণে ওজন কমে যাওয়া:
কোনো নির্দিষ্ট কারণ, যেমন ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই যদি দ্রুত আপনার শরীরের ওজন কমতে থাকে, তবে এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ক্যানসার কোষগুলো শরীরের প্রচুর শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে ওজন হ্রাস পায়।
৩. পেটে ক্রমাগত ব্যথা বা ক্র্যাম্প:
যদি আপনার পেটে একটানা ব্যথা, অস্বস্তি বা ক্র্যাম্পের মতো অনুভূতি হয়, যা সহজে যাচ্ছে না, তাহলে এটি কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। টিউমার বা ব্লকেজের কারণে এই ধরনের ব্যথা হতে পারে।
৪. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন:
যদি আপনার মলত্যাগের অভ্যাসে হঠাৎ পরিবর্তন আসে, যেমন—একটানা ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পর্যায়ক্রমে দুটিই চলতে থাকে, তবে সতর্ক হন। মলের আকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়াও (যেমন—খুব সরু হয়ে যাওয়া) একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি শরীর থেকে ক্লান্তি না যায় এবং সারাক্ষণ দুর্বল লাগে, তবে এটিও ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। ক্যানসারের কারণে শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা থেকে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হয় এবং ফলস্বরূপ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
কেন তরুণদের মধ্যে ঝুঁকি বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার (processed food), কম ফাইবারযুক্ত খাবার, স্থূলতা (obesity), এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শেষ কথা:
ডঃ মাংলার মূল বার্তা হলো—শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে লজ্জা বা ভয় না পেয়ে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে কোলন ক্যানসারের চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর হয় এবং আরোগ্যের সম্ভাবনাও বহুলাংশে বেড়ে যায়।