বার্ধক্যের চিহ্ন হিসেবে পাকা চুল এখন পর্যন্ত মেনে নেওয়া ছিল অবশ্যম্ভাবী। তবে সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী গবেষণা দেখিয়েছে, পাকা চুলকে পুনরায় তার প্রাকৃতিক কালো বা বাদামি রঙে ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর পেছনে রয়েছে আমাদের শরীরের স্টেম সেল বা ‘মাস্টার সেল’-এর রহস্যময় ক্ষমতা।
চুলের রঙ হারানোর বিজ্ঞান
প্রথাগত ধারণা অনুযায়ী, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের রঙ উৎপাদনের জন্য দায়ী কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, চুলের রঙ তৈরি করা মেলানোসাইট স্টেম সেল বয়স বাড়লেও মারা যায় না, বরং তারা ভুল জায়গায় আটকে যায়। এই কারণে চুলের প্রাকৃতিক রঙ ধীরে ধীরে ধূসর বা সাদা হয়ে যায়।
মেলানোসাইট স্টেম সেল এবং রঞ্জক পদার্থ
চুলের গোড়ায় থাকা হেয়ার ফলিকলে এই বিশেষ স্টেম কোষগুলি থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো পরিণত হয়ে ‘মেলানোসাইট’ কোষে রূপান্তরিত হয়, যা চুলে রঙ আনার জন্য ‘মেলানিন’ নামক পদার্থ তৈরি করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোষগুলো ফলিকলের ভুল অংশে চলে যায়, ফলে মেলানিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সহজভাবে বলতে গেলে, চুলের রঙের কারিগররা ভুল স্থানে চলে যাওয়ায় রঙের উৎপাদন থেমে যায়।
স্টেম সেলকে ফেরানো এবং চুলের রঙ পুনরুদ্ধার
গবেষকরা আটকে পড়া স্টেম সেলগুলোকে সঠিক স্থানে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। যখন কোষগুলো তাদের প্রাকৃতিক অবস্থানে ফিরে আসে, তখন তারা পুনরায় মেলানিন তৈরি করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে, নতুন চুলের রঙ স্বাভাবিক রঙে ফিরে আসে এবং ধূসর বা সাদা হওয়া বন্ধ হয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই আবিষ্কার কেবল চুলের রঙের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। বার্ধক্য প্রক্রিয়া, ত্বকের ক্যানসার এবং মেলানোমার মতো রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধেও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে এখনও মানুষের উপর গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। তাই এখনই বাজারে পাকা চুল কালো করার কোনও পদ্ধতি নেই।
বিজ্ঞান এই আবিষ্কার দিয়ে বার্ধক্য ও চুলের রঙ পরিবর্তনের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো পাকা চুল আর বাধ্যতামূলক বার্ধক্যের চিহ্ন থাকবে না, বরং তা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হয়ে উঠবে।