শিরোনাম
◈ নতুন বিধিমালা জারি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে, নারী কোটা বাতিল ◈ রোডম্যাপ অপরিপক্ব ও আংশিক, জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি: জামায়াত ◈ প্রশাসনে বড় পদোন্নতি, উপসচিব হলেন ২৬৮ কর্মকর্তা ◈ বিরলে জীবন মহল পার্কে অনৈতিক ঘটনার জেরে সংঘর্ষ ◈ টাঙ্গাইলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবাকে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার ◈ চক‌রিয়ায় সড়ক দুঘর্টনায় বাঁশখালীর যুবলীগ নেতা মনসুর আলম নিহত ,আহত ৫ ◈ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ‘উই আর হ্যাপি’: মির্জা ফখরুল ◈ শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া ◈ সৌদি গ্রিন কার্ড: নির্দিষ্ট অর্থে আজীবন বসবাস, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পেশাজীবীদের জন্য ◈ চব্বিশের আন্দোলনকারীদের ব্যবহারে দেশবাসী অতিষ্ঠ: কাদের সিদ্দিকী

প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১৭ রাত
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবনে সাফল্য আনতে ১০টি পারিবারিক মূল্যবোধ

বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে, প্রযুক্তিও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। কিন্তু কিছু পারিবারিক মূল্যবোধ যেমন—সম্মান, সততা, কঠোর পরিশ্রম, দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা, কৃতজ্ঞতা, অধ্যবসায়, বিশ্বাস বা জীবনের উদ্দেশ্য, উদারতা এবং ভালোবাসা চিরকাল প্রাসঙ্গিক। এগুলো শুধু সন্তানদের এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয় না, বরং অর্থবহ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ জীবন গড়ার শক্তি জোগায়।

প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনে এই মূল্যবোধগুলো উজ্জ্বল হয়ে আছে। শুধু বড় বড় সাফল্যেই নয়, বরং নীরব সাফল্যেও। যেমন বাবা-মায়ের ভালোভাবে সন্তান লালন-পালন, প্রতিবেশীর বিপদে পাশে থাকা অথবা সাধারণ মানুষ যখন শুধু মূল্যবোধ মেনে অসাধারণ জীবন গড়ে তোলেন।

সম্মান

সম্মান শুনতে সহজ মনে হলেও, এটাই আসলে সব কিছুর ভিত্তি। ছোটবেলায় বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছেন বড়দের সম্মান দিতে, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে, কারো কথার মধ্যে কথা না বলতে।

তখন হয়তো এসব বিষয় তেমন গুরুত্ব পেত না, কিন্তু বড় হয়ে বোঝা যায় সম্মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সম্মান মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে শেখায়। অন্যকে সম্মান করলে বেশিরভাগ সময়ই তার প্রতিদান পাওয়া যায়। কর্মক্ষেত্র ও সমাজে প্রতিভার থেকেও সম্মান অনেক দরজা খুলে দেয়।

সততা 

সততা মানে শুধু মিথ্যা না বলা নয়, বরং খাঁটি থাকা, প্রতিশ্রুতি রাখা এবং ভুল করলে তা স্বীকার করা। যে পরিবারে সততাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। আমরা অনেকেই ছোটবেলায় খেলার সময় ফুলদানি ভেঙে ফেলার পর ভয়ে কেঁদে ফেলে মাকে যেয়ে সত্যি বলে দিতাম। মায়েরা তখন বলতেন, ‘তুমি সত্য বলেছ, এজন্য আমি গর্বিত।’ এই শিক্ষা থেকে বোঝা যায়, ভুল ক্ষমা করা যায়, কিন্তু অসততা সম্পর্ক নষ্ট করে।

জীবনে সততা মানুষকে নির্ভরযোগ্য করে তোলে এবং এই গুণ কখনো পুরনো হয় না।

কঠোর পরিশ্রম

জীবনে সহজে কিছুই পাওয়া যায় না। যে পরিবার সন্তানকে কঠোর পরিশ্রম শেখায়, তারা তাদের সন্তানদের বাস্তবতার জন্য প্রস্তুত করে। কঠোর পরিশ্রম মানে নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলা নয় বরং উপস্থিত হওয়া, সাধ্যমতো চেষ্টা করা এবং প্রথম বাধাতেই হাল না ছাড়া। আমাদের দাদারা ভোরে উঠে ক্ষেতের কাজে যেতেন, শরীর ব্যথায় ভরা থাকলেও তারা বলতেন, ‘কাজ মানুষকে স্থির রাখে।’ তাদের দেখে আমরা বুঝেছি, সাফল্য উপহার নয়, দিন দিন প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ফল।

দায়িত্ববোধ 

চাকরির মতো কাজ আর দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য আছে। কাজ শুধু করণীয় কিন্তু দায়িত্ব মানে মানসিকতা। যে পরিবার দায়িত্ব শেখায়, তারা সন্তানকে বোঝায় কাজের ফল আছে। যে শিশুরা ছোট থেকে নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখে, তারা পরে নেতৃত্ব দেয়। আর যারা সবসময় দোষ চাপিয়ে দেয়, তারা বড় হয়ে দায় নিতে পারে না।

দায়িত্ববোধ একবার শেখা হয়ে গেলে, প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এটি একটি নির্দেশনা হয়ে ওঠে। যা মানুষকে চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত নিতে এবং অন্যদের আস্থা অর্জন করতে সাহায্য করে। 

সহমর্মিতা 

পৃথিবী কঠিন, কিন্তু সহমর্মিতা সেটাকে কোমল করে তোলে। যে পরিবার সন্তানকে সহানুভূতি শেখায়, তারা এমন মানুষ তৈরি করে যারা খেয়াল করে কে একা হয়ে আছে, কে কষ্ট পাচ্ছে। সেটা হতে পারে যে, সহপাঠী নিজের খাবার আনতে ভুলে গিয়েছিল তার সঙ্গে টিফিন ভাগ করে নেওয়ার গল্প। এসব ছোট ঘটনাই বড় হৃদয়ের পরিচয় দেয়। সহমর্মিতা মানুষকে কাছে টানে, বিশ্বাসযোগ্য করে এবং একধরনের শক্তি দেয় কারণ এক নির্লিপ্ত পৃথিবীতে যত্ন নেওয়াই আসল সাহস।

কৃতজ্ঞতা

যা আমাদের থাকেনা সেটা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি আমরা। কৃতজ্ঞতা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়, যা আছে তার মূল্য দিতে শেখায়। কৃতজ্ঞতায় বেড়ে ওঠা শিশুরা বড় হয়ে বিরক্ত না হয়ে হতাশা সামলাতে জানে। জীবন যত ব্যস্তই হোক কৃতজ্ঞতা মানুষকে বাস্তববাদী রাখে।

অধ্যবসায় 

জীবনে হোঁচট খাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আসল বিষয় হলো আবার উঠে দাঁড়ানো। অধ্যবসায় সেই নীরব কণ্ঠস্বর, যা বলে ‘আবার চেষ্টা করো’। পরিবার যখন অধ্যবসায়ের গল্প শোনায়—কিভাবে বাবা কঠিন সময়ে লড়ে গেছেন, কিভাবে দাদি শূন্য থেকে জীবন গড়েছেন—এই কাহিনি শিশুর মনে থেকে যায়। পরে জীবনে বাধা এলে মনে পড়ে, ‘তারা হাল ছাড়েনি, আমিও ছাড়ব না।’ অধ্যবসায় ছাড়া সাফল্য খুব কম ক্ষেত্রেই আসে।

বিশ্বাস বা উদ্দেশ্য

সব পরিবার ধার্মিক না-ও হতে পারে, তবে প্রায় প্রত্যেক পরিবারই জীবনের উদ্দেশ্য শেখাতে পারে। সেটা হোক বিশ্বাস, দর্শন, বা শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে কোনো বৃহত্তর কিছুর প্রতি আস্থা রাখা। ছোটবেলায় বাবা-মা শেখাতেন জীবন শুধু নিজের লাভের জন্য নয় বরং অন্যের জন্য নিজের অবদান রাখা, জীবনের অর্থ খোঁজা আর কঠিন সময়ে আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও। যে পরিবার সন্তানকে বিশ্বাস বা উদ্দেশ্য শেখায়, তারা সন্তানকে একটি স্থির নোঙরের মতো তৈরি করে, যা ঝড়ের সময়ও ভরসা দেয়।

উদারতা 

উদারতা শুধু অর্থ নয়, এটা একটা মনোভাব। যে পরিবার উদারভাবে বাঁচে, তারা সন্তানকে শেখায় যে দান আসলে দাতাকেও সমৃদ্ধ করে। হয়তো একদিন বাবা নীরবে প্রতিবেশীর ভাঙা বেড়া মেরামত করেছিলেন, বিনিময়ে কিছু চাননি। পরে যখন আমাদের সাহায্য দরকার হয়েছিল, সেই প্রতিবেশীই প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। উদারতা সদিচ্ছার এমন বৃত্ত তৈরি করে যা ছড়িয়ে যেতে থাকে। 

ভালোবাসা 

সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে ভালোবাসা। নিখুঁত ভালোবাসা নয়, কারণ কোনো পরিবারই নিখুঁত নয় বরং শর্তহীন ভালোবাসা। এই ভালোবাসা প্রকাশ পায় ধৈর্যে, যখন শিশু ভুল করে তার ক্ষমায়, ঝগড়ার পর এবং যখন মন ভেঙে যায় তখন উৎসাহে।

যে শিশুরা ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়, তারা শুধু সফল হয় না, বরং বিকশিত হয়। ভালোবাসাই সেই মাটি, যেখানে অন্য সব মূল্যবোধ বেড়ে ওঠে। ভালোবাসা ছাড়া সম্মান শুষ্ক লাগে, পরিশ্রম ভারি মনে হয় আর অধ্যবসায় হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ। ভালোবাসা থাকলে সবকিছুই জীবন্ত হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়