ইসলামী ডেস্ক : [২] ইসলামের প্রথম কিবলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্মৃতিবাহী মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাদ্দাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে মুসলিমদের কাছে। নবী (আ.)-গণের পদচারণে মুখরিত পবিত্র এই ভূমির সঙ্গে ঐতিহাসিক অনেক কারণেই জড়িয়ে আছে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ। হজরত আউফ ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাবুক যুদ্ধের সময় বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়ের সুসংবাদ দেন। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৫ হিজরি মোতাবেক ৬৩৬ সালে মুসলিম বাহিনী বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয় করে।
হজরত আবু উবায়দাহ আমের ইবনুল জাররাহ (রা.) এই বিজয়ের নেতৃত্ব দেন। কোনো সংঘাত ও রক্তপাত ছাড়াই এই বিজয় অর্জিত হয়।
ঐতিহাসিক তাবারি বলেন, ‘বায়তুল মোকাদ্দাসের খ্রিস্টান শাসকরা যখন শুনল আবু উবায়দাহর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বায়তুল মোকাদ্দাস অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে তখন তারা প্রতিরোধের সাহস হারিয়ে ফেলে এবং আবু উবায়দাহকে সন্ধির প্রস্তাব দেয়। আবু উবায়দাহ তা গ্রহণ করেন।
‘হজরত ওমর (রা.)-এর বায়তুল মোকাদ্দাসে আগমনের মধ্য দিয়ে খ্রিস্টান শাসকদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন হয়। উমাইয়া, আব্বাসি ও সেলজুক শাসনামলে বায়তুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের ওপর মুসলিম আধিপত্য অক্ষুণ্ন থাকে। ১০৯৯ সালে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের হাতে ফিলিস্তিনের পতন হয় এবং তারা সাত দশক বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে রাখে। ক্রুসেডাররা বায়তুল মোকাদ্দাস দখলের পর ১০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়।
২৫ রমজান ৫৮৩ হিজরি মোতাবেক ১১৮৭ সালে মিসরের ফাতেমি শাসক সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি বায়তুল মোকাদ্দাস পুনরুদ্ধার করেন।
মসজিদুল আকসা উদ্ধার করা ছাড়াও বায়তুল মোকাদ্দাস অভিযানের পেছনে সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো হজযাত্রীদের চলাচলের পথ নিরাপদ করা। বায়তুল মোকাদ্দাসের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর ১১৮৭ সালে এক দল হজযাত্রীর ওপর হামলা ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত মুসলিমরা সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির কাছে এই পথের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি লেখেন।
অন্যদিকে বায়তুল মোকাদ্দাসের শাসক বেলিয়ান ডিইবিলিন বায়তুল মোকাদ্দাসে অবস্থানরত মুসলিমদের হত্যা করার হুমকি দেন। তিনি সালাহ উদ্দিনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, ‘আমরা আমাদের নারী ও শিশুদের হত্যা করব এবং সব সম্পদ ধ্বংস করে দেব। আপনার লুটের জন্য একটি স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রা অবশিষ্ট রাখব না। বন্দি করার মতো নারী বা পুরুষকেও জীবিত রাখা হবে না। এরপর আমরা ধ্বংস করব রক, আল আকসা মসজিদ এবং অন্যান্য মুসলিম স্থাপনা। আমরা আমাদের হাতে বন্দি পাঁচ হাজার মুসলিমকে হত্যা করব।’
মুসলিম হজযাত্রীদের আবেদন এবং খ্রিস্টান শাসকের হুমকির কয়েক মাসের মধ্যে সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি এই অভিযান পরিচালনা করেন এবং হাতিনের যুদ্ধে বায়তুল মোকাদ্দাসের জয় নিশ্চিত করেন। তবে বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়ের পর তিনি রক্তপাত এড়িয়ে যান। মুসলিম ও অমুসলিম সব অধিবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। ঐতিহাসিক আমিন মালুফ বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি স্বর্ণমুদ্রা বা প্রতিশোধের নেশায় বায়তুল মোকাদ্দাস জয় করেননি। তাঁর নিজের ভাষায় তিনি তা করেছেন, বিশ্বাস ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে।’
সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবির মৃত্যুর পর বায়তুল মোকাদ্দাস আবারও মুসলিমদের হাতছাড়া হয়। তবে ১১ বছর পর সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুব ১২৪৪ সালে তা পুনরুদ্ধার করেন। ১২৪৪ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলিম শাসকদের অধীনেই থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্য পরাজিত হলে ১৯১৭ সালে বায়তুল মোকাদ্দাস ব্রিটিশদের শাসনাধীন হয়। ব্রিটিশরা বেলফোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পবিত্র ভূমিকে ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়।
এমটি
আপনার মতামত লিখুন :