শিরোনাম
◈ রাজনীতি নিয়ে কোনো আলাপ করেননি ডোনাল্ড লু: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ রাবি ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কার ◈ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে সুপারিশ করা হবে: ডোনাল্ড লু ◈ সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ◈ ঢাকার ২৬টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পুলিশ সদস্যদের জন্য মূল্য ছাড়  ◈ ‘জেনোসাইড জো’: যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ বাইডেনের পুনর্নির্বাচনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে ◈ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড দেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে: টিআইবি ◈ তাসকিনকে সহ অধিনায়ক করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ঘোষণা ◈ আজ ঘরে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক ◈ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল নিয়ে  রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশিত : ১২ মার্চ, ২০২৪, ০২:১৪ দুপুর
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২৪, ১২:৪৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেনাশাসক জিয়াউর রহমান সরকারের হয়রানি থেকে বাঁচতেই দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলাম: মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

জিয়াউর রহমান ও মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

ভূঁইয়া আশিক রহমান: মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু নির্বাচিত বিচারক সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্ট ও বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলী মেহদী খানের ছেলে। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন সুইডেনে। বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ সুইডেনের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। দুইবার সংসদ নির্বাচন করেছেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। কেন পারেননি? প্রবাসী বাংলাদেশিরা কি সহযোগিতা-সমর্থন করেনি? কেন করেনি? ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থান এখন কেমন? বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমারা কী ভাবে? সুইডেনের রাজনীতির সঙ্গে ৩০ বছর ধরে যুক্ত থাকলেও দেশের রাজনীতিতে কেন আসেননি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা আছে কি? দিয়েছেন সব প্রশ্নের উত্তর। আমাদের সময় ডটকম ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: আপনি বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলী মেহদী খানের ছেলে। ওই সময় ঢাকায় ছাত্র লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আপনাকে কেন বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হয়েছিলো? অর্থনৈতিক কোনো কারণ ছিলো কি?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: অর্থনৈতিক কারণে আমি বাংলাদেশ ত্যাগ করিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকার নানাভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ আমাদের সকলকে হয়রানি করছিলো। ফলে ওই সময় জীবন নিয়ে নানাভাবে আশঙ্কার মধ্যে ছিলাম। জিয়াউর রহমান সরকারের হয়রানি থেকে বাঁচতেই মূলত আমি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সুতরাং আপনি বলতে পারেন, আমার বাংলাদেশ ছাড়ার মূল কারণ ছিলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নয়।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: দেশে থেকে কি হয়রানি মোকাবেলা অসম্ভব ছিলো?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: ঘাতকচক্র যেখানে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি, সেখানে আমরা তো কোন ছাড়্। আমরা কীভাবে জেনারেল জিয়ার মদদপুষ্ট বাহিনীকে মোকাবেলা করবো? অবৈধ শাসক জিয়াউর রহমান কি আমাদের ছেড়ে কথা বলতো? কখনোই না। ফলে মোকাবেলা করার প্রয়াসের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা আগে ছিলো। কারণ জীবনই যদি না থাকে, তাহলে আর বাকি থাকে কী।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: সুইডেনের জীবন কেমন কাটছে? দেশে কি নিয়মিত আসেন?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: সুইডেনে ভালো আছি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার আমাদের। বাংলাদেশে অবশ্যই আসি। যখনই সুযোগ মিলে বারবার ফিরে আসি আমার প্রিয় জন্মভূমিতে।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: আপনি তো সুইডেনে রাজনীতি করেন। আপনার রাজনৈতিক অবস্থান কেমন ওখানে। সংসদ নির্বাচনও করেছেন দুইবার। এ ব্যাপারে যদি বলেন।

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: সুইডেনে থাকি ৪৭ বছর। দীর্ঘ ৩০ বৎসর যাবৎ সুইডেনের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। এই সময়ে বিভিন্ন পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। নিষ্ঠা দেখিয়েছি। ২০১০ ও ২০২২ লেফট পার্টির প্রার্থী হয়ে সুইডিশ পার্লামেন্টে নির্বাচন করেছি। এছাড়া স্টকহোম জেলা কাউন্সিলে নির্বাচিত কাউন্সিলার হিসেবে ৮ বৎসর দায়িত্ব পালন করেছি। সুইডিশ লেফট পার্টি সেন্ট্রাল কমিটির মনোনয়ন বোর্ডে একটানা ৬ বৎসর ও লেফট পার্টি স্টকহোম হেসেলবি ভেলেংবি ব্রাঞ্চে একটানা ১০ বৎসর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘ ২৫ বৎসর সুইডিশ পোস্ট ট্রেড ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলাম। বর্তমানে আমি সুইডিশ লেফট পার্টি স্টকহোম ডিসট্রিক্ট কমিটির নির্বাচিত মেম্বার।

পোস্ট ট্রেড ইউনিয়নের সভায় মেম্বারদের উদ্দেশে বক্তব্যে রাখছেন মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: দুইবার সংসদ নির্বাচন করলেও সফল হননি। কেন ভোট দেয়নি ভোটাররা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা কেমন ছিলো?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। সেবা করার জন্য। নির্বাচনে জয়লাভ করে জনগণের সেবা করতে পারলে নিশ্চয়ই অনেক ভালো লাগতো। তবুও কেন আমাকে ভোট দেয়নি, সেটা আমি জানি না। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যদি আমাকে ভোট দিতেন, তাহলে আমাকে হারতে হতো না। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা ছিলো হতাশাজনক। তারা আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করেনি। কেন করেননি, তারাই ভালো করে বলতে পারবেন। নানাভাবে আমি তাদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সমর্থন চেয়েছি। সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু আশাতীত সর্বাত্মক সমর্থন পাইনি।

এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। সুইডেনের নির্বাচন হয় সমানুপাতিক (প্রপোশনাল) ভোটে। তালিকায় যাদের নাম উপরে থাকে তারা দলের ভোটের পার্সেন্ট অনুসারে জয়লাভ করে। যাদের নাম প্রার্থী তালিকায় নিচে থাকে তাদের ব্যক্তিগত ভোটের প্রয়োজন হয়। এই কারণে আমি বাংলাদেশি ভোটারদের উপর নির্ভর ছিলাম। বাংলাদেশিরা আমাকে ভোট দিলে আমার জয়লাভ করা সহজ হতো, যা আমি পাইনি। আমার রাজনৈতিক দল ভেন্সতার পার্টির মতো ছোট (লেফট পার্টি) দল থেকে ব্যক্তিগত ভোটে জয়লাব করা যতো সহজ সোশ্যাল ডেমোক্রেট কিংবা মডরেট থেকে ব্যক্তিগত ভোটে ততোটা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে ব্যক্তিগত ভোটের সংখ্যা অনেক বেশি পেতে হয়। যা লেফট পার্টির বেলায় নেই।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: এখানে বাংলাদেশি রাজনীতির প্রভাব পড়েছে বলে কি আপনি মনে করেন?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: কিছুটা হলেও হয়েছে বলে আমি মনে করি। সুইডেনের মূলধারার রাজনীতি করা সত্ত্বেও আমার ধারণা বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাব এখানে কিছুটা হলেও পড়েছে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমাণবিহীন অপপ্রচারও এখানে একটা বড় কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম, সুইডেনে আমরা সকলেই বাংলাদেশি। এখানে দেশীয় রাজনীতি সামনে আনলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না। সুইডেনে আমাদের সকলের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি সুইডিশ নাগরিক। সুইডেনের রাজনীতিতে একজন বাংলাদেশি সামনে আসতে পারলে বাংলাদেশের নাম ও একইসঙ্গে এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উপকার হবে। আমি যদি সুইডিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হতে পারতাম তাহলে এর সুবিধা নিশ্চয়ই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোগ করতে পারতো। সেই সুযোগটা বাংলাদেশিরা নিইনি। বলতে পারি, দেশীয় রাজনীতির নেতিবাচক ধারণা থেকে দল-মত নির্বিশেষে সবাই আমাকে সমর্থন দেয়নি। দিলে অবশ্যই আমি জয়লাভ করতাম। আমাকে ভোট না দিলেও আমার দীর্ঘ ৪৭ বছরের প্রবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা সুইডিশ ট্রেড ইউনিয়ন ও মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে পথচলা ও স্টকহোম আপিল কোর্টে দীর্ঘ ১৬ বৎসর নির্বাচিত বিচারক হিসেবে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করতে। আমি যতোটুকু সম্ভব প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি কিংবা করে আসছি। ভবিষ্যতেও করবো। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: আপনি কি এখনো সুইডিশ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: অবশ্যই। আমি রাজনীতির মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে এখনো সক্রিয় আছি। বর্তমানে আমার রাজনৈতিক দল ভেন্সতার পার্টির স্টকহোম ডিসট্রিক্ট কমিটির ইলেকটেড মেম্বার ও স্টকহোম নর্থ জেলখানা কমিটির একজন ইলেকটেড মেম্বার।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে কি?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: অনেক আগেই দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ এসেছিলো। তখন যখন রাজনীতিতে আসিনি, এখন এই বয়সে আসার চিন্তা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন আমার চিন্তাধারা থেকে অনেক দূরে। আমি সুইডেনে কোনো বাংলাদেশি রাজনীতি করি না। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশি রাজনীতি করার ইচ্ছা আমার নেই। তবে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য দূর দেশ থেকে যতোটুকু পারি কাজ করে যাবো।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: আপনি তো সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রাশন কোর্টে নির্বাচিত বিচারকের দায়িত্বও পালন করছেন। এটা তো একজন বাংলাদেশির জন্য অনেক গর্বেরও বটে।

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: বাংলাদেশিরা দূর দেশে যখন কোনো উচ্চ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন, তখন নিশ্চয়ই সেটা বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও আনন্দের। এতে তো বাংলাদেশই ব্র্যান্ডিং হয়। বাংলাদেশের সুনাম বাড়ে। আমি সুইডিশ লেফট পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে ২০০৮ থেকে সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্টে নির্বাচিত বিচারকের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া আট বৎসর স্টকহল্ম ইমিগ্রেশন কোর্টে নির্বাচিত বিচারক ছিলাম। ২০২৪ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত আপিল কোর্টে পুনরায় নির্বাচিত বিচারক হিসেবে মনোনীত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমি এখন সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্ট নির্বাচিত বিচারক সমিতির নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: বাংলাদেশিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে নিশ্চয়ই আপনি আইনি সহায়তা দিতে পারেন। এটা তো দারুণ ব্যাপার সুইডেন প্রবাসীদের জন্য। তারা কি আসে আপনার কাছে আইনি সহায়তা নিতে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: দেখুন আমি কোনো পেশাদার আইন বিশেষজ্ঞ নই। তবে দীর্ঘদিন আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রেশন কোর্টে নির্বাচিত বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা দিয়ে চেষ্টা করি বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া। বিশেষ করে আমি আমার সাধ্যমতো বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইমিগ্রান্টদের নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকি। যাতে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। যখন কেউ আমার কাছে আসে, যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা করি। ভবিষ্যতেও সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমাকে ভোট না দিলেও দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য আমার দরজা খোলা।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: সুইডেনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন কেমন। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অথবা সেনজেনভুক্ত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে কি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: করোনা মহামারি বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল করে দিয়েছিলো। ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বও এর বাইরে ছিলো না। খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করে সুইডেনসহ ইউরোপের দেশগুলো। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সুইডেন এই সময় লকডাউন না দেওয়াতে খুব সহজেই এই ক্রাইসেস মোকাবেলা করলেও পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি ইসরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র আক্রমণ নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তবুও বলবো, প্রথমদিকে ইউরোপের অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা ছিলো সেটা এখন অনেকটা কমে এসেছে। দেশগুলোর অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। প্রত্যেক দেশই তার নিজস্ব পলিসিতে এগোচ্ছে। নিজেদের নাগরিকদের উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠছে বলেই আমার মনে হয়।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের যাওয়ার প্রবণতা প্রবল। বিভিন্ন দেশ থেকে তারা সেখানে যেতে চান। যারা ইউরোপে যেতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: ইউরোপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইমিগ্রান্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন সামনে এগিয়ে আসছে। কিছু কিছু দেশে এখন তারা ক্ষমতায়। সুইডেনের ইমিগ্রান্ট বিরোধী চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক দল সুইডেন ডেমোক্রেটের সমর্থন নিয়ে বর্তমানে রক্ষণশীল দল মডারেট, কৃষ্ট ডেমোক্রেট ও লিবারেল জোট ক্ষমতায়। একসময় সুইডেনে ইমিগ্রান্ট বান্ধব রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত লিবারেল পার্টিও এখন পাস করছে বহিরাগত বিরোধী নানা আইন। ইউরোপের সব দেশের মতোই সুইডেনও এখন ইউরোপের বাহির থেকে আসা বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন নতুন আইন পাস করছে। তবুও এখনো ইউরোপে বৈধ উপায়ে আসার পথ উন্মুক্ত রয়েছে। বৈধ উপায়ে বর্তমানে দুই ভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে আসা যায়। একটি হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, অপরটি চাকরি নিয়ে আসা। দক্ষ কর্মীরা এখন চাকরি নিয়ে সহজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আসতে পারেন। স্টুডেন্টরাও আসতে পারেন। ফলে আমার পরামর্শ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দক্ষ, তারা ইউরোপের দেশগুলোর ওয়েবসাইট ফলো করে চাকরির আবেদন করে চাকরি নিয়েই আসতে পারেন। সুইডেন এখন দক্ষ শ্রমিকদের তার দেশে দ্রুত ভিসা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য তাদের মাইগ্রেশন বোর্ডে পৃথক বিভাগ করেছে। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর দক্ষ লোক সুইডেন আসছে। স্টুডেন্টদের পড়াশোনা শেষ করার পর সুইডেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত এক বৎসর সময় বেঁধে দেয়। এই সময় কাজ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া হয়।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: বাংলাদেশে তো নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ইউরোপের কী অবস্থা?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: নিত্যপণ্যের দাম আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের পার্থক্য হলো সেখানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি সরকার বেতনভাতাও সমান হারে বাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে বড় বড় পাইকারী কোম্পানিদের ডেকে তাদের ট্যাক্স অস্থায়ীভাবে হ্রাস করে। ফলে পণ্যের দাম বেশি হলেও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। যাদের আয় কম তাদের সামাজিক ভাতার মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। তাদের খুব একটা উদ্বিগ্ন হতে হয় না। এ কারণেই এসব দেশকে বলা হয়, কল্যাণ রাষ্ট্র।

বাংলাদেশের নাগরিকদের পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতনভাতা বাড়ে না। বড় বড় পাইকারীদের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রিত। সরকারের নির্দেশ তারা মানে না। সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা যখন তখন মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারদের জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া ক্রাইসিসের সময় বাংলাদেশে অতিরিক্ত সামাজিক ভাতা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যে কারণে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বাড়লে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। তারা জীবন নির্বাহ করা নিয়ে ব্যাপকভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। যেটা ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের বেলায় ততোটা হয় না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বেতন ভাতা ও সামাজিক ভাতা সমান হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্যের নেতিবাচক প্রভাব ততোটা পরে না। বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো আইন আছে, তবে তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।

আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? দেশ তো অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়েছে। মেট্রোরেলও ঢাকায় চলতে শুরু করেছে। অনেক নতুন কিছু বাংলাদেশে হচ্ছে। একজন বাংলাদেশি প্রবাসী হিসেবে কেমন লাগে? বিদেশিরা বাংলাদেশের উন্নয়নকে কীভাবে মূল্যায়ন করে?

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু: বিদেশিরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চমৎকৃত। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে তারা প্রশংসা করে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। জন্মসূত্রে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে এটাকে আমরা গর্ব হিসেবে নিই। ইউরোপের লোকজনও বাংলাদেশের এই উন্নয়নের খোঁজখবর রাখে। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে তারা প্রশংসা করেন। আগ্রহ দেখান। অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স এই উন্নয়নে এক বিরাট ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের এই সার্বিক উন্নয়নে একজন সাহসী নারী, সাহসী প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ভূমিকা অনন্য। তার সাহসী নেতৃত্ব ও সব সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারীবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন বিশ্বে পরিচিত। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সরকারকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার তাহলো বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সচেতন, সতর্ক বা ঝুঁকির ব্যাপারটি বিশেষভাবে দেখা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়