শিরোনাম
◈ রাবি ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কার ◈ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে সুপারিশ করা হবে: ডোনাল্ড লু ◈ সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে ডোনাল্ড লু ◈ সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ◈ ঢাকার ২৬টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পুলিশ সদস্যদের জন্য মূল্য ছাড়  ◈ ‘জেনোসাইড জো’: যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ বাইডেনের পুনর্নির্বাচনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে ◈ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড দেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে: টিআইবি ◈ তাসকিনকে সহ অধিনায়ক করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ঘোষণা ◈ আজ ঘরে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক ◈ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল নিয়ে  রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশকে কখনো বিপদে পড়তে দেবে না দেশঅন্তঃপ্রাণ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি: জাকারিয়া চৌধুরী

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [১] আমাদেরসময় ডটকম ও আমাদের অর্থনীতি: দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এখনো আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন কেমন দেখেন? 

জাকারিয়া চৌধুরী-চেয়ারম্যান, এনআরবি অ্যাসোসিয়েশন, ইউএসএ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, ফোবানা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক ভালো। নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা শোনা গিয়েছিলো, সেসব কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও এর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলররা নানা ভাবে ব্র্যান্ডিং করতে পারেন বাংলাদেশকে। দেশে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে জাপানিরা কাজ করেন। চীন কাজ করছে। সরকার যদি আরও ভালো ভালো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আমাদের অগ্রগতি আরও তরান্বিত হবে। 

[২] বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কি বাংলাদেশ আকৃষ্ট করতে পারছে? কী মনে হয় আপনার, এ দেশে বিনিয়োগে বাঁধাগুলো কী। 

জাকারিয়া চৌধুরী: বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিগত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যে কারণে অনেক বিদেশি আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে চোখে পড়ার মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যেখানে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা পরিবেশ বিরাজমান থাকে, সেখানে কোনো বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলতে চান না। আমি মনে করি, আমাদের সরকার সফলতার সঙ্গে যেভাবে দেশকে পরিচালনা করছে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এটাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছে। সরকার বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছে যে, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে। 

[৩] পোশাকশিল্পে বিশ্বে আমরা ব্রান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে আছি। ইউরোপ-আমেরিকা আমাদের পোশাকশিল্পের বড় বাজার। নির্বাচনের আগে পোশাকশিল্পের বিপদাশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। ইউরোপ বিমুখ হলে আমাদের জন্য বিপদ বাড়বে। ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের পোশাকশিল্পের জন্য কি সত্যিই কোনো বিপদ আছে?

জাকারিয়া চৌধুরী: পোশাকশিল্পে যে হুমকির কথা শোনা যায় তা আসলে রাজনৈতিক। ২০১৩ সালে গার্মেন্টেসের আংশিক জেএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছিলো, তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগযোগ করে জানতে পারি যে, লন্ডন থেকে তারেক রহমান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ককাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের বড় অংকের ডোনেশন মাসিকভাবে প্রদান করেন। এছাড়া সরকারের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। গার্মেন্টসের কোটা কমিয়ে দিয়েছিলো, যার ফলে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে পোশাকশিল্পের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অন্যান্য দেশের তুলনায় উন্নত ও মানসম্মত। হরতাল বা অবরোধের কারণে যদি কোনো শিপমেন্ট বন্ধ থাকে এ ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই ক্ষতি হয়। দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। হরতাল-অবেরাধ বা এ জাতীয় কিছু নেই। ফলে আমাদের পণ্য উৎপাদন সঠিক সময়ে হচ্ছে। পণ্যের ডেলিভারি সঠিক সময়ে দেওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের মানসম্মত পোশাক কিনতে দ্বিধা করছেন না।  

[৪] দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। জঙ্গি হামলা নেই। সন্ত্রাস নেই। বোমা হামলা নেই। তাহলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কম আসছে কেন?

জাকারিয়া চৌধুরী: প্রত্যাশিত বিনিয়োগই আসছে দেশে। কিন্তু তা আমাদের চোখে পড়ছে না। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীর অর্থে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। আমি প্রায়ই বলি যে, এনআরবিদের জন্য যদি আলাদা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন তৈরি করে দেওয়া হতো, তাহালে তারা তাদের মতো পরিবেশ তৈরি করে কাজ করতে পারতো। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ব্যাংক আছে, এর বাইরেও অন্য আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। তাহলে সবাই একসঙ্গে বিনিয়োগে আসতে আত্মবিশ্বাসী হতো। আমার বিশ্বাস এটাও হয়ে যাবে। কারণ উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার সবসময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে রেখেছে। প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদেরও সবসময় সহায়তা করে সরকার। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রবাসীদের জন্য আলাদা ইকোনোমিক জোনও নিশ্চয়ই হবে। 

[৫] বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ কতোটা লাভজনক?

জাকারিয়া চৌধুরী : আমি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার সুবাদে কোনো বিদেশিদের দেখলে নিজে থেকেই কথা বলার চেষ্টা করি। তখন তাদের কাছ থেকে জানতে পারি যে, কোরিয়ান অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা কাজ করছে। চীন শিল্পের দিক থেকে বাংলাদেশকে প্রায় দখল করে ফেলেছে! বাংলাদেশিরাও সেখান থেকে কাজ শিখে এসে বিনিয়োগ করে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। ব্যাটারি উৎপাদনের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে লেবার কস্টসহ এ দেশের লোকাল মার্কেটে যে দামে বিক্রি হয়, সেদিক থেকে ব্যবসাটি বেশ ভালোই লাভজনক হচ্ছে। 

[৬] দেশে কি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে সরকার?

জাকারিয়া চৌধুরী: বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের জন্য যথেষ্ট ভালো পরিবেশ রয়েছে। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী যদি দেশে এসে হয়রানির শিকার হন, তিনি বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে তারা প্রতিকার পাবেন। তাই বিদেশি বিনিয়োগকরীদের সঙ্গে সতর্কভাবেই চলতে হয়। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও এনআরবিরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েন। আমরা যদি এনআরবিদের জন্য দেশে আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরি করতে পারি, তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় অবদান রাখতে পারবেন। উন্নতি, সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবেন তারা।  

[৭] ডলার সংকটে বাংলাদেশ, অনেক দিন ধরেই। কোটিরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসে। তারা প্রপার চ্যানেলে টাকা পাঠালে ডলার থাকতো বলে মনে করেন কি? প্রবাসীরা কেন প্রপার চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির আশ্রয় নেয়?

জাকারিয়া চৌধুরী: কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসীরা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় শক্তি। তারা দেশের প্রতি কখনো অবহেলা করেননি। ভবিষ্যতেও করবেন না। তারা দেশকে ভালোবাসেন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তারা বিদেশে পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠিয়ে দেন। প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রপার চ্যানেলে টাকা পাঠান। কারণ তারা এখন আগের চেয়েও বেশি সুযোগ-সুবিধা পান সরকার থেকে। যিনি ১ লাখ ডলার পাঠান, তিনি ১ বছরের জন্য সিআইপি মর্যাদা পান। এটা একটা সুবিধা। যাদের উদ্দেশ্য কেবল টাকা পাচার করা, তারাই হুন্ডি ব্যবহার করে। যারা সৎ পথে টাকা উর্পাজন করেন, ভালো উদ্দেশে ও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা আনেন, তাদের লাভ বেশি। তবে নির্বাচনের দুই মাস আগে রেমিটেন্স প্রবাহ কম ছিলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে। এখন রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। প্রবাসীরা বেশি বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন প্রপার ব্যাংকিং চ্যানেলে। দেশের বিপদে তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশকে কখনো বিপদে পড়তে দেবে না।  

[৮] প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আপনার পরামর্শ কী। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে যদি বলতেন।

জাকারিয়া চৌধুরী: সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বেশি রেমিটেন্স আসে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকেও রেমিটেন্স আসে বেশ ভালো। আমরা আরও বেশি রেমিটেন্স আহরণ করে পাঠাতে পারতাম যদি আমাদের দক্ষতা থাকতো। ফলে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে আমি জোর দেবো। কারণ শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্ন করে দেশের বাইরে পাঠালে কর্মীরা বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে অনেক বেশি টাকা পাঠাতে পারবেন। বাংলাদেশে তিনি একজন করমুক্ত নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন। বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠালে রিসিভারের হাতে সঠিকভাবে পৌঁছাবে। আর যদি কোনো বন্ধু বা তৃতীয়পক্ষ হয়ে টাকা পাঠান, তাহলে তা আত্মসাৎ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং এ ধরনের ব্যাপারে জনসচেতনতা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। সরকার প্রবাসীদের আরও সচেতন করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে পারে। বৈধ পথে ডলার পাঠানোর সুবিধা সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করতে পারে। তাহলে যেসব প্রবাসী না বুঝে হুন্ডি বা অবৈধ পথে ডলার পাঠান তারা আর সেটা করবেন না। এটা এখন থেকেই শুরু করা দরকার।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়