শিরোনাম
◈ দারিদ্র্য কারও স্বপ্নের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়: প্রধান উপদেষ্টা ◈ দেউলিয়ার পর্যায়ে ১২ ব্যাংক, গ্রাহকদের টাকার কী হবে? (ভিডিও) ◈ এ‌শিয়া কা‌পের ফাইনা‌লে ভারত, ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪১ রা‌নে হে‌রে গে‌লো বাংলাদেশ ◈ ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ সাকিবকে টপকে গেলেন মোস্তাফিজ ◈ মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার নিয়ে তোলপাড় ◈ সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে উত্তোলন ১.৭৬ কোটি, দুদকের জব্দ ৮৩ লাখ ◈ সেনাবাহিনীরে দিবেন, তাপসের প্রশ্নে হাসিনা বলেন, বাবা চিন্তা কইরা কথা কইয়ো (অডিও) ◈ হাসিনা পরিবারসহ ১১টি শিল্প গ্রুপের ৪৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ ◈ লাদাখে বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নিহত ৪, আহত ডজনখানেক (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ০৫:১২ বিকাল
আপডেট : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১০:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মেয়ের জন্য সৌদি আরবে আটকে পড়া এক মায়ের লড়াই

সৌদি মা

ডেস্ক রিপোর্ট: আমেরিকান নাগরিক কার্লি মরিস যখন তার পাঁচ বছরের মেয়ে তালাকে নিয়ে সৌদি আরবে যান, দৃশ্যত সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। বিবিসি

মেয়ের সৌদি বাবাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন যখন তিনি বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়ার জন্য সাত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিল। তালা জন্ম নেয়ার পর তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। সাবেক স্বামী ফিরে যান সৌদি আরবে।

কিন্তু বছর তিনেক আগে তার প্রাক্তন স্বামী কার্লিকে কিছুদিনের জন্য সৌদি আরবে বেড়াতে আসতে রাজী করান যাতে তার বাবা-মা নাতনিকে প্রথমবারের মত দেখতে পারেন।

তিনি নিজেই কার্লি ও মেয়ের জন্য এক মাসের সৌদি ভিসা জোগাড় করেন।

মেয়েকে নিয়ে তার সাবেক স্বামীর বুক করা হোটেলে চেক-ইন করেই কার্লি কিছুটা ধাক্কা খান। হোটেল কক্ষের কোনও জানালা ছিল না। ইথারনেট ছিল না। কক্ষের ভেতর মোবাইল ফোনও কাজ করছিলোনা ।

তারপর একে একে ঝামেলা এবং সেই সাথে উদ্বেগ বাড়তে থকে কার্লির। এক সপ্তাহ পর সে (প্রাক্তন স্বামী) আমাদের পাসপোর্ট ও জন্ম-সনদ চায়। তার যুক্তি ছিল ফেরার সময় মেয়ের (তালা) জন্য এক্সিট পারমিট বের করতে এসব দরকার। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি যে সে আসলে মেয়ের আমেরিকান নাগরিকত্ব বদলে সৌদি নাগরিকত্ব নেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

সৌদি আরবে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়। ফলে আমেরিকায় জন্ম নেয়া এবং বড় হওয়া তালা রাতারাতি শুধুমাত্র সৌদি নাগরিক হয়ে যায়। সৌদি অভিভাবকত্ব আইনের আওতায় তার সৌদি বাবার অনুমতি ছাড়া তালার পক্ষে সৌদি আরবের বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। 

প্রায় সাথে সাথেই পরিষ্কার হয়ে যায় মেয়েকে সৌদি আরবের বাইরে যেতে দিতে কোনোভাবই রাজী নয় তার সৌদি বাবা ।কার্লি জানান, তার সাবেক স্বামী প্রতিদিন মেয়েকে সকালে নিয়ে যেত। রাতের আগে ফেরত আনতো না।

প্রায় অন্ধকার এক হোটেল কক্ষে বসে তার দিন কাটতো। হাতে টাকা পয়সা ছিলনা। সাবেক স্বামী কাগজ বা প্লাস্টিকের বাক্সে যে খাবার দিয়ে যেত তাই খেয়ে থাকতে হতো তাকে। এভাবেই কেটেছে প্রায় দু'বছর।

এরপর, যে বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে রাখতেন অনেক অনুরোধ হাতে-পায়ে ধরার পর কার্লিকে সেখানে থাকার জন্য নিয়ে যান প্রাক্তন স্বামী।

বাড়িতে থাকা শুরুর পর, কার্লি গোপনে আমেরিকাতে কংগ্রেসের ক'জন সদস্য এবং অন্য অনেকের কাছে সাহায্য চেয়ে লিখতে শুরু করেন।

জানতে পেরে প্রাক্তন স্বামী প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। "সে যখন জানলো আমি সৌদি আরবের বাইরে সাহায্য চেয়ে লোকজনকে লিখছি, সে প্রায় দু'মাসের জন্য মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এমনকি এক পর্যায়ে তার পরিবারের লোকজনও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। ঐ সময়টায় আমার প্রাক্তন স্বামী মেয়ের কাস্টডি (অভিভাবকত্ব) চেয়ে আবেদন করে।"

মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকে তেমন কোনও সাড়া না পেয়ে কার্লি সরাসরি হোয়াইট হাউজে চিঠি লেখেন। কোনও উত্তর পাননি তিনি।

জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রিয়াদ সফরের খবরে তিনি আশাবাদী হন যে হয়তো এবার কিছু সুরাহা হতে পারে। রিয়াদে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে তিনি কথা বলেন, কিন্তু কোনও কাজ হলোনা।

ওদিকে, আমেরিকাতে কার্লির উদ্বিগ্ন মা ডেনিস হোয়াইট এখন প্রায় নিশ্চিত যে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে মার্কিন কূটনীতিকরা হয়ত তার মেয়ের জন্য মাথা ঘামাতে চাননা।

ক্যালিফোর্নিয়াতে তার বাড়ি থেকে মিসেস হোয়াইট বলেন, বিশেষ করে তার নাতনির শিক্ষা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, কারণ তিনি জানতে পেরেছেন তালা গত তিন বছরে একদিনের জন্যও স্কুল যায়নি।

দেশ এবং পরিচিত পরিবেশ থেকে অনেকে দূরের এক দেশে তার অভিভাবকত্ব নিয়ে বাবা-মায়ের এই লড়াইয়ের প্রভাব মেয়ের ওপর কীভাবে পড়ছে তা নিয়ে কার্লিও খুবই উদ্বিগ্ন।

সোশ্যাল ওয়ার্কাররা যখন আসে, তাদের সাথে কোনোভাবেই সে কথা বলতে চায় না। অপরিচিত কারো সাথে সে কথা বলতে চায় না। আমার পরিবারকে যখন ভিডিও কলে ধরি, সে পালিয়ে থাকে। মেয়ের জন্য আমি খুবই উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৫০ জন আমেরিকান মা সৌদি নাগরিক স্বামীদের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তাদের শিশু সন্তানদের সৌদি আরব থেকে নিয়ে আসার জন্য লড়াই করছেন।

শুধু আমেরিকা নয়, ক্যানাডা, ব্রিটেন এবং আরও বেশ ক'টি পশ্চিমা দেশের অনেক নারীও একই সংকটের মোকাবেলা করছেন।

ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা বেথানি আলহায়দারি নিজেও এমন পরিস্থিতির শিকার হরেছেন। নিজের মেয়েকে সৌদি আরব থেকে বাইরে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এক্সিট ভিসা পেতে তাকে দুবছর লড়াই করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, গত এক বছরে কেউই সফল হননি। তার অভিযোগ, এসব নারীদের কেউই এমনকি তার নিজের দেশের সরকারের সাহায্যও পাননা।

এমনকি আমেরিকান সরকারের মধ্যেও এমন একটি মনোভাব কাজ করে যে 'তুমি নিজে নিজের এই ক্ষতি করেছ, এর পরিণতি আগে থেকে তোমার বোঝা উচিৎ ছিল'। আমার মনে হয় এ ধরনের মনোভাবের কারণে আমাদের সামনে অনেক বাধার দেয়াল আরও উঁচু হতে থাকে।

রিয়াদে মার্কিন দূতাবাস থেকে বলা হয়, মার্কিন নাগরিকদের ভালোমন্দ দেখা পররাষ্ট্র দপ্তরের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, এবং কার্লি ও সৌদি সরকারের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

দীর্ঘ আাইনি লড়াইয়ের পর কার্লি তার মেয়ে তালার অভিভাবকত্বের অধিকার পান। কিন্তু তার সৌদি আরবের বাইরে যাওয়া তো দূরে থাক ঐ শহরের বাইরে যাওয়াই তার জন্য নিষিদ্ধ। কোনো আয় নেই, ফলে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে কার্যত বন্দি জীবন যাপন করছেন তিনি।

ঐ দু'বছরে (হোটেলে থাকার সময়) এক দিনের জন্যও আমি ঘরের বাইরে যাইনি। প্রতিটি দিন হোটেল কক্ষে কেটেছে। একজন মানুষও আমার মুখ দেখেনি ... একজন মানুষও আমার দরজায় টোকা দেয়নি।

তার এসব কথা প্রকাশ করার পর সৌদি সরকার তার বিরুদ্ধে "সামাজিক শান্তি ভঙ্গের" অভিযোগ এনেছে। সরকারি কৌঁসুলিরা তার কারাদণ্ড চেয়েছেন।

অন্য একটি বিষয়ে তিনি এখন বেশি উদ্বিগ্ন। আমেরিকাতে তার স্বামীর সাথে দেখা হওয়ার আগেই কার্লি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, এত কিছুর পরও ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস কমেনি।

কিন্তু মেয়ের অভিভাবকত্বের মামলা জেতার পর, সাবেক স্বামীর বাবা তার বিরুদ্ধে ইসলাম, মুসলিম এবং সৌদি আরবকে অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

নিজেকেই এখন তিনি তার এই পরিণতির জন্য অনেকটা দায়ী করেন কার্লি মরিস। আমাকে অনেকেই সাবধান করেছিল ঐ দেশে ঢুকোনা। একবার ঢুকলে আর মেয়েকে পাবে না। আমি তখন সেসব শুনিনি ... তিন বছর পর এসে আমার এই অবস্থা।

সৌদি সরকার এবং কার্লির সাবেক স্বামীর কাছে তাদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখনও কোনও জবাব নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়