বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের কিছু গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে যখন উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, ঠিক তখনই ভারতের ভেতর থেকেই উঠে আসছে একেবারে বিপরীত সুর।
দক্ষিণ ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ও একাধিক সামরিক–রাজনৈতিক বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ ভারতের জন্য মারাত্মক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
ভারতের শতবর্ষী সংবাদপত্র মাতৃভূমি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা মানেই ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট।
শিলিগুড়ি করিডর, ত্রিপুরা ও সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে সংঘাত শুরু হলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতা ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অসংখ্য নদী, খাল, জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোনো সামরিক অভিযানে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা তৈরি করবে।
এক ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকের ভাষায়, “বাংলাদেশে সংঘাত মানে শুধু সেনাবাহিনীর সঙ্গে নয়, পুরো একটি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চাপের মধ্যে পড়া।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো আরও উল্লেখ করেছে, যুদ্ধ শুরু হলে তা সীমান্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। উত্তর–পূর্বাঞ্চলের জাতিগত রাজনীতি, ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও চলমান অর্থনৈতিক চাপ পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক দিক থেকেও ভারতের ঝুঁকি কম নয়। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কূটনৈতিক চাপ সংঘাতকে দ্রুত বহুপাক্ষিক ইস্যুতে পরিণত করতে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার “স্থিতিশীল শক্তি” হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। ফলে যেকোনো সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তার প্রভাব পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে ভারতীয় বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশের মত, বাংলাদেশে সামরিক পদক্ষেপ ভারতের জন্য লাভ নয়, বরং বহুমুখী ঝুঁকির দরজা খুলে দেবে। তাই উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যের বাইরে গিয়ে কূটনীতি ও সংলাপই হওয়া উচিত একমাত্র পথ। সূত্র: ইনকিলাব