যুক্তরাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটিতে (বিএনইউ) ব্যাচেলর বা স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ। আসন্ন এপ্রিল ইনটেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। দেশটির ভিসা ও ইমিগ্রেশন (ইউকেভিআই) নীতিমালার কড়াকড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি সরাসরি কোনও 'নিষেধাজ্ঞা' বা নোটিশ জারি করেনি, তবে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের তালিকাভুক্ত এডুকেশন এজেন্টদের বাংলাদেশ থেকে স্নাতক ফাইল প্রসেস না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'স্পন্সর লাইসেন্স' রক্ষার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৮৯১ সালে স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড আর্টস হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাঙ্গণে ভালো অবস্থানে রয়েছে। 'গার্ডিয়ান ইউনিভার্সিটি গাইড ২০২৬'-এ এটি ৭৩তম স্থানে রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টির সূচকে 'কমপ্লিট ইউনিভার্সিটি গাইড'-এ সেরা ১০-এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
স্নাতক ভর্তিতে কড়াকড়ি, যা জানা জরুরি
এইচএসসি বা এ-লেভেল পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত একটি বড় ধাক্কা। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর শর্ত উল্লেখ থাকলেও, বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। এজেন্টদের কাছে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন যতই ভালো ফলাফল থাকুক না কেন, স্নাতক পর্যায়ের আবেদনগুলো বাতিল বা পরবর্তী সেশনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাই এই সেশনে স্নাতক পর্যায়ে আবেদনের আগে বিশ্বস্ত ও ভেরিফাইড প্রতিনিধিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তরে বড় সুযোগ
স্নাতকের পথ সাময়িক বন্ধ হলেও স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ পুরোপুরি উন্মুক্ত রেখেছে বিএনইউ। বাংলাদেশি পেশাজীবীদের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য বিশেষ নমনীয়তা প্রদর্শন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমনকি যথাযথ চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ (জব সার্টিফিকেট) এবং পেশাগত প্রমাণ দেখাতে পারলে ১০ বছর পর্যন্ত 'স্টাডি গ্যাপ' গ্রহণ করা হচ্ছে—যা যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ বিরল। দীর্ঘ বিরতির পর যারা ক্যারিয়ারে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে নতুন মোড় আনতে চান, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।
টিউশন ফি ও স্কলারশিপ সুবিধা
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুবিধাও থাকছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ টিউশন ফি প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড হলেও, 'ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ' সুবিধায় তা কমে প্রায় ১২ হাজার ৫৫০ পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা) নেমে আসতে পারে।
তবে টিউশন ফি পরিশোধের কিস্তি বা ইনস্টলমেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছু এজেন্সি 'পাঁচ কিস্তিতে' টাকা পরিশোধের প্রলোভন দেখালেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক নিয়মে ক্যাশ লেটার পেতে ৫০ শতাংশ ফি জমা দিতে হয়। বাকি টাকা সাধারণত তিনটি টার্মে পরিশোধ করতে হয়। তাই এজেন্সির মৌখিক আশ্বাসে বিভ্রান্ত না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম জেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ডুওলিঙ্গো বাতিল ও ইন্টারভিউ প্রস্তুতি
২০২৫ সালের ভর্তিতে ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণে বড় পরিবর্তন এসেছে। দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত 'ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট' গ্রহণ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভিসা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের এখন আইইলটিএস-এ কমপক্ষে ৬ দশমিক ৫ বা পিটিই-এর ওপর নির্ভর করতে হবে।
এছাড়া 'ইন্টারভিউ লাগবে না'—এমন গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্নাতক স্তরে কড়াকড়ির কারণে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদেরও এখন কঠোর 'প্রি-ক্যাশ ইন্টারভিউ' (পিসিআই)-এর মুখোমুখি হতে হবে। তাই অফার লেটার পাওয়ার পর ইন্টারভিউয়ের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন